অর্থনীতি চাঙ্গা থাকতেই আগাম নির্বাচন করছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট

বিশ্বচরাচর ডেস্ক : জি২০ দেশগুলোর মধ্যে তুরস্কের অর্থনীতিই সবচেয়ে দ্রুতবর্ধনশীল। কিন্তু দেশটির অর্থনীতির পূর্বাভাসে দীর্ঘমেয়াদে অনিশ্চয়তা রয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েব এরদোগান আগাম নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এ অনিশ্চয়তার আশঙ্কা থেকেই।
গত বছর রেকর্ড ৭ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখছে তুরস্ক। কিন্তু চাঙ্গা প্রবৃদ্ধির এ উপাত্ত অর্থনীতির স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রশমিত করতে পারেনি। দুই অংকের ঘরে থাকা মূল্যস্ফীতি, চলতি হিসাবে বিপুল ঘাটতি, মুদ্রার দুর্বল মান এবং উচ্চ হারে করপোরেট ঋণই এর কারণ।
ক্ষমতায় ১৫ বছর থাকতে এরদোগানের তুরুপের তাস অর্থনীতি। এ ছাড়া তুরস্কের স্ট্রংম্যান হিসেবে পরিচিত এরদোগান দেশকে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি থেকে উদ্ধারেরও দাবি করে থাকেন। অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা ২০০০-০১ সালের সংকটে দেশটিকে প্রায় ধসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল।
গতানুগতিক সময়ের দেড় বছর আগেই ২৪ জুন আগাম নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে তুরস্ক সরকার। বিশ্লেষকেরা বলছেন, অর্থনীতি তুঙ্গে থাকতেই আরো এক মেয়াদ ক্ষমতায় থাকতে চাইছেন এরদোগান। তুরস্কে বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ও বেকারত্ব দুটিই ১০ শতাংশের উপরে অবস্থান করছে। নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন হলে দেশটির বিরোধী দল অর্থনৈতিক এ অস্থিরতার সুযোগ নিতে চাইবে।
ইস্তাম্বুলে গ্লোবাল সোর্স পার্টনারসের কান্ট্রি ডিরেক্টর আতিলা ইয়াসিলাদা এএফপিকে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘প্রবৃদ্ধির এ ধারা কোনোভাবেই ২০১৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে না। অর্থনীতিটি অতি দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে।’
নির্বাচন সামনে রেখে ইস্তাম্বুলসহ শীর্ষ শহরগুলোয় অবকাঠামো নির্মাণের বিশাল যজ্ঞ শুরু করেছে তুর্কি সরকার। এসব জায়গায় ভ্রমণরত কারো চোখই নির্মাণের এ পাগলাটে গতি এড়িয়ে যাবে না। চলতি বছর চালু হতে যাওয়া ইস্তাম্বুলের নতুন বিশালাকৃতির বিমানবন্দর থেকে শুরু করে বসফরাস প্রণালিতে সুয়েজ খালের আকারে একটি জাহাজ চলাচল উপযোগী খাল নির্মাণ এসব অবকাঠামো প্রকল্পগুলোর অন্যতম।
তবে অতিসম্প্রতি কিছু খবরে জানা গেছে, তুরস্কের শীর্ষস্থানীয় দুটি কোম্পানি ঋণ পুনর্গঠন করতে চাইছে। এ খবরে বাজার অস্থির হয়ে পড়েছে। এর মধ্য দিয়ে কোম্পানিগুলোর সুদূরপ্রসারী উচ্চাকাক্সক্ষার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। দোগাস গ্রুপ ও ইয়েলদিজ হোল্ডিং নামের এ দুই কোম্পানিই ব্যাংকের কাছে তাদের হাজার হাজার কোটি ডলারের ঋণ পুনর্গঠনের আবেদন জানিয়েছে। গ্যারান্টি ব্যাংক থেকে শুরু করে সল্ট বায়ের মতো রেস্টুরেন্টের ব্যবসা রয়েছে দোগাস গ্রুপের আর গোদিভা, ম্যাকভাইটিজের মতো কনফেকশনারি ব্র্যান্ডের পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইয়েলদিজ।
লন্ডনের ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের উদীয়মান বাজারবিষয়ক জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ উইলিয়াম জ্যাকসন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত অর্থনৈতিক উপাত্তের সবই খুব শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। তবে একটি বিষয় পরিষ্কার, এটিই অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে।’
এএফপিকে উইলিয়াম জানান, দুই অংকের মূল্যস্ফীতি ও চলতি হিসাবে ঘাটতি বেড়ে চলা অন্যতম উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছে। চলতি হিসাবে ঘাটতি দেশটির বিদেশ থেকে ঋণ গ্রহণের পরিমাপক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
তবে রেনেসাঁ ক্যাপিটালের প্রধান অর্থনীতিবিদ চার্লস রবার্টসন মনে করেন, নির্বাচনে এরদোগানের জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার মতো চরম পর্যায়ে তুরস্কের অর্থনীতি পৌঁছায়নি। এ প্রসঙ্গে তিনি এএফপিকে আরো বলেন, ‘বেকারত্বের হার এখন পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে রয়েছে। এ ছাড়া এখনো অনেক তুর্কিবাসী বিদেশি মুদ্রায় সঞ্চয় করতে পারছেন। ফলে স্থানীয় মুদ্রা লিরার মান দুর্বল হওয়া সত্ত্বেও মধ্যবিত্তদের কাছে তা যন্ত্রণাদায়ক হয়ে ওঠেনি।’ বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ডলারের বিপরীতে লিরার মান কমেছে ১০ শতাংশ। তবে কয়েক মাসের গুঞ্জনের অবসান ঘটিয়ে আগাম নির্বাচনের বিষয়টি চুড়ান্ত হওয়ার পর গত ২৮ এপ্রিল লিরার মান আবার চাঙ্গা হয়ে ওঠে।
তবে মুদ্রার এ চাঙ্গাভাব টেকসই হবে না হলে ধারণা করছেন ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের জ্যাকসন। কারণ চলতি হিসাবে বিশালাকৃতির ঘাটতির কারণে বিদেশি পুঁজিপ্রবাহের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে তুরস্ক এবং মুদ্রার ওপরও চাপ পড়বে।
এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠানগুলো প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সুদের হার কমানোর জন্য এরদোগানের ওপর চাপ সৃষ্টি করে আসছে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি কমাতে কঠোর মুদ্রানীতিমালা প্রত্যাশা করছেন ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদহার বৃদ্ধি নিয়ে সংকটে রয়েছেন এরদোগান। সূত্র : এএফপি