ঠিকানা রিপোর্ট: সমাজে পিছিয়ে পড়া, সুবিধা বঞ্চিত, মেধাবী ও দরিদ্র মানুষের স্বপ্ন পূরণের জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ও তাদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানালেন দ্য অপটিমিস্টস এর নেতৃবৃন্দ। তারা বলেছেন, একজন মানুষের জন্য যদি একজন মানুষ এগিয়ে আসেন, তাহলে আর কেউ পিছিয়ে থাকবে না। বিশ্বে ছয় বিলিয়ন মানুষ আছে। প্রত্যেকটি মানুষ যদি এক ডলারও করেও দেন তাও ছয় বিলিয়ন ডলার। এই ছয় বিলিয়ন ডলার দিয়ে পিছিয়ে পড়া ও সুবিধা বঞ্চিত মানুষকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। সেই বিবেচনা থেকে তাই আপনারা সবাই এগিয়ে আসুন। বাংলাদেশের সুবিধাবঞ্চিত দরিদ্র ও মেধাবীদের জন্য এগিয়ে আসুন। সেই সঙ্গে এটাও মনে রাখা দরকার যারা একটি স্টুডেন্টকে ও তার পরিবারকে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য তারা যদি এক দুইবছর সহায়তা করার পর আর তা অব্যাহত রাখলেন না তাতে করে ওই পরিবারের ও সন্তানের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়। তাই আপনারা যখনই একটি সন্তানকে স্বপ্ন দেখাবেন ও তার স্বপ্ন পূরণের জন্য এগিয়ে আসবেন, দয়া করে পিছিয়ে যাবেন না। তার পেছনে আপনারা সহায়তার হাত বাড়িয়ে রাখুন যাতে সে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। তার পরিবারের স্বপ্নপূরণ হতে পারে, সেই সঙ্গে সেও যাতে বড় হয়ে অন্য মানুষের সাহায্যে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারে। এই কথাগুলো বলছিলেন দ্য অপটিমিস্টস এর এ্যানুয়াল ফান্ডরেইজিং ইভেন্ট ২০১৮ এর বক্তারা।
৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় লংআইল্যান্ড সিটির ফাইভ স্টার ব্যাংকুইট হলে অনুষ্ঠিত হয় এই অনুষ্ঠান। দ্য অপটিমিস্টস একটি চ্যারিটেবল অর্গানাইজেশন। ১৮ তম বার্ষিক সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার পাশাপাশি ফান্ডরেইজিং ইভেন্টের আয়োজন করা হয়। সেখানে যোগ দেন কমিউনিটির গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, কমিউনিটির বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ, ব্যবসায়ী, আইনজীবী, চিকিৎসক, ফার্মাসীর মালিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। এছাড়াও সেখানে যোগ দেন, যারা প্রতিনিয়ত মেধাবী স্টুডেন্টদের স্বপ্ন পূরণের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন ও অর্থ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের অনেকেই এই বছরেও অর্থ সহায়তার চেক তুলে দেন অপটিমিস্টস নেতৃবৃন্দের হাতে। অনুষ্ঠানের দিন সবচেয়ে বেশি অর্থ প্রদান করেন কিনোট স্পিকার জাকি হোসেন। তিনি ১৫ হাজার ডলার দেন।
এছাড়াও আরও বিভিন্ন পরিমাণ অর্থ দিয়ে সহায়তা করেন অপটিমিস্ট ভলেনটিয়ার, নেতৃবৃন্দ ও অন্যান্যরা। এছাড়াও অনুষ্ঠানে একটি ছবি ও একটি চিত্রকর্ম অকশনে তোলা হয়। সেই দুটির অর্থও অপটিমিস্টের জন্য প্রদান করা হয়। তাজুল ইমামের আঁকা একটি ছবি অকশনে বিক্রি হয়। আর ওবায়দুল্লাহ মামুনের একটি ফটোগ্রাফী বিক্রি হয় ।
অনুষ্ঠানে বক্তারা অপটিমিস্টের লক্ষ্য, কর্মকান্ড ও বর্তমান স্টুডেন্টের সংখ্যা, আগামী দিনে তাদের কর্মকান্ড ও পরিকল্পনা সম্পর্কেও সকলকে অবহিত করেন। একটি স্টুডেন্টকে ফাইন্যান্স করার পর তার পেছন থেকে তা সরিয়ে নিলে কি ধরণের সমস্যা হয় ও তার স্বপ্ন পূরণের পথে বাধা তৈরি হয় সেই বিষয়টি তুলে ধরেন। যারা সফলভাবে অপটিমিস্টদের জন্য কাজ করে আসছেন তাদেরকে অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্য বক্তারা তাদের বক্তব্যে তুলে ধরেন কেন একজন পিছিয়ে পড়া, সুবিধা বঞ্চিত, দরিদ্র কিন্তু মেধাবী স্টুডেন্টকে সহায়তা করতে হবে। কারণ স্বপ্ন পুরণ করে তাকেও সেবার সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে বারুখ কলেজের বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন স্টুডেন্টকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। তারাও সুবিধা বঞ্চিত মানুষের জন্য কাজ করছে। স্টুডেন্টদের সহায়তা করার উদ্যোগ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে দ্য অপটিমিস্টস যে স্টুডেন্টদেরকে সহায়তা করে যাচ্ছে এই জন্য তাদের কয়েকজনের উপর নির্মিত একটি ডকুমেন্টারী প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। সেখানে সুবিধাপ্রাপ্তরা তুলে ধরেন এক একজনের পরিবারের আর্থিক অসামর্থের কথা। তাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্রম ব্যক্তি তার বাবা। কিন্তু বাবার একার আয়ে সংসারের সকল খরচ বহন করার পর তাদের পড়ালেখার খরচ বহন করা সম্ভব নয়। এই কারণে তাদের স্বপ্ন পূরণের পথ অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় তারা দিশেহারা হয়ে পড়ে কীভাবে তাদের স্বপ্ন পুরণ হবে? অনেকেই টিউশনি করে পড়ালেখার খরচ চালাতে থাকে কিন্তু তা হলেও সুবিধা করতে পারছিল না। এই অবস্থায় নিজেদের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে যখন তারা অনেকটাই অনিশ্চিয়তার পথে হাঁটছিল, তখন তাদের পাশে দাঁিড়য়েছে অপটিমিস্টস। অপটিমিস্টসরা তাদের সহায়তা করছে, তাদের সহায়তায় তারা এখন পড়ালেখার খরচ চালিয়ে নিচ্ছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন পড়ছেন মেডিকেল, বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েটসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারা প্রতিষ্ঠিত হয়ে তাদের মতো যারা আছে তাদের স্বপ্ন পূরণের জন্য কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
অপটিমিস্টস ২০০০ সাল থেকে ইউনিক চাইল্ড স্পন্সরশীপ প্রোগ্রাম চালু করে। এক একজন ইন্ডিভিজ্যুয়াল ডোনারের কাছ থেকে তারা এক একজনের জন্য ১৩৫ ডলার করে নিয়ে থাকে। তাদের লক্ষ্য পিছিয়ে থাকা শিশুরা। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় তাদের সহায়তায় স্টুডেন্টরা পড়ছে। বাংলাদেশের সীমা ছাড়িয়ে এখন তারা নিউইয়র্কেরও বিভিন্ন স্টুডেন্টদের পড়ালেখার উপকরণ কেনার জন্য আর্থিক সহায়তা করছে। দ্য অপটিমিস্টস এর বর্তমানে যে সব প্রোগ্রাম রয়েছে এর জন্য ইন্টারন্যাশনালী বাংলাদেশে সহায়তা করছে। সেখানে তাদের দুটি অফিসও রয়েছে। এছাড়াও নিউইয়র্কেও কাজ করছে। বাংলাদেশে চাইল্ড স্পন্সরশীপ প্রোগ্রাম, স্পেশাল স্পন্সরশীপ প্রোগ্রাম, দ্য রেসকিউ সেভরস ফিউচার ও নিউইয়র্ক প্রোগ্রাম।
চাইল্ড স্পন্সর প্রোগ্রামের সময় চার বছর। নবম শ্রেনী থেকে এইচ এসসি পর্যন্ত মোট চার বছর পর্যন্ত লেখাপড়ার খরচ দেওয়া হয়। এর সমমানেরও স্টুডেন্টের জন্যও সুযোগ রয়েছে। এক একজনের জন্য বছরে বাজেট বছরে ১৩৫ ডলার। স্পেশাল স্পন্সর প্রোগ্রামের সময় ছয় বছর। এই প্রোগ্রামের অধিনে আন্ডার গ্রাজুয়েশন ও গ্রাজুয়েশনের জন্য অথবা ফার্স্ট প্রফেশনাল ডিগ্রির জন্য সহায়তা করা হয়। এই জন্য প্রতি স্টুডেন্টের জন্য দিতে হয় বছরে ৩১০ ডলার। রেসকিউ ফর সেভারস এর সময় ৮ বছর। এই প্রোগ্রামে রানা প্লাজায় দূর্ঘটনার কারণে যারা ক্ষতিগ্রস্ত সেই সব শিশুর জন্য।
এছাড়াও নিউইয়র্কের প্রোগ্রামটির জন্য এখানে যারা স্বল্প আয়ের মানুষ, তাদের পরিবারের স্কুলের সেশনের শুরুতে তাদের স্কুল সাপ্লাইয়ের জন্য সহায়তা দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এখানে যারা প্রবাসে আছেন তারা যে কেউ এই সংগঠনে অর্থ জমা করতে পারেন। তাদের অর্থ দিয়ে নতুন নতুন স্টুডেন্টদের সম্পৃক্ত করা হবে। আর কারো যাতে সময় নষ্ট না হয় ও সহজেই অর্থ জমা করতে পারেন, কোন সমস্যা না হয় সেই জন্য অনলাইনেও পেমেন্ট করার ব্যবস্থা রয়েছে।
ডা: ফেরদৌস খন্দকার অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। তিনি বলেন, আমরা আপনাদের সহায়তা সমাজের বিভিন্ন স্টুডেন্টদের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমরা এখানে যত অর্থ ডোনেশন হিসাবে পাই এর পুরোটাই স্টুডেন্টদের জন্য ব্যয় করা হয়। এখানকার কোন অর্থ অ্যাপ্যায়ন কিংবা অন্য খাতে ব্যয় করা হয় না। এই ধরণের ব্যয় আমরা ব্যক্তিগত তহবিল থেকে খরচ করি। তিনি বলেন, এখানে আমরা যারা কাজ করছি সবাই ভলেনটিয়ার হিসাবে। এখানে স্থায়ী কোন স্টাফ নেই যাদেরকে আমরা পে করি। সবাই সেবার মানসিকতা নিয়েই কাজ করেন। তিনি আরও বলেন, আপনারা যারা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন, সহায়তা করে যাচ্ছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
রনি মজুমদার অনুষ্ঠানে সকলকে আরো উৎসাহিত করার জন্য বক্তৃতা করেন। তিনি বলেন, অন্তত আপনারা একজন করে হলেও পিছিয়ে পড়া ও আর্থিক সঙ্গতি নেই কিন্তু মেধাবী তাদের জন্য এগিয়ে আসুন। এটর্নী ব্রুশ ফিশার বলেন, আমরা অপটিমিস্টের সঙ্গে আছি। আগামীতিও থাকবো। একজন পিছয়ে পড়া মানুষকেও যদি এগিয়ে নিয়ে আসা যায় ও তাকে প্রতিষ্ঠিত হতে সহায়তা করা যায় সেটাও ইতিবাচক।
বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি কামাল আহমেদ অনুষ্ঠানে বলেন, আমরা সোসাইটি থেকে এই ধরনের কাজে সম্পৃক্ত ছিলাম না। আগামী দিনেও আমাদের এই সহায়তা অব্যাহত রাখবো। তিনি বলেন, আগামী ২১ অক্টোবর বাংলাদেশ সোইটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এবারের ভোটার সংখ্যা ২৮ হাজার ৫০০ জনের মতো। আপনারা সবাই ভোট দিতে আসবেন। তিনি একটি চেকও প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন তারেক আলম, ইয়ূথ ফোরামের শাহেদ, হেড অব কমপ্লাইন্স কামরুল খান, সাঈদ খান, ফাহিম আলম, সাদিয়া হক। আব্দুল আজিজ ভুইঁয়া, রেহান জামান, ড. সাদেক, নিশাত আহমেদ, শামীম, ড. জিয়া উদ্দিন আহমেদ, ফুয়াদ আল মুক্তাদির, রানা ফেরদৌস চৌধুরী, ডা. মনিরা আলম, রাহাত মুক্তাদির প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে কি নোট স্পিকার ছিলেন, জাকি হোসেন। তিনি সবাইকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে অনুরোধ করেন একটি স্টুডেন্টকে সহায়তা করা শুরু করলে তার প্রোগ্রাম শেষ করা পর্যন্ত লেগে থাকতে হবে। কারণ কোন স্টুডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর তার স্বপ্ন যেন ভঙ্গ না হয় সেই চেষ্টা করতে হবে। তিনি বলেন, মানুষকে সামাজিক বিভিন্ন কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত থাকতে হবে। আর দ্য অপটিমিস্টস কাজ করে যাচ্ছে। এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে নতুন নতুন স্টুডেন্টদের দায়িত্ব নিবেন ও সংগঠনের কর্মকান্ডের পরিসীমা বৃদ্ধি করারও আহ্বান জানান।