অক্টোবরে ফাইনাল রাউন্ড!

দফার গ্যাঁড়াকলে আ’লীগ-বিএনপি : দৌড়ছুটে এরশাদ : সাইডলাইনে জামায়াত

বিশেষ প্রতিনিধি : ড. কামাল হোসেন ও অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর জাতীয় ঐক্যজোটের পাঁচ দফার মধ্যে নিজেদের সাত দফার খোঁজ পেয়েছে বিএনপি। সুনির্দিষ্টভাবে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি ছাড়া বাদবাকি দাবি তাদের অভিন্ন। সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, নির্বাচনে সেনা মোতায়েনসহ অন্যান্য দাবি প্রায় একই। সেই হিসেবে ঐক্যপ্রক্রিয়াকে বিএনপির মিত্রই ভাবছে সরকার। এ নিয়ে কৌশলী হওয়ার পরও ভাবনার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে নয়-ছয় করে ফেলছে সরকার। বাজারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে শুরুতে সমালোচনা ও স্বাগত জানানোর কৌশল নেওয়া হয়। কিন্তু দিন কয়েকের মধ্যে মানসিকতা প্রকাশ করে ফেলে। এ ঐক্যকে জাতীয়তাবাদী সাম্প্রদায়িক ঐক্য, ভাড়াটে জোড়াতালির জোট ইত্যাদি নামে আলোচিত করতে তৎপর হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগ, ১৪ দলীয় জোটসহ সরকার-সমর্থিত প্রচারমাধ্যম। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েও ঐক্যপ্রক্রিয়ার কঠোর সমালোচনা করেন। খুনি, অর্থ পাচারকারী ও সুদখোরেরা আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে একজোট হয়েছে বলে বিষোদ্গার করেন তিনি। ড. কামালের সঙ্গে ড. ইউনূস ও বিচারপতি এস কে সিনহাকে জড়িয়ে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছেন।
সরকারের ধারণা ছিল, শেষ পর্যন্ত এ জোটই হবে না। হলেও বিএনপির সঙ্গে তাদের কাছাকাছি অবস্থানও হবে না। কিন্তু দিন কয়েকের মধ্যে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। এ জোটকে দেশি-বিদেশি কিছু মহল শক্তি জোগাচ্ছে বলে নিশ্চিত হয়েছে সরকার। সূত্র বলছে, ঐক্যপ্রক্রিয়া নিয়ে সরকারের নয়-ছয় কথাবার্তা ও নিম্নমানের ভাষা-তাচ্ছিল্যের রহস্য এখানেই। পাশাপাশি ঐক্যবাদীদের ওপর আইনি চাপের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার অ্যাকাউন্টে চার কোটি টাকা জমা হওয়ার বিষয়ে ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক এমডি একেএম শামীমসহ ছয় কর্মকর্তাকে দুদকে তলব করা হয়েছে। ডাকা হয়েছে বিকল্পধারার মহাসচিব অবসরপ্রাপ্ত মেজর মান্নানকেও। এ ধরনের চাপ অব্যাহত রাখলে ঐক্যপ্রক্রিয়া ভণ্ডুল করার ব্যাপারে আশাবাদী সরকারের একটি মহল।
গত ২২ সেপ্টেম্বর শনিবার মহানগর নাট্যমঞ্চে ঐক্যপ্রক্রিয়ার ডাকে নাগরিক সমাবেশে বিএনপিও যোগ দেওয়ার পরই মূলত দৃশ্যপট পাল্টে যেতে থাকে। সামনে আরেক শনিবার ২৯ সেপ্টেম্বর ভয়ানক ডেটলাইনের শঙ্কা উঁকি দিয়েছে। এর কিছু আলামত পাওয়া যাচ্ছে। সেদিন রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ ডেকেছে বিএনপি। পুলিশ তাদের এখনো অনুমতি দেয়নি। সেদিনের সমাবেশে জামায়াত প্রশ্নে বিএনপির কৌশল আঁচ করার অপেক্ষায় অনেকে। একই দিনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটও সভা ডেকেছে মহানগর নাট্যমঞ্চে। সেই শনিবার দিনটিতে রাজধানীর সম্ভাব্য পরিস্থিতি নিয়ে এরই মধ্যে টানটান উত্তেজনা তৈরি করা হচ্ছে দুই দিক থেকেই। ১৪ দলীয় জোটের ব্যানারে এর মুখপাত্র স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম নেতা-কর্মীদের পাড়া-মহল্লায় সংগঠিত হতে বলেছেন। আহ্বান জানিয়েছেন অক্টোবরে সতর্ক থাকতে। রাস্তায় প্রতিরোধ-প্রতিহত করতে। সেনাবাহিনীকে উত্তেজিত করার চেষ্টা চলছে বলে মন্তব্যও করেছেন তিনি। নাসিমের উত্তেজক আহ্বানের বিপরীতে ঠান্ডা মাথায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদও কম যাননি। পয়লা অক্টোবর থেকে কর্মীদের মাঠে সজাগ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে বলেছেন, আগামী এক মাসে দেশে অনেক কিছু ঘটবে। দুদিকেই ইঙ্গিতবহ আভাস। সরকারি মহল থেকে আবার এক-এগারোর ইঙ্গিত দিয়ে অভিযুক্ত করা হচ্ছে ড. কামাল, ড. ইউনূস, ডা. বি চৌধুরী, এস কে সিনহাদের। আর নেপথ্য রূপকার বলা হচ্ছে বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটকে। বিএনপির সঙ্গে মিলে তারা শেখ হাসিনাকে মাইনাসের অপচেষ্টার অভিযোগ ছুড়ছে। বিএনপি বা ড. কামালদের ঐক্যপ্রক্রিয়া থেকে এসব অভিযোগের জবাব দেওয়া হচ্ছে না। মাঠের এ অবস্থায় একেবারে প্রতিক্রিয়াহীন জামায়াতে ইসলামী। সূত্র বলছে, এটা জামায়াতের কৌশল। বিএনপিও জামায়াতকে আপাতত সাইডলাইনে রাখতে চায়। জামায়াত প্রশ্নে কোনো বক্তব্যও রাখতে চায় না। জামায়াতের সঙ্গে বোঝাপড়ার ভিত্তিতেই এগোচ্ছে কৌশলটি। জোট ও ঐক্যের এ ডামাডোলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ ছুটছেন বিভিন্ন দিকে। গত মাস কয়েকে বেশ কবার ভারতে ঘুরে এসেছেন তিনি। যাতায়াত করছেন সিঙ্গাপুরেও। মেডিকেল চেকআপের জন্য মঙ্গলবার আবার গেছেন পাঁচ দিনের সফরে। এরশাদও ফিরবেন শনিবার।