ঠিকানা রিপোর্ট: অটিজম আক্রান্তরা সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদেরকে সফল, ক্ষমতায়িত ও কর্মক্ষম ব্যক্তিতে পরিণত করতে আমাদেরকে সমন্বিত ও সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করতে হবে। গত ৫ এপ্রিল জাতিসংঘ সদরদপ্তরে বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত একটি প্রদর্শনীর উদ্বোধনকালে একথা বলেন বাংলাদেশের অটিজম বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণপূর্ব এশিয়া অঞ্চলের শুভেচ্ছা দূত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন। তাঁর প্রতিষ্ঠান সূচনা ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ সরকার, সংশ্লিষ্ট অংশীজন ও এনজিওদের সাথে সমন্বিতভাবে অটিজম স্পেক্ট্রাম ডিসঅর্ডারসহ অন্যান্য ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তিবর্গের কল্যাণে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে মর্মেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, “সকলেরই সমাজে সমানভাবে এবং সম্মানের সাথে বসবাস করার অধিকার রয়েছে। অটিজম আক্রান্তদের বিশেষ করে মেয়ে ও নারীদের সব ধরণের সুযোগ দিতে হবে যা তাদের প্রয়োজন”।
এর আগে দিনব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে মিস সায়মা ওয়াজেদ ৫ এপ্রিল সকালে জাতিসংঘ সদরদপ্তরের ইকোসক চেম্বারে বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘ আয়োজিত ‘অটিজম আক্রান্ত নারী ও মেয়েদের ক্ষমতায়ন’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন। ইভেন্টটিতে ‘অ্যবলিজম, সেক্সিজম, রেসিজম…হাউ দে ইন্টারসেক্ট’ বিষয়ে প্রথম প্যানেলে প্যানেলিস্ট বক্তব্য প্রদানকালে তিনি অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিবর্গ বিশেষ করে নারী ও মেয়েদের যে সকল সামাজিক ও পারিবারিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে তা মোকাবিলায় করণীয় বিষয়ে আলোকপাত করেন। তিনি তুলে ধরেন অটিজমের শিকার নারীদের বিভিন্ন বৈষম্য ও তাঁদের প্রতি গতানুগতিক সামাজিক ও পারিবারিক ধারণার কথা, তাদের নাজুক পরিস্থিতি এবং পরিবারের সদস্যসহ আশে-পাশের মানুষের দ্বারা নিগ্রহ ও নির্যাতনের বিষয়গুলো।
তিনি আরো বলেন, অটিজম আক্রান্ত নারী ও মেয়েরা নানবিধ সীমাবদ্ধতার কারণে নিজেদের একান্ত চাওয়া পাওয়ার কথাও ঠিকমতো বোঝাতে পারেন না। এ সকল নারীর বিবাহ ও দাম্পত্য জীবনসহ প্রাত্যহিক জীবন-যাপন বিষয়ে পর্যাপ্ত ব্যবহারিক শিক্ষা ও জ্ঞান অর্জনের সুযোগ সৃষ্টির উপর জোর দেন তিনি। পাশাপাশি তারা যাতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংগ্রহণের মাধ্যমে তাদের অন্তর্নিহিত শক্তি ও সম্ভাবনার প্রকাশ ঘটাতে পারে সে বিষয়টির উপরও বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি। তিনি আরো বলেন, অটিজম আক্রান্তদের সমাজে জায়গা করে দিতে হবে যাতে তারা তাদের অবদান রাখতে পারে, অন্যথায় সমাজে বড় ধরণের বিভেদ তৈরি হবে।
জাতিসংঘের কমিটি অন দ্যা রাইট অব পারসন উইথ ডিসএ্যাবিলিটি-এর মেম্বার প্রফেসর জোনাস রুজকুস এর এক প্রশ্নের জবাবে সায়মা হোসেন বলেন, কনভেনশন অন দ্যা রাইট অব পারসন উইথ ডিসঅ্যাবিলিটি-এর সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ সরকার অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিবর্গ বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে বহুমাত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আন্ত:মন্ত্রণালয় পরামর্শক কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে নীতি প্রণয়ন ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। এরফলে এক্ষেত্রে ব্যাপক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। তিনি আরো জানান, বাংলাদেশ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার আক্রান্ত ব্যাক্তিবর্গের কল্যাণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া কার্যালয়ের সহযোগিতায় আঞ্চলিক সমন্বিত কাঠামো গঠন করা হয়েছে যেখানে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা একযোগে কাজ করে। ইভেন্টটির অন্যান্য প্যানেলিস্ট ছিলেন অটিজম উইমেন নেটওয়ার্কের চেয়ারপারসন মরেনিকি গিওয়া- ওনাইয়ু, অটিজম কনসালট্যান্ট অ্যামি গ্রাভিনো এবং জাতিসংঘের কমিটি অন দ্যা রাইট অব পারসন উইথ ডিসএ্যাবিলিটি-এর মেম্বার প্রফেসর জোনাস রুজকুস। মডারেটর ছিলেন জাতিসংঘের এনজিও সম্পর্ক বিষয়ক অফিসের প্রধান জেফ্রি ব্রিজ।
দুপুরে দিবসটি উপলক্ষে জাতিসংঘে বাংলাদেশ ও কাতার মিশনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন সায়মা ওয়াজেদ হোসেন। অটিজম নিয়ে কাজ করছে এমন সংস্থাসমূহ এ প্রদর্শনীতে অংশ নেয়। প্রদর্শনীটির সহ আয়োজক ছিল জাতিসংঘে ভারত, কুয়েত ও দক্ষিণ কোরিয়ার স্থায়ী মিশন এবং অটিজম বিষয়ক প্রতিষ্ঠান অটিজম স্পিকস্। প্রদর্শনীতে বিভিন্ন সদস্য দেশ, জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা যেমন ইউনিসেফ ও বিভিন্ন এনজিও স্টল স্থাপন করে। মিস সায়মা ওয়াজেদ হোসেনের প্রতিষ্ঠান ‘সূচনা ফাউন্ডেশন’ এই প্রদর্শনীতে অংশ নেয় যা দর্শকদের মধ্যে যথেষ্ট আগ্রহের সৃষ্টি করে।
প্রদর্শনীর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার গত ৯ বছরে অটিজম ও অন্যান্য নিউরোডেভোলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার আক্রান্ত ব্যক্তিবর্গের কল্যাণে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে মর্মে উল্লেখ করে স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, “এজেন্ডা ২০৩০ গ্রহণকালে আমরা ‘কেউ পিছনে পড়ে থাকবে না’ বিশেষ করে যারা অসহায়- মর্মে প্রতিশ্রতি দিয়েছিলাম। অটিজম ও অন্যান্য নিউরোডেভোলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার আক্রান্ত ব্যক্তিবর্গ যাতে অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে উন্নত জীবন যাপন করতে পারে তার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য আমরা প্রতিবছর অটিজম সচেতনতা দিবস পালনের মাধ্যমে আমাদের সেই প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছি”। প্রদর্শনীর উদ্বোধনীতে অন্যান্যদের মাঝে আরো বক্তব্য দেন জাতিসংঘে নিযুক্ত কুয়েত ও কাতারের প্রতিনিধিগণ।
প্রদর্শনীর উদ্বোধন শেষে উচ্চপর্যায়ের মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন সায়মা ওয়াজেদ হোসেন। এছাড়া বিকালে অটিজম স্পীকস্ এর প্রতিনিধিদলের সাথেও একটি সৌজন্য বৈঠকে মিলিত হন তিনি।