ঠিকানা রিপোর্ট : ভূমিকম্পবিধ্বস্ত তুরস্ক ও সিরিয়ায় অসংখ্য শিশু মা-বাবাসহ নিকটাত্মীয়দের হারিয়ে অনাথ হয়ে পড়েছে। ঠিক কত শিশু এতিম হয়েছে- এখন পর্যন্ত তা সঠিকভাবে জানাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এদিকে সিরিয়ার জেন্ডারিস শহরের ধ্বংসস্তূপের নিচে জন্ম নেওয়া অলৌকিক শিশু আয়াকে লালন-পালনের দায়িত্ব নেবেন তার বাবার চাচা সালাহ আল-বদরান। হাসপাতাল থেকে ছাড়ার পর তাকে নিয়ে যাবেন তিনি।
সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় এই জেন্ডারিস শহরে আল-বদরানের নিজেরও বাড়ি ছিল। ভূমিকম্পের সময় তিনি এবং তার পরিবারের সদস্যরা বাড়ির একতলা বিল্ডিং থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন। কিন্তু এখন তিনি পরিবারের ১১ জন সদস্য নিয়ে একটি তাঁবুতে বসবাস করছেন।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি সোমবার সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত জেন্ডারিস শহরে একটি ভবনের ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়েন এক অন্তঃসত্ত্বা। সেখানেই তিনি ফুটফুটে ওই মেয়েশিশুর জন্ম দেন। নবজাতকের জন্মের পরপরই মারা যান ওই নারী। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় শিশুটি। তবে শুধু মাকে নয়, ভূমিকম্পে বাবা ও চার ভাই-বোনকেও হারিয়েছে শিশুটি।
উদ্ধারকর্মীরা ভূমিকম্পের পর পাঁচতলা ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে যখন শিশুটির সন্ধান পান, তখন সে মায়ের নাড়ির সঙ্গে প্যাঁচানো অবস্থায় ছিল। সেখান থেকে বের করে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। খলিল আল সুয়াদি নামের এক দূর-সম্পর্কের আত্মীয় তাকে আফরিন শহরের একটি হাসপাতালে নিয়ে যান।
সেখানে শিশু বিশেষজ্ঞ হানি মারুফের চিকিৎসাধীন সে। মারুফ বলেন, ‘সোমবার যখন তাকে এখানে আনা হয়, তখন তার অবস্থা খুব খারাপ ছিল। গায়ে প্রচণ্ড আঘাত লেগেছিল, কালশিটে দাগ ছিল, শরীর ঠান্ডা হয়ে ছিল, শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল।’ তবে আয়ার অবস্থা এখন স্থিতিশীল বলে জানিয়েছেন এই চিকিৎসক। তিনি আরও জানান, শিশুটির নাম রাখা হয়েছে ‘আয়া’। আরবি ভাষায় যার অর্থ ‘অলৌকিক’।
হাসপাতালের ব্যবস্থাপক খালিদ আতিয়াহ বলেন, আয়াকে দত্তক নেওয়ার আগ্রহ দেখিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারো মানুষ তাঁকে ফোন করেছেন। তবে খালিদ তাকে এখন দত্তক দিতে চান না। তিনি বলেন, ‘আমি তাকে দত্তক নেওয়ার জন্য কাউকে অনুমতি দেব না। তার দূর–সম্পর্কের আত্মীয় ফিরে না আসা পর্যন্ত আমি তার চিকিৎসা করছি।’
খালিদের নিজেরও চার মাস বয়সী কন্যাসন্তান আছে। তাঁর স্ত্রী এখন নিজের সন্তানের পাশাপাশি আয়াকেও বুকের দুধ পান করাচ্ছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও অনেকে আয়াকে দত্তক নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে পোস্ট দিয়েছেন। কুয়েতের এক টিভি উপস্থাপক লিখেছেন, আইনগতভাবে অনুমতি পেলে তিনি আয়াকে দত্তক নিয়ে লালনপালন করার জন্য প্রস্তুত। আরেক পোস্টে অপর এক ব্যক্তি লিখেছেন, ‘আমি তাকে দত্তক নিতে চাই এবং ভালোভাবে বাঁচার সুযোগ করে দিতে চাই।’
তুরস্কের পরিবার ও সমাজসেবা মন্ত্রণালয় সম্ভাব্য দত্তক গ্রহীতা পরিবারগুলোকে এতিম হয়ে পড়া শিশুদের লালনপালনের দায়িত্ব নিতে আবেদন জমা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। এতে বলা হয়, যেসব শিশুর পরিবার বা আত্মীয়দের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তাদের বর্তমানে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে দেখাশোনা করা হচ্ছে। কর্মীরা তাদের চাহিদা মূল্যায়ন করে নিবন্ধিত পালক পরিবারের কাছে হস্তান্তর করবে।
এদিকে সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশের স্বাস্থ্য বিভাগের ডেপুটি চিফ ডাক্তার মুহিব কাদ্দুর বলেন, এখানকার এতিমের সংখ্যা নির্ধারণ করা খুব বিভ্রান্তিকর। কত শিশু এতিম হয়েছে তা নির্ধারণ করা যাচ্ছে না।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তুরস্ক ও সিরিয়ায় গত ৭ ফেব্রুয়ারি সোমবারের ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ৩৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। অসংখ্য শিশু তাদের পিতামাতা হারিয়েছে।