পাহাড়, পর্বত, উপত্যকা, বনজঙ্গল, তৃণভ‚মি, মরুভ‚মি- পৃথিবীর এ ধরনের নানা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুগ্ধ করার মতো। কিন্তু আপনার কেমন লাগবে যখন আপনি কিছু আশ্চর্যজনক এবং চমৎকার স্থান দেখা থেকে বঞ্চিত হবেন? অথচ দুঃখজনক হলেও এটা আপনাকে মেনে নিতে হবে। কারণ পৃথিবীর এমন অনেক অত্যাশ্চর্য স্থান রয়েছে, যেখানে সর্ব সাধারণের যাওয়ার কোন অনুমতি নেই। এমন ৯টি অত্যাশ্চর্য স্থান নিয়ে লিখেছেন- নাবিহা আক্তার রাদিতা
নর্থ সেন্টিনেল আইল্যান্ড, আন্দামান
এই দ্বীপটিতে বাইরের যারা প্রবেশ করে তাদের এখানকার অধিবাসীরা নির্মমভাবে মেরে ফেলে। যেহেতু এখানকার উপজাতিরা ঘনজঙ্গলে বসবাস করে তাই তারা বাইরের জগৎ সম্পর্কে অসচেতন। দ্বীপটিতে আধুনিকতার ছোঁয়া পরেনি। এই দ্বীপটির বাসিন্দারা আধুনিক যুগের মানুষের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে চায় না। উত্তর সেন্টিনেল দ্বীপটি তাই ভারত তথা বহির্বিশ্বের কাছে আজও রহস্যই হয়ে আছে। আধুনিক সভ্যতার লোকজন এখনও দ্বীপটির মানুষের ভাষা, ধর্মানুষ্ঠান এবং তাদের বসত বাড়ির রহস্য খুব কমই জানতে পেরেছেন। আধুনিককালে অত্যাধুনিক সব ক্যামেরা থাকা সত্তে¡ও ওই দ্বীপের মানুষের স্পষ্ট কোন ছবি তোলা সম্ভব হয়নি। কিছু ছবি তোলা হলেও তা স্পষ্ট নয়।

স্নেক আইল্যান্ড, ব্রাজিল
ব্রাজিলের ইলহা দ্য কুয়েইমাদা গ্রানডি নামক দ্বীপটি সম্পর্কে জানলে শুধু আপনি কেন, বিশ্বের কোনো পর্যটকই সেখানে যেতে সাহস করবে না। তা ছাড়া দ্বীপটিতে সর্বসাধারণের প্রবেশে সরকারি নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে। এর কারণ হচ্ছে, এটি স্নেক আইল্যান্ড অর্থাৎ সাপের দ্বীপ হিসেবে পরিচিত। ব্রাজিলের সাওপাওলো থেকে প্রায় ৯০ মাইল দূরে অবস্থিত এই দ্বীপ। পুরো দ্বীপজুড়ে কেবল সাপের বিচরণ। এখানে শুধু যে প্রায় হাজার চারেকের বিষধর সাপের বাস তাই নয়, পৃথিবীর সবচেয়ে বিষধর সাপ গোল্ডেন ল্যান্সহেডের বাস একমাত্র এই দ্বীপটিতেই। গোল্ডেন ল্যান্সহেডের বিষ এতটাই শক্তিশালী যে, এই বিষ মানুষের শরীরে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর তা শরীরের মাংস পর্যন্ত গলিয়ে দিতে পারে।

লাসকাউক্স কেভস, ফ্রান্স
বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ এই গুহাটির শিল্পকর্মের যেন ক্ষতি না হয় তাই ফ্রান্স সরকার জনসাধারণের এখানে প্রবেশাধিকার বন্ধ রেখেছে। কয়েকজন বিজ্ঞানী মাসের কেবলমাত্র কয়েকদিন এই গুহায় প্রবেশের অনুমতি পায়। নর্থওয়েস্টান ফ্রান্সে অবস্থিত এই গুহাটি ১৭ হাজার বছর আগেকার বলে ধারণা করা হয় এবং গুহার দেয়ালে আঁকা রয়েছে ৬০০ চিত্রকর্ম, যা ১৭ হাজার বছর আগেকার আদিম মানুষদের আঁকা। যার মধ্যে তখনকার সময়ের বড় প্রাণীদের ছবি অঙ্কিত রয়েছে দেয়ালে, যেগুলো জীবাশ্ম গবেষণার অন্তর্ভুক্ত। ইউনেস্কো কর্তৃক ‘বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী স্থান’ এর তকমা পেয়েছে এই গুহা।

হেয়ার্ড আইল্যান্ড ভলক্যানো, অস্ট্রেলিয়া
এই দ্বীপটিতে ২০০০ সালে ২৭৪৫ ফুট উঁচু জটিল আগ্নেয়গিরির সৃষ্টি হয়েছিল। মাদাগাস্কার এবং এ্যান্টার্কটিকার মধ্যে অবস্থিত এই দ্বীপটিতে ২ কিলোমিটার লম্বা লাভা প্রবাহিত হয়ে আসছে ২০০০ সাল থেকে। ৩৬৮ বর্গ মাইলের এই দ্বীপটি পাহাড়ে ভরপুর। এ ছাড়াও রয়েছে ৪১টি হিমবাহ।
পেঙ্গুইন, সিল এবং সামুদ্রিক পাখির আবাসস্থল এই প্রাকৃতিক বিস্ময়কর দ্বীপ।

আইস গ্র্যান্ড শ্রাইন, জাপান
জাপানের রাজবংশের দেশের উচ্চপদস্থ যাজক-যাজিকা ছাড়া অন্য সকলের প্রবেশাধিকার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ এই শ্রাইনে (মঠে)। এই মঠটি ৩য় শতকে সর্বপ্রথম তৈরি করা হয়। প্রতি ২০ বছর পর পর এটি ভেঙে আবার পুনর্নির্মাণ করা হয়। এই মঠে রয়েছে দুইটি প্রধান মঠ আর তার চার পাশে রয়েছে আরও ছোট বড় ১২৫ মঠ। কঠোর গোপনীয়তায় এখানে যা রয়েছে, যা বিশ্বের সামনে কখনই আসেনি।

পোভেগলিয়া, ইতালি
ইতালির ভেনিস ও লিডো শহরের মাঝামাঝি জায়গায় অবস্থিত এই ছোট্ট এই দ্বীপটি বিশ্বের সবচেয়ে ভুতুরে স্থান হিসেবে পরিচিত। যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের আত্মা, প্লেগ রোগে মৃতদের আত্মা এবং খুনি ডাক্তারের আত্মা এই দ্বীপটিতে রয়েছে বলে মনে করা হয়। রোমান যুগে এই দ্বীপটি ব্যবহার করা হতো প্লেগে আক্রান্ত রোগীদের রাখতে ও তাদের পুড়িয়ে মেরে ফেলতে। ১৯২২ সালে এখানে একটি মানসিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয় কিন্তু হাসপাতালটি ১৯৬৮ সালে বন্ধ করে দিতে হয়। কেননা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়ে। রোগীরা প্রায়ই মৃতদের দেখতে পেত বলে দাবি করতো। ইতালির সরকার এই দ্বীপটিকে ২০১৪ সালে ৯৯ বছরের জন্য লিজে দেয়ার ঘোষণা দেন। কিন্তু কেউ এই সুযোগ গ্রহণ করার জন্য আগ্রহ দেখায়নি।

কিন শি হুয়াংয়ের সমাধি, চীন
চীনের প্রথম সম্রাট কিন শি হুয়াংয়ের রহস্যময় সমাধিস্থান চীন সরকার জনসাধারণের জন্য বন্ধ রেখেছেন। ২১০ খ্রিষ্টপূর্বে মৃত্যুবরণকারী কিন শি হুয়াংয়ের সমাধি মধ্য চীনের একটি পাহাড়ের নিচে অবস্থিত। পাহাড়ের গভীরে বিষাক্ত পারদের পরিখাঘেরা এক সমাধি। এবং এটি টেরাকোটা ভাস্কর্য দ্বারা পরিবেষ্টিত।

ভ্যাটিকান সিক্রেট আর্কাইভ
বিশ্বের সবচেয়ে ব্যক্তিগত পাঠাগার হিসেবে অভিহিত করা হয় ভ্যাটিকানের সিক্রেট আর্কাইভকে। অষ্টম শতাব্দী থেকে এ পর্যন্ত পোপদের ব্যক্তিগত নথিপত্র সংরক্ষিত রয়েছে এই পাঠাগারে। অনেক গোপন ডকুমেন্টও এখানে সংরক্ষিত আছে। সাধারণ মানুষের এই গ্রন্থাগারে প্রবেশের অধিকার নেই। খুব কমসংখ্যক স্কলার বা পÐিতেরই এখানে ঢোকার সৌভাগ্য হয় বা হয়েছে। তাও পোপের অনুমতি ছাড়া সেটি একেবারেই অসম্ভব। আর অনুমতি পাওয়ার প্রক্রিয়াও অত্যন্ত জটিল। পাঠাগারের ভেতরে প্রায় ৫৪ কিলোমিটার বইয়ের দীর্ঘ তাক রয়েছে। সেখানে রাখা আছে ৩৫ হাজার ভলিউম নথি। এটিকে পোপের ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

এরিয়া ৫১, নেভাডা যুক্তরাষ্ট্র
এটি মানুষের সৃষ্টি পৃথিবীর সবচেয়ে রহস্যময় স্থান। যা নিয়ে বিশ্বের কৌত‚হলেরও শেষ নেই। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, এরিয়া ৫১ একটি সামরিক ঘাঁটি। যার আয়তন ২৬,০০০ বর্গকিলোমিটার। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেভাডা অঙ্গরাজ্যের দক্ষিণাঞ্চলে এবং লাস ভেগাস থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম রেকেল গ্রামের কাছে অবস্থিত। খুবই গোপনীয় এই সামরিক ঘাঁটি গ্রুম হ্রদের দক্ষিণ তীরে অবস্থিত। এরিয়া ৫১ এতটাই গোপনীয় যে, ২০১৩ সালের আগ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর অস্তিত্ব কখনোই স্বীকার করেনি।