নিজস্ব প্রতিনিধি : আর মাত্র ১৪ মাস পরই দেশে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ওই নির্বাচন যেন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়, সে জন্য কূটনীতিপাড়া ও বিদেশিদের কাছে ধরনা দিচ্ছে বিএনপি। চেষ্টা করছে সরকারবিরোধী বৃহৎ আন্দোলন গড়ে তোলার। বিএনপি হাইকমান্ড চায় কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করে দলের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে দলকে একটি ভালো অবস্থানে নিয়ে যেতে। এতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসতে না পারলেও মাঠের রাজনীতিতে যেন শক্তিশালী ও কার্যকর বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে পারে।
এদিকে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কূটনৈতিক তৎপরতা এবং বিদেশমুখী রাজনীতির কারণে অস্বস্তিতে পড়ছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ। এতে দলটিতে বাড়ছে বৈশ্বিক রাজনৈতিক চাপ। আওয়ামী লীগের নেতাদের দাবি, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। এ দেশের নির্বাচনব্যবস্থা কেমন হবে, তা সম্পূর্ণ এই দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এখানে নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে বিদেশিদের মাথা ঘামানোর সুযোগ নেই। সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনে সঠিক সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ফলে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে সুষ্ঠু রাজনীতির ধারায় ফিরে আসার আহ্বান আওয়ামী লীগের।
বিএনপির দলীয় সূত্র বলছে, বিগত ১৪ বছরে সরকারের দমন-নীতির কারণে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে বিএনপির নেতাকর্মীদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। তাই দলীয় গ্রুপিংকে বর্তমানে ছোট করে দেখে সবাই একসঙ্গে আন্দোলন করতে বাধ্য হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পর বিরোধী দলের লোকজনের অন্তর থেকে খুন-গুমের ভয় কেটে গেছে বলে মনে করছেন কিছু নেতাকর্মী। অনেকে এখন বিশ্বাস করেন, র্যাব-পুলিশ গুলি করে মেরে ফেললে দেশে বিচার না হলেও প্রশাসন চাপে পড়বে। যে কারণে ভোলা, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জে নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটলেও বিএনপির নেতাকর্মীরা রাজপথে স্বতঃস্ফূর্ত। পাশাপাশি সম্প্রতি কূটনৈতিক তৎপরতাও নেতাকর্মীদের মনে সাহস জোগাচ্ছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
বিগত কয়েক মাস ধরে বিএনপি মাঠে আন্দোলন করার পাশাপাশি বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গেও ঘন ঘন বৈঠক করছে। কিছুদিন আগে ব্রিটিশ হাইকমিশনার, কানাডিয়ান দূতাবাসের কর্মকর্তা, জাপানের রাষ্ট্রদূত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বলয়ের দেশগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপির প্রতিনিধিদল।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, বিদেশিদের কাছে ধরনা দেয় কারা? যাদের মাজায় শক্তি থাকে না; রাজনৈতিকভাবে যারা দুর্বল এবং দেশীয় রাজনীতিতে যাদের গ্রহণযোগ্যতা নেই, তারাই বিদেশিদের কাছে ধরনা দেয়। বিদেশি শক্তি কখনো কাউকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসিয়ে দিতে পারে না। কাজেই বিদেশে নালিশ দিয়ে কাজ হবে না। বিরোধীদের উচিত নালিশ বা অভিযোগের পথ পরিহার করে গণতান্ত্রিক ধারায় দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে রাজনীতি শুরু করা এবং নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে অংশগ্রহণ করা।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, বিএনপি যদি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হয়, তাহলে দেশের সংবিধান মেনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। তারা বিদেশিদের কাছে যেসব অভিযোগ দিচ্ছে, এসব অভিযোগ নিজেদের নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রাখার জন্য বলছে। তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর প্রতিটি দেশে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কাজেই সংবিধানের বাইরে গিয়ে কথা বলে লাভ হবে না। আশা করি, বিএনপি এসব বিষয় বিবেচনা করবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এবার আন্দোলনে আমরা দেশে-বিদেশে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। কারণ আমাদের আন্দোলন তো দেশে ভোটাধিকারের জন্য, মানবাধিকারের জন্য, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য কমানোর জন্য। সুতরাং বিদেশি দেশগুলোর সমর্থন আমরা পাচ্ছি। বরাবরের মতোই আমাদের আন্দোলনে তাদের সমর্থন রয়েছে।’