গাইবান্ধা : মমতা, ভালোবাসা আর মানবিকবোধ সব কিছুকে মহৎ করে তোলে। সুমি আকতার। অনাথ। জন্মের পর থেকেই রক্তের সম্পর্কের কেউ নেই। এরপর নানাভাবে আদর মমতা নিয়ে বড় হয়েছেন। লেখাপড়া শিখেছেন। চাকরি পেয়েছেন। গত ২০ জুলাই ধুমধাম করে তার বিয়ে হয়েছে। এই নিয়ে গাইবান্ধাবাসী আনন্দিত। কিভাবে এই অনন্য দৃষ্টান্ত?
এতিমখানায় বড় হওয়া সুমিকে নিজেদের সন্তানের মতো বুকে টেনে নিয়ে প্রতিষ্ঠিত করে অসামান্য দায়িত্ব পালন করলেন গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল ও তার স্ত্রী মুক্তি বসাক। এই নিয়ে গাইবান্ধা শহর গর্বে মুখর। মমতা আর ভালোবাসার অনন্য এমন দৃষ্টান্ত গল্প নয়, সত্যি।
শিশু পরিবার সূত্র জানায়, ১৯৯৭ সালের ১০ সেপ্টেম্বর রাজশাহী শহরে পিতৃমাতৃহীন নবজাতক এক শিশুর আশ্রয় হয় রাজশাহী বেবি হোমে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ফুটফুটে শিশুটির নাম দেন সুমি আকতার। একটু বড় হতেই তাকে লেখাপড়া আর সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য ২০০৭ সালে পাঠানো হয় গাইবান্ধার সরকারি শিশু পরিবারে। সেখানে সবার স্নেহ জয় করেন সুমি। এভাবেই স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে তিনি গত বছর পৌঁছান কলেজের করিডরে। গত বছর শিশু পরিবার পরিদর্শনে গিয়ে মেধাবী মেয়েটিকে দেখে জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল ও মুক্তি বসাক নিজেদের কন্যা হিসেবে গ্রহণ করেন। এক পুত্রসন্তান থাকলেও সুমিকে পেয়ে ছেলেমেয়ের পূর্ণতা পান এই দম্পতি।
জেলা প্রশাসকপত্নী মুক্তি বসাক জানান, এই মেয়ের বিয়ে নিয়ে তারা সত্যিকার অর্থেই কন্যাদায়গ্রস্ত ছিলেন। অনেক খোঁজখবর করে সৎ পাত্র হিসেবে খুঁজে নেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের আরেক অফিস সহায়ক মঞ্জুরুল ইসলাম রিজুকে। জেলা প্রশাসক সম্মান দিয়ে ডেকে নেন রিজুর মা-বাবাকে। খুলে বলেন সুমির জীবনবৃত্তান্ত। রিজু ও তার মা-বাবা সব জেনেই সুমিকে ঘরের বউ করে নেওয়ার মত দেন।
গত ২০ জুলাই নির্ধারণ করা হয় বিয়ের তারিখ। এই খবরে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে খুশির বার্তা। গত ২০ জুলাই সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে হাজির হন গাইবান্ধার রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতা, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, শিক্ষাবিদসহ সর্বস্তরের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। মহাসমারোহে সম্পন্ন হয় সুমি আকতারের বিয়ে। এই বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য যথারীতি জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল তার নামে সুদৃশ্য বিয়ের কার্ড ছাপিয়ে অতিথিদের আমন্ত্রণ করেন।
বিয়েটি সম্পন্ন হয় রীতিমতো তিন লাখ এক হাজার ১০১ টাকা দেনমোহর নির্ধারণ করে। শহরের শাপলাপাড়ার বিবাহ রেজিস্ট্রার কাজী মিঠু এই বিবাহের কাবিন রেজিস্ট্রি সম্পন্ন করেন। আর পবিত্র কলেমার মাধ্যমে বিয়েটি পড়ান কালেক্টরেট মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মোহাইমেনুল হক।
সুমি আকতার জানান, গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষায় সুমি আকতার অংশগ্রহণ করেন এবং পরীক্ষায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। এ বছর ১১ মার্চ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অফিস সহকারী হিসেবে যোগদান করেন তিনি। জন্মের পর থেকে মা-বাবার আদর পাননি তিনি। স্নেহপ্রবণ গৌতম চন্দ্র পাল ও তার সহধর্মিণী মুক্তি বসাক তাকে নিজেদের মেয়ে করে নেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত জাতীয় সংসদের হুইপ মাহাবুব আরা বেগম গিনি বলেন, ‘এ রকম মানবিক দায়িত্ব নিয়ে সমাজের সামর্থ্যবান ব্যক্তিরা এগিয়ে এলে সুমির মতো মেয়েদের জীবনে সুখ আসবে।’