আগুন সন্ত্রাস করে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা ঠেকানোর কোন সুযোগ নাই

সামছুদ্দীন আজাদ :

বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে এক অনন্য উদাহরণ। তৃতীয় বিশ্বের দেশ হলেও নিম্ন আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের তালিকায় বাংলাদেশ উঠে এসেছে। ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ একটি উন্নত, সমৃদ্ধ, ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরিত হওয়া এখন সময়ের ব্যাপারমাত্র। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে যে অভাবনীয় উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে, তা এখন দৃশ্যমান। এটি এখন আর কোন কল্পকাহিনী নয়। এমন উন্নয়ন বাংলাদেশে আর কারো পক্ষে কোনদিন সম্ভব হবে না, ভবিষ্যতেও হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ অতীতে যারা ক্ষমতায় এসেছিল- তাদের ক্ষমতার আসার ইতিহাস হলো রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস সৃষ্টি করে ক্ষমতা দখল করা, এরপর লুটপাট, হত্যা-ধর্ষণ, জঙ্গিবাদ কায়েম এবং সর্বশেষ সংযোজন ছিল আগুন-সন্ত্রাস করে সারা দেশব্যাপী একযোগে অগ্নিসংযোগ করা। বাস-ট্রেনে পেট্রোল বোমা মেরে ঘুমন্ত যাত্রীদের জীবন্ত দ্বগ্ধ করার মত নৃশংস বর্বরতার ইতিহাস। আর বঙ্গবন্ধু-কন্যা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অভূতপূর্ব নজীর স্থাপন করে দেশে করেছেন উন্নয়ন, দূর করেছেন দীর্ঘস্থায়ী অভাব-মঙ্গা। জীবনযাত্রার মনোন্নয়ন করেছেন সাধারণ মানুষের। বাংলাদেশ থেকে অভাব শব্দটি অনেকটা যাদুঘরে পৌঁছে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

দেশের ১৮ কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন। একই সাথে ১১ লক্ষ রোহিঙ্গাকে ২০১৭ সাল থেকে খাদ্য নিরাপত্তা, চিকিৎসা নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য সেবা এবং সামাজিক নিরাপত্তা দিয়ে বিশ্বের ইতিহাসে মানবতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সময়মত ঋণের শর্তপূরণ করে যথাসময়ে সেই ঋণ পরিশোধ করে বিশ্বের বিভিন্ন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার আস্থা অর্জনে যেমন সক্ষমতা দেখিয়েছেন, তেমনি সমানতালে দেশের মেগা প্রকল্পসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নও তিনি সারা দেশব্যাপী একযোগে করে যাচ্ছেন।

স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশকে বিশ্ব ব্যাংকের সবচেয়ে বেশি ঋণ দেয়ার কারণ জানতে চাইলে সংস্থাটির পক্ষে জানানো হয়, বাংলাদেশের শক্তিশালী সামষ্টিক অর্থনীতি, শক্তিশালী ঋণ ব্যবস্থাপনা এবং ঋণ ফেরৎ দেয়ার সক্ষমতা- এসব মিলেই বাংলাদেশ দাতাদের আস্থা অর্জন করেছে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক আন্তর্জাতিক এই সংস্থার তথ্যানুযায়ী, গত তিন দশকের মধ্যে বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের ঋণ ৫০০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। ১৯৯২ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ঋণ দিয়েছিল ৪ বিলিয়ন ডলারেরও কম। ২০০২ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত যা ছিল প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার।

এরপর গত ১০ বছরে সেই ঋণ ১৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। বর্তমানে বাংলাদেশের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পে সংস্থাটির অর্থায়ন প্রায় ১৪.৫০ বিলিয়ন ডলার। আর স্বাধীনতার পর থেকে মোট ৩৫ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে, যা অন্য উন্নয়ন সহযোগী বা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর মধ্যে অনুদান, সুদহীন ঋণ এবং সবচেয়ে কম সুদের ঋণ রয়েছে।

সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের এমডি ও ৪ জন প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। তারা বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে সরকারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও সম্ভাবনার কথা জানতে চেয়েছেন। এরপর তারা সরাসরি সাংবাদিক সম্মেলন করে তাদের আগ্রহের কথা বলেছেন। বাংলাদেশের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতার বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন এবং সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণ মঞ্জুর করেছন। যা কিনা এ যাবৎকালের সর্ববৃহৎ অংকের ঋণ বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে পেলো। যার প্রথম কিস্তিও এই ফেব্রুয়ারিতেই পাওয়ার ব্যাপারে বিশ্ব ব্যাংকে ইতিমধ্যে নিশ্চিত করেছে। বাংলাদেশের বিরোধীদল বিএনপি-জামায়াত এবং তাদের দেশিয় কুশীলবরা গাছে পাকা কাঁঠা দেখে গোঁফে তেল মাখছিল- বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ হবে, মানুষ খাদ্যভাবে মারা যাবে- এই শঙ্কায় সাধারণ মানুষ রাস্তায় নামবে, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করবে এমন প্রত্যাশায়। তার মনে বাংলাদেশ শ্রীলংকা হবে, আর তখনই বিএনপির মত সন্ত্রাসী সংগঠনের নেতাদের জন্য সোনালি সুযোগ তৈরি হবে রাতারাতি ক্ষমতা দখল করার।

গত ১৬ ফেব্রুয়ারি আমি বাংলাদেশ ঘুরে এলাম। ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের অনেক এলাকা আমি স্বচক্ষে দেখে এসেছি নিজের কৌতুহল থেকে উন্নয়ন দেখতে। এমন উন্নয়ন দেশে চলছে, যা স্বচক্ষে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না!

আমি প্রথমে চট্টগ্রামের উন্নয়নের কথাই বলি। চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে উড়াল সেতু, এক্সপ্রেস ওয়ে নির্মাণাধীন। চট্টগ্রাম শহর থেকে বন্দর হয়ে বিমান বন্দর পর্যন্ত যে উড়াল সেতু হচ্ছে, তা প্রায় শেষ পর্যায়ে। এটি সংযোগ হয়েছে কর্ণফুলী ট্যানেলের সাথে। এরপর চট্টগ্রাম বন্দর বে-টার্মিনাল হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডের সাথে সংযুক্ত হয়েছে রিভার ড্রাইভ, যা কর্ণফুলী নদীর কূল ঘেঁষে গড়ে তোলা হয়েছে নিউইয়র্কের For Drive-এর আদলে। এমন সুন্দর নয়নাভিরাম দৃশ্য কল্পনার জগৎকেও হার মানায়। এই রাস্তা দিয়ে চট্টগ্রাম হযরত শাহ আমানত বিমান বন্দর থেকে বের হয়ে শহরের দিকে আসার সময় চোখ পড়বে চট্টগ্রাম বন্দরের নজরকাড়া দৃশ্য। এই বন্দরে কত শত শত জাহাজ প্রতিদিন মালামাল খালাস করছে। দেশি-বিদেশি মালবাহী পণ্য আনা-নেয়া করছে- নোঙ্গর করা জাহাজ এবং মালামাল খালাস করা জাহাজের আনাগোনা দেখলেই বোঝা যায় চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা আর দেশের অর্থনীতির উন্নয়নের চিত্র।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিশাল বিশাল ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ফলে সড়ক যোগাযোগে যুগান্তকারী উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। ঢাকার মোট্রোরেল, শাহজালাল বিমান বন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের সাথে সংযুক্ত উড়াল সেতুর নয়নাভিরাম দৃশ্য আমাদের মনে করিয়ে দেয় জননেত্রী শেখ হাসিনার অন্যান্য দেশপ্রেমের কথা। সাহসিকতার কথা। শেখ হাসিনার দেশ পরিচালনার সক্ষমতার কথা।

ভেবেছিলাম ঠিকানার প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর এইদিনে বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে বিশাল এক গবেষণামূলক প্রতিবেদন তৈরি করে পাঠাবো। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে সেটি আর হয়ে উঠেনি, আমি বাংলাদেশ থেকে ফিরেছি মাত্র ১৬ ফেব্রুয়ারি। এর মধ্যে শহীদুল ভাইয়ের টেলিফোনÑ লেখা দিতে হবে, যত ছোট করে সম্ভব। তার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ঠিকানার প্রতি মমত্ববোধের কারণে খুব তড়িঘড়ি করে আজকের লেখা। লিখলাম ঠিকানার ৩৪ বছরের পথচলার সারথী হয়ে। ঠিকানার সফলতা, একইভাবে এম এম শাহীন ভাইয়ের সফলতা কামনা করছি।

লেখক : সহ-সভাপতি, যুক্তরাষ্ট্র আ.লীগ।