আইসিটি এওয়ার্ড পাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

নিউইয়র্ক আসছেন ২৩ সেপ্টেম্বর ॥ সফরসঙ্গী ৩ শতাধিক

ঠিকানা রিপোর্ট : জাতিসংঘের উন্নয়ন গোল অর্জনে জাতিসংঘ কর্তৃক আইসিটি এওয়ার্ড পাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একটি সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এ এওয়ার্ড প্রদান করা হবে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর। জাতিসংঘের ভিতরেই সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এ এওয়ার্ড প্রদান করা হবে। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়ও উপস্থিত থাকবেন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের ৭৩তম অধিবেশনে যোগদানের জন্য নিউইয়র্ক আসছেন। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ঠিকানাকে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লন্ডন থেকে নিউইয়র্ক আসবেন। তিনি বাংলাদেশ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর লন্ডন আসবেন। সেখানে ১ দিন যাত্রা বিরতির পর তিনি ২৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ যোগে দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে নিউজার্সির নিউওয়ার্ক এয়ারপোর্টে অবতরণ করবেন। সেখান থেকে তিনি ম্যাটহাটানের গ্র্যান্ডহায়াত হোটেলে উঠবেন এবং সন্ধ্যা ৭টায় হিলটন হোটেলের নাগরিক সংবর্ধনায় যোগদান করবেন। ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দেবেন বিকেল ৩টা থেকে ৫টার মধ্যে।
প্রধানমন্ত্রীর অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২৭ সেপ্টেম্বর দিনে জাতিসংঘ মহাসচিব এন্টোনিও গুতেরেজের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক করারও কথা রয়েছে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রীর একাধিক বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। যাদের মধ্যে রয়েছেন- এস্তোনিয়ার প্রেসিডেন্ট ক্রেস্টি কালিজুলেইদ এবং নেদারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট।
প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আয়োজিত সংবর্ধনায় যোগ দেবেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্টেট মাইক পম্পেও’র সঙ্গেও স্বাক্ষাৎ করবেন। ২১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট ব্রিটিশ রাজধানী লন্ডনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। একই দিনে লন্ডনের স্থানীয় সময় ৩টা ৫৫ মিনিটে বিমানটির হিথরো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের কথা রয়েছে। যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার নাজমুল কাওনাইন প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানাবেন।
ব্রিটিশ রাজধানীতে দু’দিনের যাত্রা বিরতির পর প্রধানমন্ত্রী ২৩ সেপ্টেম্বর রবিবার সকালে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটযোগে নিউইয়র্কের পথে লন্ডন ত্যাগ করবেন।
বিমানটি ঐদিনই স্থানীয় সময় ১টা ৪০ মিনিটে নিউ জার্সিও নিউইয়র্ক লিবার্টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মাদ জিয়াউদ্দিন এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানাবেন।
সফরের দ্বিতীয় দিনে তিনি জাতিসংঘ সদর দপ্তরে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী মিশনের আয়োজনে অনুষ্ঠেয় ‘গ্লোবাল কল টু অ্যাকশন অন ড্রাগ প্রবলেম’ শীর্ষক হাই লেভেল ইভেন্টে যোগদান করবেন।
প্রধানমন্ত্রী সেখানে জাতিসংঘ মহাসচিব এন্টোনিও গুতেরেজ এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জে. ট্রাম্পের সঙ্গে ফটোসেশনেও অংশগ্রহণ করবেন।
পরে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের ইকোসক চেম্বার’র (ইসিওএসওসি) ইউএন হাইকমিশনার ফর রিফ্যুজিস আয়োজিত ‘গ্লোবাল কমপ্যাক্ট অন রিফ্যুজিস: এ মডেল ফর গ্রেটার সলিডারিটি এন্ড কোঅপারেশ’ শীর্ষক হাইলেভেল ইভেন্টে অংশগ্রহণ করবেন।
প্রধানমন্ত্রী হোটেল গ্রান্ড হায়াতে যুক্তরাষ্ট্র চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত গোলটেবিল মধ্যাহ্নভোজন বৈঠকেও অংশ নেবেন।
বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সাধারণ পরিষদের সম্মেলন কক্ষে নেলসন ম্যান্ডেলা পিস সামিটেও বক্তৃতা প্রদানের কথা রয়েছে।
নিউইয়র্কের কনভেন কনফারেন্স সেন্টারে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম আয়োজিত ‘সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ইমপ্যাক্ট সামিট’-এও তাঁর যোগদান করবেন।
শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সদর দপ্তরের কনফারেন্স রুম ১১তে কানাডার প্রধানমন্ত্রী আয়োজিত মহিলা এবং নারী শিক্ষায় বিনিয়োগ সংক্রান্ত একটি গোলটেবিল আলোচনায় অংশ গ্রহণ করবেন।
তিনি জাতিসংঘের বৈশ্বিক শিক্ষা বিষয়ক বিশেষ দূতের আয়োজনে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের ৩ নম্বর কক্ষে অনুষ্ঠেয় ‘মেকিং ইমপসিবল পসিবল: আনলকিং হিউম্যান পটেনশিয়াল থ্রো দ্যা ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স ফ্যাসিলিটি ফর এডুকেশন’ শীর্ষক হাই লেভেল ইভেন্টে অংশগ্রহণ করবেন।
সন্ধ্যায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জে. ট্রাম্প আয়োজিত স্বাগত সংবর্ধনায় অংশগ্রহণ করবেন। সংবর্ধনাটি নিউইয়র্কেও লোটিস্থ নিউ ইয়র্ক প্যালেস হোটেলে অনুষ্ঠিত হবে।
শেখ হাসিনা ২৫ সেপ্টেম্বর সাইবার নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক হাই লেভেল ইভেন্টে অংশগ্রহণ করবেন। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন এবং জাতিসংঘের নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ক কার্যালয় (ইউএনওডিএ) যৌথভাবে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের ৩ নং কক্ষে এটির আয়োজন করবে।
সাধারণ পরিষদ ভবনের নর্থ ডেলিগেট লাউঞ্জে জাতিসংঘের মহাসচিব আয়োজিত মধ্যাহ্ন ভোজে যোগদান করবেন প্রধানমন্ত্রী।
বিকেলে জাতিসংঘের অছি পরিষদ আয়োজিত জাতিসংঘ মহাসচিবের হাই লেভেল ইভেন্ট ‘অ্যাকশন ফর পিস কিপিং’ (এ ফোর পি) এ অংশগ্রহণ করবেন তিনি।
২৬ সেপ্টেম্বর, ইউনিসেফ-এর নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর, ইউএন হাই কমিশনার ফর রিফ্যুজিস (ইউএনএইচসিআর) ফিলিপ্পো গ্রান্দি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতি বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি মঘেরনিনি জাতিসংঘ সদর দপ্তরের দ্বিপাক্ষিক সম্মেলন কক্ষে পৃথকভাবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
২৭ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনা সৌদি আরবের স্থায়ী মিশন এবং ওআইসি সচিবালয়ের যৌথ উদ্যোগে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের ১২ নং কক্ষে অনুষ্ঠেয় সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কিত হাইলেভেল সাইড ইভেন্টে অংশগ্রহণ করবেন।
প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ মহাসচিব এন্টোনিও গুতেরেজের সঙ্গে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে তাঁর সভাকক্ষে বৈঠক করবেন।
আন্তর্জাতিক কমিটি অব রেডক্রস (আইসিআরসি) এর প্রেসিডেন্ট পিটার মওরার-এর জাতিসংঘের দ্বিপাক্ষিক সভাকক্ষে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে।
‘নারীর ক্ষমতায়মের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি’ শীর্ষক এই উচ্চ পর্যায়ের আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন প্রধানমন্ত্রী। এটি লিথুয়ানিয়ার প্রেসিডেন্টের আয়োজনে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের ৩ নং কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রীর জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ইন্টার প্রেস সার্ভিসেস (আইপিএস) আয়োজিত সংবর্ধনাতেও যোগদানের কথা রয়েছে।
সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সাধারণ পরিষদের ৭৩ তম অধিবেশনে ভাষণ প্রদান করবেন এবং নিউইয়র্কের পার্ক এভিনিউতে গ্লোবাল হোপ কোয়ালিশন আয়োজিত বার্ষিক নৈশভোজে যোগ দেবেন।
অন্যান্য বারের মত এবারো সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ প্রদানের পরের দিন, ২৮ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের নিউইয়র্কস্থ কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে অংশগ্রহণ করবেন প্রধানমন্ত্রী।
বিকেলে শেখ হাসিনা নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইত্তেহাদ এয়ারওয়েজের একটি বিমানযোগে ঢাকার উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করবেন। তাঁর ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে আবুধাবী হয়ে দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর সাথে প্রায় ৩ শতাধিক সফরসঙ্গী রয়েছেন। যার মধ্যে রয়েছেন ২১৩ জন ব্যবসায়ী এবং ১৩০ জন প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী। যদিও ব্যবসায়ীরা নিজেদের অর্থে আসবেন বলে জানা গেছে। ড. সিদ্দিকুর রহমান জানান, প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসাবে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক এলাহি, মশিউর রহমান, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. দীপু মনি, আব্দুস সোবহান গোলাপ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদিকা ড. সাম্মি আহমেদ প্রমুখ।