ঠিকানা রিপোর্ট: প্রবাসের অত্যন্ত পরিচিত মুখ ডা. জিয়াউদ্দিন আহমেদের রতœগর্ভা মা এবং নারী শিক্ষার অগ্রদূত অধ্যক্ষা হুসন আরা আহমেদ ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহে… রাজেউন)। তিনি গত ১৬ জুলাই রোববার রাত ১টা ৪০ মিনিটে নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ডে ছোট মেয়ের বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। মৃত্যুকালে তিনি ২ ছেলে, ৩ মেয়ে, আত্মীয়- স্বজনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
মরহুমার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয় গত ১৬ জুলাই সোমবার বাদ এশা জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে। জানাজায় সর্বস্তরের বিপুলসংখ্যক মানুষ অংশগ্রহণ করেন। নামাজে জানাজা শেষে তার ১৭ জুলাই দুপুরে লংআইল্যান্ডের ওয়াশিংটন মেমোরিয়াল মুসলিম গোরস্তানে দাফন করা হয়।
অধ্যক্ষ হুসনে আরা আহমেদ সিলেট অঞ্চলে নারী শিক্ষার অগ্রণী নেত্রী ও একজন বিদূষী ব্যক্তিত্ব। তিনি বৃহত্তর সিলেটের প্রথম মুসলিম নারী যিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৬ সালে বাংলায় এম এ পাশ করে মেধার পরিচয় দেন। ১৯৩৯ সালে প্রতিষ্ঠিত সিলেট জেলার একমাত্র মেয়েদের কলেজ ‘সিলেট মহিলা কলেজ’ পাকিস্তান হবার পরে ১৯৫০ সালে বন্ধ হয়ে যায়। আবার বেসরকারিভাবে সেটাকে চালু করা হলে তিনি নেতৃত্ব দিয়ে সূচনাকালীন ক্ষুদ্র অবয়ব থেকে সেটাকে ধীরে ধীরে একটি বৃহৎ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেন। পরে কলেজটি সরকারিকরণ হলে এর নাম হয় ‘সিলেট সরকারী মহিলা কলেজ’। দীর্ঘ বত্রিশ বছর ধরে এই বিদ্যাপীঠের অগ্রগমনে তিনি তাঁর মেধা, শ্রম এবং স্বপ্ন বিনিয়োগ করেছেন। ফলে সিলেট ‘সরকারি মহিলা কলেজ’ ঐ অঞ্চল তথা সমগ্র জাতির নারী-প্রগতিতে ধারাবহিক অবদান রেখে চলেছে। বিদ্যায়তনিক শিক্ষার প্রসার ও মানোন্নয়নের পাশাপাশি নীতিবোধ ও মূল্যবোধের উৎকর্ষ সাধনে তাঁর ভূমিকা অনন্য। তিনি একাধারে কুমিল্লা বোর্ডের সদস্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র মহিলা সিনেট সদস্য এবং ঢাকায় জাতীয় শিক্ষা পরিবেশ পরিষদের সদস্য। তিনি সিলেটের নারী সমাজকে নারী নেতৃত্বের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। বাহান্নর ভাষা আন্দোলনের সময় সিলেটে নারীদের সমন্বয় করা থেকে শুরু করে পঞ্চাশ, ষাট ও সত্তর দশক জুড়ে সিলেট অঞ্চলে বিভিন্ন সামাজিক-সাংগঠনিক উদ্যোগের আয়োজন ও নেতৃত্ব প্রদানে তিনি রেখেছেন বলিষ্ঠ ভূমিকা।
উল্লেখ্য, তাঁর স্বামী মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী সিলেট মেডিকেল কলেজের সার্জারির প্রধান শহীদ ডা. শামসুদ্দিন আহমেদ। নারী শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নকাজে তার চিকিৎসক স্বামীর ছিল সর্বাত্মক সমর্থন ও সহযোগ। সমাজ ও মানুষের সেবায় তাঁরা একে অপরের পরিপূরক হয়ে কাজ করে গেছেন আজীবন। তাঁর মৃত্যুর পর শহীদ জায়া অধ্যক্ষ হুসন আরা আহমেদ একক ভাবে নিজ সন্তানদের এবং কলেজকে সর্বাত্মকভাবে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। ১৯৮৩ সাল থেকে তিনি আমেরিকাবাসী হওয়া সত্ত্বেও তাঁর অনুপ্রেরণায় তাঁর নামের ফাউন্ডেশন বিভিন্নভাবে সমাজ উন্নয়নে ভূমিকা রেখে চলেছে।
মরহুমার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে জালালাবাদ এসোসিয়েনের নেতৃবৃন্দ এবং মুক্তধারা ফাউন্ডেশন।