দলিলুর রহমান :
চারদিকে শরৎ-হেমন্তের রং। এখন পাতা ঝরারও সময়। তরুদের পাতার কাজ শেষ। প্রতিমার মতো তারা সেজেছে। এখন হবে বুঝি বিসর্জন, গাছ থেকে ঝরে যাবে যখন তখন। আর এখন তারা হারিয়েছে ক্লোরোফিল, চিনি আর আলোর চুমোয় রং আর রং, নানা রঙে রাঙা, বনে বনে রং। নিউইয়র্কের বিয়ার মাউন্টেনে একটি চমৎকার দিন উজ্জ্বল, ঝলমল, রাজপথের দু’পাশে নানা রং দেখছি। বাইরে মৃদু হাওয়া বইছে, মনের ভেতরে উঁকি দেয় গান, ফেলে আসা গান।
প্রিয়তমার গান :
হৃদয় বলে আমি তোমাকে চাই
প্রিয়তমা আমি তোমাকে চাই
স্বাধীনতা আমি তোমাকে চাই
ফেলে আসা দিন আমি তোমাকে চাই।
গ্রীষ্ম বিদায় নিয়েছে, শস্য ঘরে উঠেছে, হলুদ খড়ের বোঝা পড়ে থাকে মাঠে। বনে বনে রঙের ছড়াছড়ি, লাল হলুদ ক্রিমসন মেজেন্ডা রঙের শাড়ি পরেছে গাছেরা। রঙের সমুদ্রÑতার ভেতর দিয়ে এগিয়ে যাই। বিয়ার মাউন্টেনের একটি উঁচু চূড়ায় থামি। অদূরে একটি পাথরের ঢিবি বাতাসে ভর করে আকাশ ছুঁয়ে যেন ধ্যানমগ্ন বৌদ্ধ। সকালের হলুদ রোদ, বাতাস ঠান্ডা, তবে আলো উষ্ণতায় ভরা, এ যেন আলিঙ্গনের উষ্ণতা। দিগন্তজুড়ে নানা রঙের বাহার। মনে হয় ছবিÑনদীর দু’পারে, লেকের কিনারে রং ও আলোর খেলা। মনে আবেগের প্রতিধ্বনি; যোগ দেয় এক নতুন মাত্রার বর্ণালি। স্থলভাগের রঙিন চিত্র দেখে হৃদয় দোলে ওঠে। শরৎ সন্ধ্যার আলো মায়াবী স্পর্শ নিয়ে আসে। সে আলোর ছটা মাঠে পড়ে ঘাসে পড়ে গাছের পাতায় পড়ে সব যেন সোনায় রূপান্তরিত করে। এবং মাত্র কদিনের, ঝোড়ো হাওয়া এসে উড়িয়ে নিয়ে সব রঙের বাহার, তাইতো হাইকো কবি বলেন :
দীপ্ত সকাল
সৌন্দর্যের মোহ
দিন কয়েকের স্বপ্ন
ক্রমশ রাত আসে, অন্ধকারের দিকে এগিয়ে যায় আলো, দিন কয়েকের স্বপ্ন সবই যেন ধাবিত হচ্ছে পরিণতির দিকে, অন্ধকারের দিকে ধাবিত হচ্ছে সবই। সবকিছুই তার নিজস্ব গতি ও ছন্দে নিজ নিজ গন্তব্যের দিকে যাচ্ছে। একটি গাছ দেখে মনে হচ্ছে দাঁড়িয়ে আছে, আসলে দাঁড়িয়ে নেই, চলছে। একটি পাথর দেখে মনে হবে পড়ে আছে স্থির কিন্তু তা নয়, সেও ছুটছে তার পরিণামের দিকে। হাতের কলম-পেনসিল, তারাও চলন্ত। আর সবই একে অপরের অংশবিশেষ। আমরা যখন একটি আপেল খাই, সেটি আমাদের অংশ হয়ে যায়, যে মাটি থেকে আপেল হলো তাও আমাদের অংশ। প্রাণী গ্রহ নক্ষত্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সবাই সবার অংশ আর সবাই যুক্ত ছুটছে অনন্তকাল ধরে, ধাবিত হচ্ছে মহা অন্ধকারের দিকে। যতই অসীম হোক, তারও যেমন সীমা আছে, ভাবা যেতে পারে আছে শেষ, কোথাও গিয়ে এর শেষ হবে। সময় তার যত দীর্ঘ হোক, তার শুরু ও শেষ আছে। সেই শেষই হলো মৃত্যু-সেটাই অন্ধকার, মহান্ধকার। যে অন্ধকার বিন্দু থেকেই সব কুরকের উৎপত্তি আবার সেই বিন্দুতেই তার শেষ, মৃত্যু, যবনিকা। প্রতিনিয়ত সবকিছুই অন্ধকারের দিকে ধাবিত হচ্ছে।