আই কে গুজরাল চেয়েছিলেন মৃত্যুর আগে একটি সুন্দর পৃথিবী দেখে যেতে

শহীদুল ইসলাম তালুকদার :

ইন্দর কুমার গুজরাল (আই কে গুজরাল) ছিলেন ভারতের ১২তম প্রধানমন্ত্রী। তিনি কোন কমিউনিস্ট পার্টি বা সমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের সাথে সরাসরি জড়িত না থাকলেও মনে মনে একজন সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথের রাজনীতিবিদ ছিলেন। অর্থাৎ তিনি সমগ্র বিশ্ব একটি সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা কায়েমের পক্ষে ছিলেন। তিনি চাইতেন, সমস্ত দেশসমূহে কৃষকরাজ ও শ্রমিকরাজ কায়েম হোক। তিনি বলতেন এমএন রায়ের মতো, ভারতীয় কমিউনিস্ট নেতা, যার সঙ্গে লেনিন ও স্ট্যালিনের সাথে সরাসরি যোগাযোগ ছিল এবং অনেক কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনালে তিনি যোগদান করেছিলেন এবং কমরেড মোজাফফর আহমদের মত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নেতা ভারতে জন্মগ্রহণ করলেও এখন পর্যন্ত ভারতের গোটা ২-৩ রাজ্য ছাড়া কোথাও সমাজতন্ত্র বা সাম্যবাদী সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

আই কে গুজরালের সাথে আমার ২০০৩, ২০০৫ ও ২০০৮ সালে সর্বমোট ৩ বার দেখা হয়েছে। দীর্ঘক্ষণ মতবিনিময় করার সুযোগ হয়েছে তার সরকারি বাসভবনে। তার সাথে আমার মতবিনিময়ের ব্যাপারে পাঠকদের জানাবার আগে এই মহান ব্যক্তি সম্বন্ধে সবাইকে কিছুটা অবহিত করতে চাই।

আই কে গুজরাল ১৯১৯ সালের ৪ ডিসেম্বর অখণ্ড ভারতের ঝিলাম শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম অততার নারায়ণ গুজরাল এবং মায়ের নাম পুষ্পা গুজরাল। তিনি লাহোর সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তার বাবা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রীয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। জন্মগতভাবে তিনি তার বাবার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে মাত্র ১২ বছর বয়সে ঝিলাম ইয়ং চিল্ড্রেন সমর্থন করায় বৃটিশ পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে এবং তার উপর নির্যাতন চালায়। বৃটিশবিরোধী আন্দোলনের সাথে জড়িত থাকার ফলে ১৯৪২ সালে আবারও জেলে যেতে হয়। কিশোর বয়স থেকে স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ততা তাকে আস্তে আস্তে জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হতে অনুপ্রেরণা যোগায়। তিনি কংগ্রেসের মাধ্যমে রাজনীতিতে সক্রিয় হবার প্রয়াস পান। এরই মধ্যে তিনি পিএইচডি ও ডিলিট উপাধীতে ভূষিত হন।

১৯৭৫ সালে তিনি ইন্দিরা গান্ধী মন্ত্রীসভায় তথ্য ও সম্প্রচার বিষয়ক দফতরের দায়িত্বগ্রহণ করেন। ১২ই জুন ১৯৭৫ এলাহাবাদ হাইকোর্ট ঘোষণা করে যে, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী নির্বাচনে অসৎ উপায় অবলম্বন করেছিলেন বলে সেই নির্বাচন বাতিল ঘোষণা করা হবে। ফলে মি. গুজরাল তার মন্ত্রীত্ব হারান। পরবর্তীতে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নে ভারতের রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত হন।

১৯৮০ সালে তিনি নিজেকে কংগ্রেস রাজনীতি থেকে সরিয়ে নেন এবং জনতা দলে যোগ দেন। জনতা দল ছিল সমাজতান্ত্রিক আদর্শ ঘেঁষা একটি দল, যেটি ভারতের জাতীয় রাজনীতিতে তখন তৃতীয় অবস্থানে ছিল। ১৯৮৯ সালে তিনি পাঞ্জাবের জালান্ধার সংসদীয় এলাকা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি ভিপি সিং-এর মন্ত্রীসভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালণ করেন। তিনি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে ইরাক কর্তৃক কুয়েত আক্রমণ (১৯৯১) ও পরবর্তীকালে উপসাগরীয় যুদ্ধে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখেন।

এ সময় তিনি ভারতের প্রতিনিধি দলের প্রধান হিসেবে তৎকালীন ইরাকের রাষ্ট্রপতি সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে যুদ্ধ বন্ধ করার চেষ্টা চালান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে তিনি ‘গুজরাল ডকট্রিন’ ঘোষণা করেন, তা প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের সাথে সুসম্পর্ক রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখে। কংগ্রেস ইউএফ (ইউনাইটেড ফ্রন্ট) তার সমর্থন প্রত্যাহার করে নিলে সরকারের পতন ঘটে। তবে নতুন করে নির্বাচন না দিয়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছানোর চেষ্টা করা হয় এবং কংগ্রেস দেব গৌড়ার নেতৃত্বে আরেকটি যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠন করে। দেব গৌড়ার মন্ত্রীসভায় তিনি আবার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। এখানে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা পাঠকদের জানানোর প্রয়োজনীয়তা বোধ করছি। ইউনাইটেড ফ্রন্ট (ইউএফ)-এর সিদ্ধান্ত মোতাবেক উপমহাদেশের প্রখ্যাত কমিউনিস্ট নেতা ও পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার রাজনৈতিক দল সিপিএম-এর হঠকারী সিদ্ধান্তের ফলে তার আর প্রধানমন্ত্রী হওয়া হলো না। দেব গৌড়ার মন্ত্রীসভা বেশিদিন টেকেনি। দেব গৌড়ার মন্ত্রীসভার পতনের পর ১৯৯৭ সালের ২১ এপ্রিল মি. গুজরাল ভারতের ১২তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। তিনি ২১ এপ্রিল ১৯৯৭ থেকে ১৯ মার্চ ১৯৯৮ পর্যন্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৯৯ সালের নির্বাচনে তিনি অংশগ্রহণ করেননি এবং এই সময় তিনি সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নেন।

এবার মি. গুজরালের ব্যক্তিগত জীবন, বিশেষ করে তার স্ত্রী ও সন্তান সম্বন্ধে পাঠকদের জানাতে চাই। ১৯৪৫ সালের ১২ মে তিনি শীলা গুজরালের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। শীলা গুজরাল একজন লেখিকা, কবি ও একজন সমাজকর্মী ছিলেন। তাদের ২টি ছেলে সন্তান আছে। নরেশ গুজরাল ও ভিশাল গুজরাল। নরেশ গুজরাল আকালী দলের একজন নেতা ও রাজ্যসভা সদস্য। আই কে গুজরালের ছোটভাই স্মতিষ গুজরাল ভারতের একজন বিখ্যাত পেইন্টার ছিলেন। তিনি ভারতের দ্বিতীয় সিভিল অ্যাওয়ার্ড পদ্মবিভূষণে ভূষিত হন।

এবার আমি মি. গুজরালের সাথে আমার মিলিত হওয়া ও মতবিনিময় করার কিছু স্মৃতি রোমন্থন করতে চাই। আমি তার সাথে ৩ বার, অর্থাৎ ২০০৩, ২০০৫ ও ২০০৮ সালে মিলিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। ২০০৩ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে আমি দিল্লীতে তার একান্ত সচিব বালকিসান মাসুন-এর সাথে অ্যাপায়েমেন্টের জন্য কথা বলি। তিনি পরামর্শ দেন ই-মেইলের মাধ্যমে রিকোয়েস্ট পাঠাতে। আমি যথারীতি ই-মেইল পাঠালাম। ২দিন পরে তার জবাবে মি. বালকিশান জানুয়ারির ২য় সপ্তাহের একদিন, বিকেল ৫টার দিকে তাঁর সাথে দেখা করার সময় সম্বন্ধে জানালেন। আমিরাত এয়ারযোগে যথাসময়ে দুবাই হয়ে দিল্লী পৌঁছলাম। আমি ২দিন একটু আরাম করলাম, ভ্রমণ-জনিত দুর্বলতা কাটাবার জন্য।

নির্ধারিত দিনে ৪টা ৪৫ মিনিটে আমি আই কে গুজরালের সরকারি বাসভবনে পৌঁছলাম। ৫ একরের উপরে বিশাল ভবন! দুটি আলাদা স্ক্যানারে আমার হ্যান্ডব্যাগ, ওয়ালেট, চাবিসহ প্রতিটি জিনিসের স্ক্যানিং করা হলো। এরপরে মি. গুজরালের একজন অফিস সহকারী প্রথমে তার ব্যক্তিগত সচিবের অফিস হয়ে আমাকে তার বসার ঘরে বসাল। ঠিক ৫ মিনিট পরে ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মি. আই কে গুজরাল তার বসার ঘরে এসে আমার সাথে করমর্দন করে আমাকে বসতে বললেন এবং তার সহকারীকে চা-নাস্তা দিতে বললেন। উনি আমাকে আমার সফর কেমন ছিল, নিউইয়র্কে কোথায় থাকি, বাংলাদেশে কোথায় বাড়ি, নিউইয়র্কে কত বছর আছিÑ ইত্যাদি জানতে চাইলেন। আমি তার সব কথার জবাব দিয়ে তাকে অনুরোধ করলাম তার রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন সময়ের অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করার জন্য। তিনি বললেন, আমি মহাত্মা গান্ধী থেকে শুরু করে জওহরলাল নেহেরু, মওলানা আবুল কালাম আজাদ, সরদার বল্লভ ভাই প্যাটেল, মোরারজী দেশাই, জগজীবন রাম, চরণ শিং, মিসেস ইন্দিরা গান্ধী, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু, দেবী লালসহ কংগ্রেসের সমস্ত বড় নেতাদের সাথে একসাথে রাজনীতি করেছি।

তিনি আরো বললেন, মহাত্মাজী রাজনীতিতে একদম সহজ-সরল ছিলেন না। তিনি ও নেহেরু মিলে নেতাজী সুভাষ বোসকে ভালভাবে রাজনীতি করতে দেননি। তাছাড়া মওলানা আজাদের মতো নেতা, যিনি একটানা ১০ বছর কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন, তারই ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথা ছিল। গান্ধীজির কূটচালে তিনি তা হতে পারেননি।

গান্ধীজি নেহেরুর ব্যাপারে গর্ব করে বলতেন, ও হ্যারোর ছেলে, কংগ্রেসের রাজনীতিতে ওর মত যোগ্য কেউ নেই।
উল্লেখ্য হ্যারো (Herrow) বৃটেনে ঐ সময়ের শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল। ঐ স্কুলে ৭ জন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী পড়াশুনা করেছেন। তাদের মধ্যে উইন্সটন চার্চিল, স্ট্যানলি বন্ডউইন, রবার্ট পিল প্রমুখ। পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু সেই স্কুলের ছাত্র হয়ে সমগ্র ভারতবর্ষের মুখোজ্জ্বল করেছেন। তিনি মওলানা আবুল কালাম আজাদের খুবই প্রশংসা করেন। মওলানা আজাদ কখনো কাউকে বিশেষ পাত্তা দিতেন না। তিনি কখনো ফরমালিটিস মেনটেইন করতেন না। উদাহণস্বরূপ, গান্ধীজি ধূমপান পছন্দ করতেন না। কিন্তু মওলানা আজাদ তার সামনেই প্রকাশ্যে সিগারেট টানতেন। কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির সভায় মওলানা আজাদের সিদ্ধান্তই বেশিরভাগ সময় মেনে নেয়া হতো। তার মত ইন্টেলেকচ্যুয়াল লিডার ভারতে তেমন জন্ম নেয়নি।

তিনি নেহেরুর কামরাজ প্ল্যানকেও সমর্থন করেননি। নেহেরুর মৃত্যুর পরে সিনিয়রিটির দিক দিয়ে মোরারজী দেশাইয়ের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তথাকথিত কামরাজ প্ল্যানের জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি। নেহেরুর মৃত্যুর পর অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী বানানো হন গুলজারীলাল নন্দাকে। মাত্র কয়েকদিনের জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী হন লালবাহাদুর শাস্ত্রী। ১৯৬৬ সালে তাসখন্দে তার মৃত্যুর পরে আবার গুলজারীলাল নন্দাকে কয়েকদিনের জন্য প্রধানমন্ত্রী করা হয়। এবারও মোরারজী দেশাইকে প্রধানমন্ত্রী হতে দেয়া হয়নি। প্রধানমন্ত্রী বানানো হয় ইন্দিরা গান্ধীকে।

পাঠক যদি মোরারাজী দেশাইয়ের লেখা একটি বই The story of my life যদি পড়েন, তাহলে এই অনিয়মগুলো সম্বন্ধে জানতে পারবেন। বইটি ৩টি খণ্ডে বিভক্ত। তাছাড়া মওলানা আবুল কালাম আজাদের লেখা India wins freedom বইটিতেও অনেক পুরনো খবর আছে।

কাশ্মীর প্রসঙ্গে মি. গুজরাল বলেন, কাশ্মীর পাকিস্তানের অংশ হওয়ার পুরোপুরি সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু নেহেরুর চালাকি ও শেখ আব্দুল্লাহর বোকামীর জন্য জম্মু কাশ্মীরের জন্ম হয়েছে এবং পাকিস্তান কাশ্মীরের একটি ছোট অংশ অর্থাৎ আজাদ কাশ্মীরই পেয়েছে, তাই বিবাদ লেগেই আছে।

মি. গুজরাল বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতার জন্য পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলির অনেক সমালোচনা করেন। তিনি ভারত ও তার প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের পারমাণবিক প্রতিযোগিতাকে বিলাসিতা বলে মনে করেন।
তিনি বলেন, ভারত ও পাকিস্তানকে প্রথমে তাদের নিজ নিজ দেশের গরীব ও অভুক্ত মানুষদের পেটে খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, জাতিসংঘ একটি অগণতান্ত্রিক সংস্থা। তার কারণ, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে কোন বিল পাশ হলে যা পৃথিবীর অনেক মানুষের জন্য মঙ্গলজনক, সেই বিল ইচ্ছে করলে পাঁচটি দেশের যেকোন একটি দেশ, যাদের ভেটো প্রয়োগ করার ক্ষমতা আছে, তা বাতিল করে দিতে পারে।

তিনি বলেন, UNO, EU, G8, ASGAN, SAARC, NAM, OIC প্রভৃতি আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ গরীব দেশগুলোর কোন সমস্যার সমাধান করতে পারে না। তাই তৃতীয় বিশ্বের গরীব দেশগুলোকে কোন আন্তর্জাতিক মুরব্বী ছাড়া একটি শক্তিশালী জোট গঠন করতে হবে।

মি. গুজরাল উর্দূ ভাষায় বেশ পারদর্শী ছিলেন। তিনি তার অবসর সময়ে উর্দূ কবিতা লিখতেন। কথায় কথায় উর্দূ কবি আল্লামা ইকবাল, ফার্সী কবি শেখ সাদী, ওমর খৈয়ামদের কবিতা শোনালেন আমাকে তার হিন্দি অনুবাদসহ।
মি. গুজরালের সাথে আমার প্রথম দেখা ছিল এটা।

২০০৫ সালের মিটিংটাকে স্কিপ করে আমি ২০০৮ সালের মিটিং সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু লিখে এ লেখা শেষ করবো। ২০০৮ সালে মি. গুজরানের সাথে আমার মিটিংয়ের সময় ছিল সকাল ১১টায়। খুব সকালে মি. গুজরালের ব্যক্তিগত সচিব মি. বালকিশান আমাকে ফোন করে জানালেন যে, মি. গুজরালের স্ত্রীর ভাইয়ের মৃত্যু হওয়ার তার আন্তোষ্টিক্রিয়ার অংশগ্রহণ করার জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ক্যান্সেল করতে হবে।

আমি কংগ্রেস নেতা ও প্রাক্তন রেলওয়ে মন্ত্রী সৈয়দ জাফর শরীফের সাথে দুপুর ১টায় দেখা করলাম এবং দক্ষিণ এশিয়া ও উপমহাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় করলাম। সন্ধ্যার দিকে আমি মি. বালকিশানের ফোন পেলাম। তিনি জানতে চাইলেন, আগামীকাল বিকেল পাঁচটায় আমি আসতে পারব কিনা। আমি রাজি হয়ে যথারীতি তার সাথে দেখা করলাম। অনেক কথা হলো তার সাথে, তা লিখে লেখা আর বড় করতে চাই না। ২০০৮ সালে মি. গুজরালের বয়স ছিল ৮৯ বছর। তিনি আমাকে তার লেখা একটা বই দিলেন। ২০১১ সালে তা স্ত্রী মারা যায়। তার ঠিক ১ বছর পরে ২০১২ সালের ৩০ নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মি. গুজরালের মৃত্যুর আগে একটি সুন্দর পৃথিবী দেখে যাওয়ার আশা পোষণ করতেন। তার জীবদ্দশায় তা হলো না, কিন্তু সবাই আশা করে একটি শোষণহীন সমাজব্যবস্থা ও সুন্দর পৃথিবীর।

লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা; নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা সাউথ এশিয়া ওয়াচের মহাসচিব; এশিয়ান-আমেরিকান ডেমোক্র্যাটিক সোসাইটির কো-চেয়ারম্যান এবং ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কমিটি সদস্য (ডিএনসি)।