দিনাজপুর : অন্ধকার স্যাঁতস্যাঁতে ঘরে আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে আটকে রাখায় স্নাতকপড়ুয়া মেয়েটির হাত-পায়ের আঙুল কুঁকড়ে গেছে। জীর্ণশীর্ণ ফ্যাকাসে শরীর ধুঁকছে রক্তশূন্যতায়, বাসা বেঁধেছে চর্মরোগ। এত সব সমস্যা নিয়ে মেয়েটি মরতে বসেছিলেন। শেষ পর্যন্ত গত ৬ ফেব্রুয়ারি তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা।
২২ বছরের এ তরুণীকে তার মা-বাবাই অন্ধকার ঘরে এত দিন আটকে রেখেছিলেন। প্রতিবেশীরা বলছে, বিরোধ আছে এলাকার এমন এক পরিবারের ছেলের সঙ্গে মেয়েটির প্রেমের সম্পর্ক হয়েছে, এই সন্দেহে তাকে ঘরে আটকে রাখা হয়েছিল।
এ বিষয়ে ছাত্রীটির মা-বাবার কাছে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তারা কিছু বলতে চাননি। মা দাবি করেন, মেয়েটি অসুস্থ হওয়ায় কবিরাজ ও স্বপ্নে দেখা এক ব্যক্তির পরামর্শে তাকে ওইভাবে ঘরে আটকে রেখেছিলেন।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আশরাফুল ইসলাম জানান, ঘটনাটি তিনি দুই বছর আগে থেকেই জানতেন। তিনি ওই বাড়িতে গেলেও মেয়েটির পরিবার বিষয়টি তাদের পারিবারিক বলায় ফিরে আসেন।
প্রতিবেশীরা জানায়, দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে মেয়েটি ও তার এক ভাই যমজ। তাদের বাড়িতে বিদ্যুৎ থাকলেও যে ঘরে মেয়েটিকে আটকে রাখা হয়েছিল, সেই ঘরে কোনো বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল না। এমনকি ঘরের দরজা-জানালা সব সময় তালা মেরে রাখা হতো। তাকে গোসল করতে দেওয়া হতো না। আধাপাকা ঘরটি স্যাঁতস্যাঁতে। বর্ষায় ঘরের ভেতর পানি পড়ে। প্রতিবেশীদের জানানো হয়েছিল, মেয়েটি মানসিক রোগী। তাই তাঁকে আটকে রাখা হয়েছে। তারা সহযোগিতা করতে চাইলেও মেয়েটির মা এটি তাঁদের পারিবারিক ব্যাপার বলে এড়িয়ে যান।
গত ৬ ফেব্রæয়ারি সন্ধ্যা ৭টায় মেয়েটিকে উদ্ধার করে ভর্তি করা হয় নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। গত ৭ ফেব্রæয়ারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে, মেয়েটি বসে থাকতে বা দাঁড়াতে পারছেন না। কথা বলতে গেলে শরীর কাঁপুনি দিচ্ছে। দুর্গন্ধ বের হচ্ছে তার শরীর থেকে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা খায়রুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন অপচিকিৎসায় ও বদ্ধ ঘরে থাকায় ছাত্রীটির রক্তশূন্যতা দেখা দিয়েছে। আলো-বাতাসে না আসা এবং হাঁটাচলা না করায় দেখা দিয়েছে হাড়ক্ষয় রোগ। সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে চর্মরোগ, আর মুখে ফাঙ্গাস। ছাত্রীটি শারীরিক সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। এভাবে কিছুদিন থাকলে যেকোনো মুহূর্তে মৃত্যু হতে পারত তার। এখন তাকে সুস্থ করতে সব ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তিনি সবাইকে চিনতে পারছেন। তার মানসিক কোনো সমস্যা নেই। তিনি দ্রæত সুস্থ হয়ে উঠবেন।