অস্ট্রিয়ায় ৭ মসজিদ বন্ধ ঘোষণা

বিশ্বচরাচর ডেস্ক : তুরস্কের অর্থায়নে পরিচালিত সাতটি মসজিদ বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে অস্ট্রিয়ার সরকার। গত ৮ জুন দেশটির চ্যান্সেলর সেবাস্তিয়ান কুর্জ এক নির্দেশে বলেন, অস্ট্রিয়ার আইনে ‘রাজনৈতিক ইসলাম’ (বৈদেশিক অর্থায়নে পরিচালিত মুসলিম প্রতিষ্ঠান) নিষিদ্ধ। তুরস্কের অর্থায়নে পরিচালিত এই মসজিদগুলো সে আইনের লঙ্ঘন করেছে। এ ছাড়া, এসব মসজিদের ইমামদের অস্ট্রিয়ায় বসবাস করতে দেয়া হবে কি না সে বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। এ খবর দিয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস ও বিবিসি।
খবরে বলা হয়, অস্ট্রিয়ায় কোন সমান্তরাল সমাজ, রাজনৈতিক ইসলাম এবং উগ্রপন্থায় দীক্ষিত হওয়ার প্রবণতার জায়গা নেই।
চ্যান্সেলর সেবাস্তিয়ান কুর্জ তার নির্দেশে এই বিষয়টি উল্লেখ করেন। যে মসজিদগুলো বন্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তার মাধ্যে তিনটিই রাজধানী ভিয়েনাতে অবস্থিত। এ ছাড়া সরকার আরব ধর্মীয় কমিউনিটি নামে একটি সংগঠন ভেঙে দেবার পদক্ষেপ নিয়েছে। কর্তৃপক্ষের সন্দেহ, কয়েকটি মসজিদের সঙ্গে তুরস্কের জাতীয়তাবাদীদের সপর্ক আছে।
এপ্রিল মাসে প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, একটি স্কুলের শিশুরা তুরস্কের সেনার পোশাক পরে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়কার গালিপোলির যুদ্ধ নিয়ে একটি নাটকের দৃশ্যে অভিনয় করছে। এ ছবি ফাঁস হওয়ার পর তা অস্ট্রিয়ায় তীব্র বিতর্ক তৈরি করে। এই স্কুলটি উগ্র তুর্কি জাতীয়তাবাদী গ্রুপ ‘গ্রে উলভস’ দিয়ে পরিচালিত বলে মনে করা যায়। বিভিন্ন দেশে যার শাখা রয়েছে। এ ছাড়া, অস্ট্রিয়ার ২৬০ জন ইমামের মধ্যে ৬০ জনের ব্যাপারে তদন্ত করা হচ্ছে। এদের মধ্যে ৪০ জন এআইটিবি নামে তুর্কি সরকারের ঘনিষ্ঠ একটি মুসলিম গ্রুপের সদস্য।
অস্ট্রিয়া সরকারের মসজিদ বন্ধ করার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে তুরস্ক। দেশটির প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ইব্রাহিম কালিন এক টুইটার বার্তায় বলেছেন, অস্ট্রিয়ার উদ্যোগে ইসলামবিদ্বেষ, বৈষম্য এবং বর্ণবাদের প্রতিফলন ঘটেছে। তিনি অভিযোগ করেন- ভিয়েনা মুসলিম জনগোষ্ঠীগুলোকে লক্ষ্য করে সস্তা রাজনৈতিক ফায়দা নিতে চাইছে।
উল্লেখ্য, অস্ট্রিয়ায় নির্বাচনের সময় কুর্জের প্রচারাভিযানে অভিবাসন এবং মুসলিমদের মূল সমাজের সাথে মুসলিমদের সংযুক্তির বিষয়টি ব্যাপক প্রাধান্য পায়। দেশটিতে এখন যে কট্টর ডানপন্থী জোট সরকার ক্ষমতায়, তারা নির্বাচনে জিতেছিল অভিবাসন এবং রাজনৈতিক ইসলামের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ার কথা বলে। প্রায় নব্বই লাখ মানুষের দেশ অস্ট্রিয়ায় মুসলিমের সংখ্যা ছয় লাখ। এদের বেশির ভাগই তুরস্ক থেকে আসা অভিবাসী বা তুর্কিদের বংশধর।
অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর সেবাস্টিয়ান কুর্জ যখন এর আগে মন্ত্রী ছিলেন, তখন অনেক ইসলামবিরোধী আইন করেছিলেন। এবার তিনি আরও একধাপ এগিয়ে সাতটি মসজিদ এবং প্রায় চল্লিশ জনের মতো ইমামকে বহিষ্কারের ঘোষণা দিলেন। ভিয়েনায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, অস্ট্রিয়ায় পাশাপাশি দুটি ভিন্ন ধারার সমাজ চলতে পারে না। কুর্জ আরো চান যে তুরস্কের ইইউ সদস্যপদ পাবার আলোচনা যেন ভেঙে দেয়া হয়Ñ যার কারণে তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ক্রুদ্ধ হন।