অ্যাসাইলাম আবেদনে পাসপোর্টের সব পৃষ্ঠার ছবি দিতে হবে

ঠিকানা রিপোর্ট : বিভিন্ন ক্যাটাগরির ভিসা নিয়ে বৈধ উপায়ে আমেরিকায় আসার পর অনেকেই এখানে স্থায়ীভাবে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। এ জন্য তারা অ্যাসাইলাম কেস ফাইল করেন। যুক্তরাষ্ট্রে আসার এক বছরের মধ্যে এই ফাইল করতে হয়। অ্যাসাইলাম আবেদন করার পর কেসের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ইউএসসিআইএস। আগে এই অ্যাসাইলাম কেস করার সময় আবেদনকারীকে তার পাসপোর্টের কপি, ভিসার কপি এবং এন্ট্রি কপি প্রমাণের জন্য আই-৯৪ দিলেই হতো। এখন অ্যাসাইলাম কেসের জন্য দিতে হচ্ছে পাসপোর্টের সব পৃষ্ঠার কপি। ফলে এখন থেকে চাইলেও কেউ তার ভ্রমণ-সংক্রান্ত তথ্য, ইতিহাস, ডলার এনডোর্সমেন্টসহ বিভিন্ন তথ্য গোপন করতে পারবেন না। পাসপোর্টের যাবতীয় তথ্য দেখার জন্যই মূলত এই নিয়ম করেছে ইউএসসিআইএস।
এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জান্নাতুল রুমা বলেন, আমেরিকায় বৈধ পথে আসার পর যারা স্থায়ীভাবে এখানে থেকে যাওয়ার চিন্তা করেন, তাদের উচিত এক বছরের মধ্যেই অ্যাসাইলাম কেস ফাইল করা। কিন্তু কেউ কেউ এক বছরের বেশি এমনকি কয়েক বছর পরও ফাইল করেন। এতে ফাইল রিজেক্ট হওয়ার শঙ্কা থাকে। তাই ফাইলিংয়ের সময়ের বিষয়টি কঠোরভাবে মানা উচিত।
তিনি বলেন, সম্প্রতি একটি ল’ অফিস থেকে এক ব্যক্তি আমার কাছে তার ফাইল নিয়ে আসেন, যা রিজেক্ট হয়েছে। তার কেসের বেলায় তিনটি অনিয়ম হয়েছে- সময়মতো ফাইল না করা, সঠিকভাবে ফর্ম পূরণ না করা এবং প্রয়োজনীয় সব নথিপত্র না দেওয়া। তিনি যে ফার্ম থেকে ফাইলটি করেছেন, তারাই ভুল করেছে।
জান্নাতুল রুমা বলেন, প্রথমত ওই ব্যক্তির অ্যাসাইলাম কেসের জন্য যে ফর্মটি ব্যবহার করা হয়েছে, তা ওই সময়ে চালু ছিল না। কারণ ওই সময়ে ফর্মের নতুন সংস্করণ প্রকাশিত হয়। বেশির ভাগ সময় দেখা যায়, যারা বিভিন্ন অফিসে ফর্ম পূরণ করেন, তারা আগের কোনো ব্যক্তির ফিলআপ করা ফর্ম কপি করে এর মধ্যে নতুন কারও তথ্য বসিয়ে ফর্ম পূরণ করেন। আমার নতুন ক্লায়েন্টের বেলায়ও তা-ই ঘটেছে। ফলে তার ফর্মটি রিজেক্ট হয়েছে। দ্বিতীয় কারণ হলো, বেনিফিশিয়ারিসহ মোট পাঁচ কপি আবেদন জমা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তার ক্ষেত্রে দেওয়া হয়েছে তিন কপি। একে তো আবেদনপত্রের ফর্ম ভুল, তার ওপর পাঁচ কপির পরিবর্তে তিন কপি আবেদন জমা দেওয়া-তাই তিনি ফাইল করার তিন মাস পরই তার আবেদন রিজেক্ট হয়। এ অবস্থায় আমি তার জন্য অনলাইনে ফাইল করার উদ্যোগ নিই। অনলাইনে ফাইল করার সময় কিছু নথিপত্র চাওয়া হয়। এর মধ্যে পাসপোর্টের কভার পৃষ্ঠা থেকে শুরু করে শেষ পৃষ্ঠা পর্যন্ত পুরোটাই দিতে হয়।
অ্যাটর্নি জান্নাতুল রুমা আরও বলেন, অ্যাসাইলাম কেস সফল হওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে একজন আবেদনকারী কবে কোথায় ভ্রমণ করেছেন, আবেদন করার আগে আমেরিকায় কতবার এসেছেন, কত দিন থেকেছেন-এসব তথ্য সঠিকভাবে পরিবেশন করার ওপর। তাই যারা অ্যাসাইলাম কেস করবেন, তাদের উচিত নিজ পাসপোর্টে ভ্রমণ-সংক্রান্ত তথ্যসহ যেসব তথ্য আছে, তা সঠিকভাবে দেওয়া।
তিনি বলেন, অনেকেই ল’ইয়ারকে দিয়ে ফাইল না করিয়ে নিজেই বা কোনো ব্যক্তিকে দিয়ে ফাইল করেন। আবার অনেকে কোনো মাল্টিসার্ভিস অফিস কিংবা কোনো অ্যাকাউট্যান্টের অফিসে গিয়ে ইমিগ্রেশনের ফাইল করাচ্ছেন। একজন আইনজীবী ফর্ম পূরণ করলে তার যে দায়বদ্ধতা থাকে, ওই সব প্রতিষ্ঠান কিংবা ব্যক্তির সেই দায়বদ্ধতা থাকে না। কারণ তারা ফর্ম পূরণ করার জন্য অফিশিয়ালি সরকারের কাছে দায়বদ্ধ নয়। ওই সব ক্ষেত্রে ফর্ম যিনি পূরণ করেছেন, তার কোনো নাম থাকে না। তারা ফর্ম পূরণ করে দিয়েই খালাস। বেশির ভাগ সময় ওই ফর্মও আবেদনকারীকেই পোস্ট করতে হচ্ছে। অন্যদিকে একজন ল’ইয়ার বা আইনজীবী যখন ফর্ম পূরণ করবেন, তখন তিনি দায়িত্ব নিয়ে ফর্ম পূরণ করেন। কারণ আইনজীবীর জন্য জি-২৮ ফর্ম পূরণ করতে হয়। সেই সঙ্গে আইনজীবীর নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর, ইমেইল অ্যাড্রেস সব দিতে হয়। আর যিনি ল’ইয়ারের অফিসে প্রিপায়ার থাকেন, তারও নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর, ইমেইল অ্যাড্রেস দিতে হয়। ফর্মে আইনজীবকে স্বাক্ষর করতে হয়। তাই একজন আইনজীবী আবেদনে যেসব তথ্য দেন, তা তিনি নিশ্চিত হয়েই দেন। তাই আমি বলব, ইমিগ্রেশন-সংক্রান্ত যেকোনো ফাইল করার সময় পুরোপুরি জানা না থাকলে একজন ল’ইয়ারের মাধ্যমে করাই উত্তম। এতে ফাইলটি রিজেক্ট হওয়ার শঙ্কা কম থাকে।