আইনগত ভিত্তি পেলে ইভিএম ব্যবহার : সিইসি

একাদশ জাতীয় নির্বাচন

রাজনীতি ডেস্ক : আইনগত ভিত্তি পেলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা। তিনি জানান, ইভিএম যদি ব্যবহার উপযোগী হয়, কোনো ত্রুটি না থাকে শুধু তখনই এ মেশিন ব্যবহার করা হবে। তিনি বলেন, অতিরিক্ত চাপিয়ে দেয়া বা অতিরিক্ত অবস্থানে আমরা যাবো না, এর দায়িত্ব নেবো না। নির্বাচন প্রশিক্ষণ ভবনে গত ২২ সেপ্টেম্বর এক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় সিইসি এসব কথা বলেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন প্রশিক্ষকদের জন্য এ প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। সিইসি বলেন, জাতীয় নির্বাচন ২০১৮ সালের শেষে বা ২০১৯ সালের শুরুতে অনুষ্ঠিত হবে।

প্রসঙ্গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিধান অন্তর্ভুক্ত করে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও), ১৯৭২-এ সংশোধন আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। আরপিও খসড়া ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। এ ছাড়া দেড় লাখ ইভিএম কিনতে একটি প্রকল্পও হাতে নিয়েছে কমিশন; যা পরিকল্পনা কমিশন অনুমোদন করেছে।
প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ইভিএম প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, আমি বারবার বলেছি, আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। যদি আইনগত ভিত্তি পায় (আরপিও সংশোধন হয়) তবে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। যেই ইভিএম আছে সেটা যদি ব্যবহার উপযোগী হয়, কোনো ত্রুটি না থাকে শুধু তখনই ব্যবহার করা হবে। তবে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে নির্বাচন কমিশনের একটা স্বপ্ন আছে। সেটা বাস্তবতার নিরিখে। তিনি বলেন, আমি আবারও বলি ইভিএম নিয়ে আমাদের অবস্থান আমরা যতটুকু পারব, সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত হয়ে ততটুকু ব্যবহার করব। অতিরিক্ত চাপিয়ে দেয়া বা অতিরিক্ত অবস্থানে আমরা যাব না, এর দায়িত্ব নেবো না।

ইভিএম নিয়ে মানুষের মধ্যে প্রশ্ন থাকা স্বাভাবিক উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ইভিএম নিয়ে মানুষের মধ্যে সন্দেহ, প্রশ্ন থাকবেই। এর কারণ মানুষের ভোট একটা পবিত্র আমানত। সেটা কোথায় দিল, কিভাবে দিলো সেটা জানার আগ্রহ থাকবে না, সেটা হতেই পারে না। কিভাবে এটার (ইভিএম) ব্যবহার হবে সেটা যদি না জানে, তাহলে তো মানুষের মধ্যে প্রশ্ন থেকেই যাবে। সুতরাং আমাদের প্রয়োজন হবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ইভিএম কী, উপকারিতা কী, তা দেশব্যাপী প্রচার-প্রচারণা চালানো।
তিনি আরও বলেন, নতুন একটা জিনিস ব্যবহার করতে গেলে সেটি সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান না থাকলে বা সেটি সম্পর্কে জানতে না পারলে মানুষের মনে প্রশ্ন থাকবেই। কারণ এটি জনসাধারণের বিষয়, ব্যক্তিগত বিষয় নয়। কাজেই তাদের ভোট প্রয়োগ হলো, সেটি সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হলো কি না, এটা অবশ্যই তাদের জানার এবং বোঝার অধিকার আছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক নেতারা যারা আছেন অবশ্যই তাদের জানার ও বোঝার অধিকার আছে। তবে আমার একটি অনুরোধ থাকবে, এটাকে আপনারা আগে ভালোভাবে দেখুন, জানুন, বুঝুন। এককভাবে কোনোকিছু জানলাম না, বুঝলাম না, বললাম- এটা ব্যবহার করা যাবে না, এ অবস্থান থেকে একটু বেরিয়ে আসতে হবে, যোগ করেন সিইসি।

নির্বাচনে প্রযুক্তির ব্যবহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের ৯০ লাখের মতো ভোটার আছেন দেশের বাইরে; যারা ভোট দিতে পারেন না। এমন প্রযুক্তি আসবে, এখানে না এসেও তারা ভোট দিতে পারবেন। এমন প্রযুক্তি আসবে ভোট কেন্দ্রে না গিয়েও ভোট দেয়া যাবে। এমন একটা অবস্থা অনেক ক্ষেত্রে এসে গেছে বলেও জানান সিইসি।
নির্বাচনের সময়সীমা প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, জাতীয় নির্বাচন ২০১৮ সালের শেষে বা ২০১৯ সালের শুরুতে অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এ নির্বাচন স্বার্থক, গ্রহণযোগ্য করার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা, তাই এ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আপনাদের দায়িত্ব কিন্তু অনেক বড়। আপনাদের দীর্ঘদিনের নির্বাচন পরিচালনা ও নির্বাচন ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে আপনারা জানেন কোথায় কী অসুবিধা আছে। প্রশিক্ষণের সময় নিজেদের মধ্যে আলোচনা ও প্রশিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে সেই সমস্যা সমাধান করে তা কাজে লাগাবেন। সিইসি বলেন, আমাদের বলা হয় নির্বাচনী রেফারি। নির্বাচনের খেলায় বা নির্বাচনী যুদ্ধে কে জিতবে আর কে হারবে সেই ফলাফলটাই শুধু আমরা ঘোষণা করব। শৃঙ্খলার মধ্যে সুশৃঙ্খলভাবে আপনারা মাঠপর্যায়ের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন।
কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন আপনাদের (কর্মকর্তা) থেকে অনেক দূরে। সুতরাং সবকিছু আপনাদের ওপর নির্ভর করে। আপনাদের পরিশ্রম, ত্যাগ এবং কার্যক্রমের ওপরই নির্বাচন কমিশনের স্বার্থকতা নির্ভর করে। সংসদ নির্বাচনের আর বেশিদিন নেই। আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। এখন থেকে এই প্রস্তুতির প্রথম পর্ব শুরু হলো।