অবকাশ যাপনে গিয়ে লেকে ডুবে শ্যালক-দুলাভাইয়ের মর্মান্তিক মৃত্যু

বাঁয়ে বাবা-মায়ের সাথে আফরিদ হায়দার।

ঠিকানা রিপোর্ট : অবকাশ যাপনে গিয়ে নিউইয়র্কে লেকের পানিতে ডুবে দুই বাংলাদেশি যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আরও একজন মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ২৮ আগস্ট দুপুরে স্থানীয় সময় রবিবার নিউইয়র্কের টাউন অব বেথেলের হোয়াইট লেকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিউইয়র্কের টাউন অব বেথেলের হোয়াইট লেকে এ দুর্ঘটনায় যে দুজন নিহত হয়েছেন তারা সম্পর্কে শ্যালক ও দুলাভাই। দুলাভাই আফরিদ হায়দারকে বাঁচাতে গিয়ে শ্যালক বাছির আমিনেরও সলিল সমাধি ঘটে। তারা দুইজন যখন পানিতে ডুবে যাচ্ছিলেন তখন তাদেরকে বাঁচানোর জন্য নাছরিন আমিন পানিতে নামেন এবং তিনিও পানিতে ডুবে যান। এবং মুমূর্ষ অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখন তার চিকিৎসা চলছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।

নিউইয়র্ক : কফিনে বন্দি আফরিদ হায়দার ও বাছির আমিনের মরদেহ। জানাজা পরিচালনা করেন আল আমিন জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা লুৎফুর রহমান চৌধুরী

যারা মারা গেছেন, তারা নিউইয়র্র্কের কুইন্সের বাসিন্দা। নিহতরা হলেন কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার পেড্ডা গ্রামের রুহুল আমিনের বড় মেয়ের স্বামী আফরিদ হায়দার (৩৩) ও তার ছোট ছেলে বাছির আমিন (১৮)। জামাই আফরিদ হায়দারের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীতে। এ ঘটনায় রুহুল আমিনের ছোট মেয়ে নাছরিন আমিন মুমূর্ষ অবস্থায় স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) এসব তথ্য জানিয়েছেন নিউইয়র্কস্থ বরুড়া উপজেলা অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বদরুল হক আজাদ।
নিহতদের পরিবারের অপর সদস্য ফারুক আমীন ঘটনার পরদিন একটি ভিডিও বার্তায় পুরো ঘটনা তুলে ধরেন। তিনি সেখানে উল্লেখ করেন, ২৭ আগস্ট শনিবার পারিবারিক ছুটি কাটাতে রুহুল আমিন পুরো পরিবার নিয়ে টাউন অব বেথেলে অবকাশ যাপনে যান। রোববার দুপুরে তার জামাই আফরিদ পাশের হোয়াইট লেকে নামেন। এ সময় ফারুক আমীনের বাবা-মাও লেকের কিনারের দিকে ছিলেন। আফরিদ পানিতে যেতে যেতে বুক পর্যন্ত পানিতে যান। কিন্তু সেখান থেকে ফিরতে পারছিলেন না। হঠাৎ করেই আফরিদ পানিতে তলিয়ে যেতে থাকেন। এই সময়ে দুলাভাইকে পানিতে ডুবে যেতে দেখে তাকে বাঁচাতে শ্যালক বাছির আমিন পানিতে নেমে তাকে উদ্ধার করার চেষ্টা করেন। কিন্তু আফরিদকে বাছির উদ্ধার করতে পারেননি। বরং তিনিও পানিতে ডুবে যেতে থাকেন। এই ঘটনা দেখার সাথে সাথে তাদের দুইজনকে বাঁচাতে এগিয়ে যান রুহুল আমিনের ছোট মেয়ে নাছরিন আমিন। নাছরিন আমিন তাদেরকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রক্ষা করতে পারেননি। পরিবারের দুইজন সদস্যকে হারিয়ে এবং একজনকে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে রেখে এখন কেউ ভাল নেই। ফারুক আমীনসহ তার পরিবারের সকল সদস্য শোকের সাগরে ভাসছেন। এই ধরণের একটি করুণ ও মর্মান্তিক মৃত্যুতে পুরো কমিউনিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ফারুক আমীন ওই ভিডিও বার্তায় আরো বলেছেন, আমরা গভীরভাবে শোকাহত। তিনি কথা বলছিলেন, আর বার বার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন। তাকে তার নিকট আত্নীয়রা সান্তনা দিচ্ছিলেন। জানা গেছে, যারা মারা গেছেন তারা দুইজনই সাঁতার জানতেন না। নাসরীন আমীনও সাঁতার জানতেন না। আর এই কারণে তারা কেউ জানতেন না পানি কত গভীর। লেকে মেয়ের জামাই, নিজের ছেলে-মেয়েকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন রহুল আমিনের স্ত্রী রাহেলা আমিন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।
২৯ আগস্ট সন্ধ্যায় এস্টোরিয়ার আল আমিন মসজিদে প্রথম নামাজে জানাজা এবং ৩০ আগস্ট জেএমসিতে শেষ নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে কমিউনিটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ এবং কমিউনিটির সর্বস্তরের মানুষেরা জানাজায় শরিক হন। জানাজা শেষে তাদের লং আইল্যান্ডের ওয়াশিংটন মেমোরিয়ালে দাফন করা হয়েছে।
সোমবার দুপুরে নিউইয়র্কে বরুড়া উপজেলা অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বদরুল হক আজাদ গণমাধ্যমকে জানান, শনিবার রুহুল আমিন পুরো পরিবার নিয়ে টাউন অব বেথেলে অবকাশ যাপনে যান। রবিবার দুপুরে রুহুল আমিনের মেয়ের জামাই আফরিদ পাশের হোয়াইট লেকে গোসল করতে নামেন। এসময় হঠাৎ করেই আফরিদ পানিতে তলিয়ে যায়। দুলাভাই আফরিদকে বাঁচাতে শ্যালক বাছির পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তাদের দুজনকে বাঁচাতে এগিয়ে যান রুহুল আমিনের ছোট মেয়ে নাছরিনও। এতে তিনজনই লেকের পানিতে তলিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে থাকা আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা, ইএমএস এবং ফায়ার ডিপার্টমেন্টের অপারেশনের এক সেনা জানান, হোয়াইট লেকের তীরের কাছাকাছি পানি থেকে এ তিনজনকে উদ্ধার করা হয়। পরে দ্রুত তাদের অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে শ্যালক ও দুলাভাই দু’জনকে মৃত ঘোষণা করা হয়।