আজি হতে শতবর্ষ পরে

মুহম্মদ ফজলুর রহমান

‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে/মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই।’ মানুষের এ বাসনা চিরকালের। মানুষের জীবন খুবই সংক্ষিপ্ত। এই সংক্ষিপ্ত জীবন নিয়েই মানুষ অনেক কিছু হতে চায়। কেউ ছুঁতে চায় আকাশ। কেউ জয় করতে চায় পাতাল। কেউ চাঁদ জয় করে এখন পৌঁছতে চায় মঙ্গলে। কেউ মরেও অমর হয়ে থাকতে চায় মানুষের মনে, সুকীর্তি ও সুকর্ম দিয়ে। কেউ স্বপ্ন পূরণে সফল হয়, কেউ হয় না।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কী হতে চান? তিনি বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। বাংলাদেশের প্রাচীনতম এবং সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দীর্ঘকালীন সভাপতি। বাংলাদেশের রাজনীতিতে সফলতম রাজনীতিবিদ। চারবারের প্রধানমন্ত্রী। টানা তিনবার। ২০১৮’র ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদের সর্বশেষ যে একাদশতম নির্বাচন, আওয়ামী লীগের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপিকে সেই নির্বাচনে একেবারে তলানিতে ডুবিয়ে বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসে বৃহত্তম বিজয় অর্জন-৩০০ আসনের ২৮৮টি লাভ। রাজনৈতিক নেতৃত্ব, ভোট, সংসদে আসন লাভ-সবই রেকর্ড। এরপর কি তিনি অমরত্ব লাভের বর চাইবেন?
সব বাঙালির মনোজগতে অমরত্বের বীজমন্ত্র বপন করে দিয়ে গিয়েছেন আরেক অমরত্বের বরপুত্র বাঙালি কবি নোবেলজয়ী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি নিজে সেই অমরত্বের স্বপ্ন নিয়ে রচনা করেছেন ১৪০০ সাল কবিতা। যার মধ্যে ব্যক্ত হয়েছে অমরত্বের বাসনা। সেই সঙ্গে সব বাঙালির মনোভূমেও বুনে দিয়েছেন অমরত্ব প্রাপ্তির স্বপ্ন।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার অমর কবিতা ‘১৪০০ সাল’-এ ব্যক্ত করলেন :
‘আজি হতে শতবর্ষ পরে
কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতা খানি
কৌতূহল ভরে,
আজি হতে শতবর্ষ পরে!’…
কিংবা-
‘আজিকার বসন্তের আনন্দ-অভিবাদন
পাঠায়ে দিলাম তাঁর করে।
আমার বসন্তগান তোমার বসন্তদিনে
ধ্বনিত হউক ক্ষণতরে-
হৃদয়স্পন্দনে তব, ভ্রমর গুঞ্জনে নব,
পল্লবমর্মরে
আজি হতে শতবর্ষ পরে ॥’
১৪০০ সাল নামে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এ কবিতাটি লিখেছিলেন ২ ফাল্গুন ১৩০২ সনে। প্রায় সোয়া শ বছর আগে। কবিতাটিতে কবিগুরুর একটি আকাক্সক্ষা, একটি স্বপ্ন প্রকাশ পেয়েছে। সেই স্বপ্নটি হচ্ছে-শত বছর পরেও তিনি তাঁর কবিতায় বেঁচে থাকবেন। শত বছর পরের কাব্যানুরাগীরা কৌতূহল নিয়ে তাঁর কবিতা পাঠ করবেন। কবিগুরুর ‘বসন্ত দিনের গান’ শতবর্ষ পরের পাঠকের বসন্ত দিনে ধ্বনিত হবে হৃদয়স্পন্দনে। অর্থাৎ কবির মনে অমরত্ব প্রাপ্তির বাসনা। কবিগুরুর মর্মবাসনা পূর্ণ হয়েছে।
আমাদের মনেই হয় না ১২৪ বছর আগে কবি তাঁর অমরত্বের এই বাসনা ব্যক্ত করে গেছেন। মনে হয় কবি আজও বর্তমান তাঁর গানে, কবিতায়, গল্পে, নাটকে, গীতিকাব্যে, গীতিনাট্যে, উপন্যাসে। বাংলা সাহিত্যের সর্বশাখায়। বাঙালি মানসের এমন কোনো আবেগ, কোনো তাড়না নেই, যা তিনি ব্যক্ত করে যেতে পারেননি তাঁর সৃষ্টিতে। তিনি তাঁর সৃষ্টিকে ষোলোকলায় পূর্ণতা দিয়ে আজও তাই অমরত্বের বরপুত্র।
মানুষ হিসেবে এ নশ্বর পৃথিবীতে খুব কম মানুষেরই অমরত্বের বাসনা পূর্ণ হয়। পূর্ণ হয় কেবল তাঁদেরই, যাঁরা নিজেদের উৎসর্গ করেন ‘সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে মোরা পরের তরে।’
সেই সুকীর্তি এবং সুকর্ম মানুষকে অমরত্ব দান করে, যা মানবজাতিকে সব ধরনের শৃঙ্খল থেকে মুক্তির পথ দেখায়। যা সমগ্র মানবকুলের কল্যাণ সাধন করে। এবং মানবধর্মই শ্রেষ্ঠ ধর্মÑএ শিক্ষা দান করে। এই বিবেচনা থেকে যদি বিচার করতে যাওয়া যায়, তবে বর্তমান বিশ্বে যে প্রায় ৭০০ কোটি মানুষ রয়েছেন এবং যারা গত হয়েছেন, তার মধ্যে কজনকে আমরা অমরত্বের আশীর্বাদে ধন্য মনে করতে পারি, তাদের কীর্তি ও কর্ম বিবেচনায়। কবি, সাহিত্যিক, রাজনীতিক, বিজ্ঞানী, সমাজ সংস্কারকÑসবাইকে সামনে নিয়ে যদি আমরা অমরত্বের বরপুত্র খুঁজতে যাই, তবে কজনকে সেই কাতারে রাখতে পারি? শেক্্সপিয়ার, শেলি, কিটস, বায়রন, জর্জ ওয়াশিংটন, বাট্রান্ড রাসেল, জাঁ পল সাঁত্রে, ভ্যান ঘগ, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি, পাবলো পিকাসো, কার্ল মার্ক্স, লেনিন, আব্রাহাম লিঙ্কন, রুশো, প্লেটো, অ্যারিস্টটল, সক্রেটিস, বিশ্বকবি রবি ঠাকুর, যুগাবতার রামকৃষ্ণ, স্বামী বিবেকানন্দ, রাজা রামমোহন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মহাত্মা গান্ধী, বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, নিউটন, আইনস্টাইন, মাদার তেরেসা-এরপর? আচ্ছা এর সঙ্গে যদি আরও ২০-২৫ জনকে যোগ করে নেওয়া যায়-তা-ই বা কতজন?
না, ধর্মীয় নেতাদের বক্ষ্যমান এ নিবন্ধের বাইরে রেখেই আলোচনা করছি। কেননা নবী-রাসুল, দেব-দেবী, যিশুখ্রিষ্ট-তাঁরা সবাই ধর্মবিশ্বাসের সঙ্গে জড়িত। মানবিক ভুল-ত্রুটির ঊর্ধ্বে। এক্ষেত্রে ধর্মবিশ্বাসী মানুষদের বিশ্বাস এবং ধারণা পাল্টানোর সুযোগ নেই। দোষ-ত্রুটি এবং মানবিক সীমাবদ্ধতার মানুষ হিসেবে আলোচনা-সমালোচনা নিয়েও যাঁরা নিজেদের মহত্তর কর্ম ও গুণে অমরত্বের বর লাভ করেছেন কেবল তাঁদের কথাই বলার চেষ্টা এখানে। কবির কবিতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়। শিল্পীর শিল্পকর্মের প্রশংসা হয়, নিন্দাও হয়। গায়কের গান, অভিনেতার অভিনয়, বিজ্ঞানীর আবিষ্কার, রাজনীতিবিদের সুশাসন-অপশাসন, ব্যবসায়ীর নীতি-নৈতিকতা নিয়ে নানাভাবে মানুষ কথা বলে। এই সাধারণ মানুষের মধ্য থেকেই কিছু মানুষ কর্মে ও কৃতিত্বে অসাধারণ হয়ে যান। পরবর্তীকালে এবং আগামী প্রজন্মের জন্য তারা এমন কিছু কর্ম রেখে যান, এমন কিছু পথ দেখিয়ে যান, যে কর্ম ও পথ মানবজাতির জন্য অকল্পনীয় সম্পদ হয়ে থাকে। যা ধরে চললে মানুষ অসীম কল্যাণ অর্জনে সক্ষম হয় এবং ঐসব অসাধারণ মানুষও যুগ থেকে যুগান্তরে বেঁচে থাকেন।
কথা হচ্ছিল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে নিয়ে।
না, শেখ হাসিনাকে কোনোভাবেই তাঁর পিতা, বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের যিনি প্রশ্নাতীত নেতা, বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সঙ্গে তুলনা করা যাবে না। যদিও এবার ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে তিনি ১৯৭০-এর নির্বাচনে তাঁর পিতার মতোই ভূমিধস বিজয় অর্জন করেছেন। যদিও তিনি গত ১৯ জানুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে তাঁর নির্বাচনী বিজয় উৎসব উদযাপনে পিতা বঙ্গবন্ধু যেমন বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন ১৯৭১-এর ৭ মার্চ এই রেসকোর্স ময়দানেই, ঠিক অনুরূপ তিনিও লক্ষ জনতার সামনে বাঙালি জাতিকে দুর্নীতিমুক্ত সুশাসনের এক নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছেন। পিতা শেখ মুজিব যেমন সেই ঐতিহাসিক মহাসমাবেশে বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’, কন্যা শেখ হাসিনাও পিতার রক্তের ঋণ শোধ করতে পিতার দেওয়া স্বাধীন বাংলাদেশকে সন্ত্রাস-দুর্নীতিমুক্তির ঘোষণা দিয়েছেন। ঘোষণা দিয়েছেন সুশাসন, ন্যায়বিচার এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার।
শেখ হাসিনা খুব স্পষ্ট করে বলেছেন, বর্তমানে উন্নয়নের যে চলমান ধারা, তা কেবল অব্যাহত রাখলেই হবে না, একে আরও বেগবান করতে হবে। আরও প্রসারিত, জীবনমান উন্নয়নে আরও সহায়ক করে তুলতে হবে। আরও ঊর্ধ্বগামী করে তুলতে হবে। এবং কোনো সিদ্ধান্তই জনস্বার্থের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারবে না। কোনো কিছু বাড়াবাড়ি করে, জোর খাটিয়ে নয়, জনগণ পছন্দ করে না, তেমন কিছু করে নয়। রাষ্ট্রশক্তি, দলীয় শক্তির অপব্যবহার করে নয়। রাষ্ট্রশক্তি, দলের শক্তি, সর্বস্তরে মেধা, প্রজ্ঞা, প্রয়াস কাজে লাগাতে হবে মানব কল্যাণে, উন্নয়নে, সুখ ও সমৃদ্ধি অর্জনে। ব্যক্তির স্বার্থ ভুলে যেতে হবে। সমষ্টির স্বার্থ, সমষ্টির কল্যাণের মধ্যে নিজের স্বার্থ, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ দেখতে হবে। এই নতুন বাংলাদেশ এবং সুশাসন ও সমৃদ্ধির বাংলাদেশের সুখী, তৃপ্ত মানুষের হৃদয় সিংহাসনেই অমরত্ব পাবেন শেখ হাসিনা। আর নেতৃত্বে যে ক্যারিশমা, যা দিয়ে তিনি আজ বিশ্ববাসীর দৃষ্টিতে এক অনুসরণীয় নেতা, সেই গুণ ও গরিমা তাকে বিশ্ব মাঝেও অমরত্বের আসন দান করবে। বিশ্ব চিন্তাবিদ, বিশ্ব রাষ্ট্রনায়কদের মধ্যে আজ তিনি অন্যতম শীর্ষ আসনে। এই সম্মান ও মর্যাদাই শতবর্ষ পরে হলেও তাঁকে বাঁচিয়ে রাখবে।
বাঙালিদের মুখে একটি প্রবাদ প্রায়ই শোভা পায় : ‘বৃক্ষের পরিচয় তার ফলে।’ বৃক্ষের অবশ্যই ফলে পরিচয় মেলে। তেমনি কর্মসূচি কতটা কল্যাণদায়ী, জনবান্ধব তার পরিচয় মেলে সাফল্যে। বিড়াল সাদা না কালো-সেটা বড় কথা নয়, বিড়াল ইঁদুর মারছে কি না-সেটাই বিবেচ্য। আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ঘোষণা, তাঁর অঙ্গীকার বাস্তবায়নের মাধ্যমে পরিচয় দেবেন তিনি কাজে বিশ্বাস করেন।
এ প্রসঙ্গে আরও কিছু কথা বলার জন্য একটু পেছনে ফিরে তাকালে, কেন তাঁর কর্মে ও কথায় আস্থা রাখা যায়, তা অনুধাবন করা যাবে। ১৯৮০’র ১৭ মে শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের জন্য খুবই কঠিন একটা সময়ে, নির্বাসিত জীবন শেষ করে বাংলাদেশে ফিরে এলেন, প্রবল বর্ষণমুখর দিনে। তাঁকে বরণ করে নিতে মঞ্চ সাজানো হলো মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে। যে দেশটি স্বাধীন হয়েছে তাঁরই পিতার নেতত্বে, সেই দেশে পিতা নেই, মাতা নেই। ভাই, আত্মীয়স্বজন নেই। স্বাধীন বাংলাদেশকে ফের পাকিস্তান বানানোর স্বপ্ন নিয়ে স্বদেশের দুধ-কলায় বড় হওয়া একদল কালনাগ হত্যা করেছে সবাইকে! সেই দুঃসময়ে তিনি কিছুতেই শোকের ভার বহন করতে পারতেন না। কথা ছাপিয়ে যেত কান্নায়।
সে সময় স্বাধীন বাংলাদেশ এবং জাতির পিতার অনেক সমালোচক চরম নিষ্ঠুরতার পরিচয় দিয়ে কঠোর ভাষায় বলতেন, যিনি নিজেকে সামলাতে পারেন না, তিনি দল সামলাবেন কী করে। দেশকেই-বা নেতৃত্ব দেবেন কীভাবে। আজ বাস্তবে কী দেখতে পাচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ এবং বিশ্ববাসী। দলের অবস্থানই আজ বলে দেয় শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগকে এ সময়ের উপযুক্ত করে কতটা সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করে গড়ে তুলেছেন। আওয়ামী লীগ এমন একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে গড়ে উঠেছে, যা সব রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম। প্রতিপক্ষের রাজনীতি, আন্দোলন, প্রতিবাদ-বিক্ষোভ রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক সবভাবেই মোকাবিলা করার সামর্থ্য রাখে। আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়ানোর সক্ষমতা তারা আজ খুব ভালোই রাখে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু স্বপ্নই দেখাননি, স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে মানুষের আশা ও আস্থারও জন্ম দিয়েছেন। দ্বাবিংশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে শতবর্ষ পরে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের মতোই যাতে তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকতে পারেন, তাঁর চতুর্থবারের প্রধানমন্ত্রিত্বে সেই প্রস্তুতিই লক্ষ করা যাচ্ছে। তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেই ক্ষ্যান্ত হননি; তিনি ১৯ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের বিজয় সমাবেশে যেসব কথা বলেছেন তাও প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, দলমত-নির্বিশেষে সকলের জন্য তাঁর সরকার। বলেছেন, ‘জনগণের সরকার জনগণকে নিয়েই চলবে।’ আমরা সবাই জানি, জনগণের সঙ্গে চলা মানে জনগণের মূল্যবোধ, প্রত্যাশা ও স্বপ্নকে মূল্য দেওয়া এবং বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য কাজ করা। তিনি সেটাই করতে চান।
সে কথায় বিশ্বাস রেখেই হয়তো শেখ হাসিনা এবারের বিজয়কে বিন¤্র ভালোবাসা গ্রহণ করে ভোটের মর্যাদা রক্ষার কথা বলেছেন। তিনি জনগণের জন্য বাসযোগ্য, উন্নত এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। অনেকেই অনেক রকম সমালোচনা করতে চান। ঘুষ-দুর্নীতির বিষয়ে জিরো টলারেন্সের ঘোষণায় অনেকের মুখে অবিশ্বাসের হাসি চওড়া হতে দেখা যায়। তবে দেশ ও মানুষের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দায়বদ্ধতা, ভালোবাসা, দরদ এবং সকলের সুখ, সমৃদ্ধি, উন্নতির জন্য আন্তরিক প্রয়াসের অভাব আছে মনে করা যাবে না। গতকাল সূর্য মেঘে ঢাকা ছিল বলে আগামীকাল সূর্য হাসবে না-এ কথা যেমন বলা যাবে না, তেমনি কালকের বাংলাদেশ যে আগামীকাল বদলে যাবে না, সে কথাও বিশ্বাস না করার কোনো কারণ নেই।
অমরত্ব লাভের স্বপ্ন মানুষকে অনেক কিছু করতে ভেতর থেকে প্রেরণা জোগায়। শেখ হাসিনার মেধা-প্রজ্ঞা, মানুষের প্রতি দরদ-ভালোবাসা, মানবিকবোধের সঙ্গে অতি সম্প্রতি বিশ্বের ১০০ জন চিন্তাবিদের একজন হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি তাঁকে অমরত্বের পথে এগিয়ে দেবে।
শুধু সমালোচনা করার জন্য যারা সমালোচনা করেন, তাদের সমালোচনা কোনো দিন কোনো পরিস্থিতিতেই বন্ধ হবে না। এই অন্ধ সমালোচকরা যাদের প্রতিপক্ষ মনে করেন অথবা যাদের দেখতে পারেন না, তাদের সময়ে সূর্য উঠলেও বলতে চায় : ‘ওটা সূর্য কে বলে, ওটা তো অন্ধকারের পি-।’ তেমনি নতুন মন্ত্রীদের নিয়েও অনেকে অনেক কথা বলার চেষ্টা করছেন। এরাই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে শেখ হাসিনার কান্না দেখে বলেছিলেন, ‘চোখের জল দিয়ে তিনি দেশকে কি উদ্ধার করবেন?’ ১৯৯৬-এ দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগের প্রথম সরকার নিয়েও এসব সমালোচক বলেছিলেন, ‘এইসব অনভিজ্ঞ, অর্বাচীন মন্ত্রীদের দিয়ে দেশকে কী উপহার দেবেন?’ কিন্তু শেখ হাসিনা সমালোচকদের মুখে ছাই দিয়ে ঠিকই এগিয়ে গেছেন!
এবার চতুর্থবারের মতো যে সরকার গঠন করেছেন, সেই সরকার নিয়েও অনেক সমালোচনা শোনা যাচ্ছে। অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, এই নবাগতদের পক্ষে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স অঙ্গীকার বাস্তবায়ন এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। মনে রাখা দরকার, এরা যেমন নতুন, তেমনি আবার নতুনও নয়। এ কথা ভুললে চলবে না যে, তারা মন্ত্রী নতুন কিন্তু রাজনীতিবিদ পুরনো। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ। অনেক চড়াই-উতরাই করে, উপনিবেশবাদ, কর্তৃত্ববাদ, দখলদার, একনায়ক, স্বৈরাচারী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রামে পোড় খাওয়া। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের ইতিহাস রয়েছে তাদের।
হ্যাঁ, এ কথা অস্বীকার করা যাবে না, যে দায়িত্ব জাতির হয়ে শেখ হাসিনা নতুন মন্ত্রীদের ওপর অর্পণ করেছেন, তাতে সাফল্য অর্জন অবশ্যই কঠিন এক চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ সামনে রেখেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের আগামীর বাংলাদেশের নেতৃত্বদানের উপযুক্ত করে গড়ে তোলার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন নিজে। শেখ হাসিনার প্রতি যে জন-আস্থা একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রকাশ পেয়েছে, সেই আস্থাই তাঁকে সাহস জুগিয়েছে এভাবে লক্ষ্য অর্জনের পথে এগিয়ে যাওয়ার। এই নতুনেরাই আগামী দিনে স্বপ্নের বাংলাদেশকে বাস্তবে রূপ দেবেন। এরাই হবেন আগামী শতাব্দীর নেতৃত্ব সৃষ্টির ‘ট্রেন্ড সেন্টার।’ এ শতাব্দী পরে যারা বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবেন, তারা তাদের পূর্বপুরুষ, যারা তাদের জন্য স্বাধীনতাকে নিরঙ্কুশ করে দিয়ে গেছেন, তাদের কথা বলবেন। মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধাদের কথা বলবেন। যারা মা, মাটি ও মানুষের জন্য নিজেদের উৎসর্গ করেছেন, আব্রু হারিয়েছেন, তাদের কথা বলবেন। পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করবেন মহান সেই নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যিনি তাঁর মেধা, প্রজ্ঞা, জ্ঞানগরিমা, ভালোবাসা, জীবন-যৌবন সব বিলিয়ে দিয়েছেন দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য। মুখে রাখবেন জয় বাংলা স্লোগান, হৃদয়ে ধারণ করবেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শ। অনাগত শতাব্দীতে বাংলাদেশ হবে এমন একটি দেশ, যেখানে দলের নাম যা-ই হোক, নেতা যিনিই হোন, দলের আদর্শ হবে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, নেতার চেতনা হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।
তবে এত বড় দায়িত্ব, এত বড় চ্যালেঞ্জ ¯্রফে কথা দিয়ে কিংবা কেবল পবিত্র আকাক্সক্ষা দিয়ে মোকাবিলা করা যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের, স্বাধীনতার বিরোধিতা যখন আজও হয় স্বাধীন বাংলাদেশে, তখন আগামীতে এই বিরোধিতা থাকবে না, তা ভাবার অবকাশ নেই। তবে সেই বিরোধিতা মোকাবিলা করার জন্য নেতৃত্বকে প্রথম নৈতিক শক্তি অর্জন করতে হবে। কথামালার রাজনীতি দিয়ে মানুষকে ভোলানো যেতে পারে, কিন্তু আশা মেটানো এবং স্বপ্নপূরণ করা যায় না। ভালো কাজ আসলে বাস্তবে করে দেখাতে হয়।
বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা প্রতিপক্ষের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক দুর্বলতা, যা ১৬ কোটি মানুষের একটি দেশকে এগিয়ে নিতে অক্ষম, যথার্থভাবে তুলে ধরতে পেরেছেন। পাশাপাশি দেশের উন্নয়নকে দৃশ্যমান করে তুলে তাঁর নেতৃত্বের সক্ষমতাও প্রমাণ করতে পেরেছেন। জনগণ তাঁর কথা ও কাজ দুটিই গ্রহণ করেছে। সবাই বেশ অনুধাবন করছে, চতুর্থ মেয়াদের শেখ হাসিনা আর পঞ্চমবারের জন্য ক্ষমতার চিন্তা না করে দেশকে কীভাবে আগামী শতাব্দীতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বাসযোগ্য করে তুলবেন, তাই ব্যক্ত করেছেন ২০১৯ সালের জানুয়ারির ২৬ তারিখে জাতির উদ্দেশে প্রথম ভাষণে, কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতা উদ্ধৃত করে। এ কথা ঠিক যে চারদিকে যত আবর্জনা জমে উঠেছে, তা যেমন একদিনে কেবল কথায় সাফ হবে না, তেমনি তা সাফ করতে গিয়ে কোনো চক্রের কোন স্বার্থে আঘাত লাগে এবং তারা ৭৫-এর মতো কোন চক্রান্ত শুরু করে, সেটাও চিন্তা করতে হবে।
সম্ভবত আগামীতে যেসব চ্যালেঞ্জ আসবে, তা সামাল দিয়ে দেশকে আগামী প্রজন্মের বাসযোগ্য করে গড়ে তোলা এবং দলের ভেতরে ও বাইরে ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত মোকাবিলা করে দেশ পরিচালনার ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব প্রস্তুত করতেই বর্তমান সময়ের এই মন্ত্রিসভা। বাঙালি জাতি নিশ্চয় ইতিহাসের এই সত্য বিস্মৃত হয়নি যে পাকিস্তান সৃষ্টিতে যে নেতা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তিনি তাঁর একার জন্য হলেও স্বাধীন পাকিস্তান চেয়েছিলেন। বাঙালির যিনি নেতা, তিনি সব বাঙালির মুক্তির জন্য স্বাধীন বাংলাদেশ চেয়েছিলেন। এই সত্যটি, তাঁরই রক্তের ধারা বহনকারী নিজ কন্যা-আজকের বিশ্বনন্দিত রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা নিশ্চয় আর ১০ জন জ্ঞানী-গুণী প-িতের চেয়ে ভালোই বুঝতে পারেন। সামনে আসছে আরও আধুনিক সময়। আরও বিজ্ঞাননির্ভর সভ্যতা। তাকে উপলব্ধি করতে হবে, ধারণ করতে হবে এবং জনগণমন অধিনায়ক হয়ে দেশ ও জাতিকে নেতৃত্ব দিতে হবে। তরুণ প্রজন্মের জন্য তিনি হবেন সর্বশ্রেষ্ঠ ও বিশ্বাসযোগ্য প্রশিক্ষক। তিনিই নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বকে নিজে শিক্ষা দেবেন প্রকৃত সাম্যের, অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল বাংলাদেশ গড়ে তোলার শিক্ষা। ধনী-গরিব, কৃষক-শ্রমিক, ছাত্র-শিক্ষক, আমলা-কর্মচারী, সামরিক-অসামরিক, শিশু-বৃদ্ধ, নারী-পুরুষের মিলিত শ্রমে ও মেধায় বাসযোগ্য বাংলাদেশ গড়ে সবাই মিলে তা ভোগ করার শিক্ষাও তিনিই দেবেন।
তবে দ্বাবিংশ শতকের উপযোগী বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে শেখ হাসিনার কেবল স্বপ্ন দেখা এবং নেতৃত্বদানই যথেষ্ট হবেÑএমনটা ভাবলে হবে না। ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জে সাফল্য দেখিয়ে অনাগতকালের জনগণ-নায়ক হতে হলে ভবিষ্যতের উপযোগী যেমন একটা টিম গঠন করতে হবে, তেমনি সফল হতে হবে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের যা খুশি তা-ই করে পার পাওয়ার প্রবণতা নিয়ন্ত্রণে। ওরা তারুণ্য তেজে উদ্দীপ্ত। ওরা মানে নাকো কোনো বাধা। ওরা নিষেধ অমান্য করে আনন্দ পায়, বিজয়ী ভাবে। ওরা মানতে চায় না কোনো আইন। নিষেধের প্রতি আকর্ষণ ওদের দুর্বার। যা আশা ও আশঙ্কার দুই-ই। এই শক্তিকে মানাতে হবে শেখ হাসিনাকেই।
একটি স্বাধীন ও অগ্রসরমান দেশে বিরোধী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ভূমিকাও বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের অভিযাত্রায় তাদের অংশগ্রহণ থাকতে হবে। বিরোধী দল কেবলই বিরোধী দল নয়। তারা রাজনীতি, রাষ্ট্র, সরকার, গণতন্ত্র ও উন্নয়নের অংশ। শুধু বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করে নিজেদের রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন শেষ হবে না। সভ্যতার বয়স বাড়ছে, সময় পাল্টাচ্ছে। রাজনীতির চরিত্র-বৈশিষ্ট্য পাল্টাচ্ছে। সনাতন রাজনীতি অচল হয়ে পড়ছে। সরকারবিরোধী সবার পরস্পর সহযোগিতায় রাজনীতি এগোবে, দেশ অগ্রসর হবে। উন্নয়ন নিশ্চিত হবে। গণতন্ত্রের ভিত মজবুত হবে। সময়ের দাবি অস্বীকার করে চলতে চাইলেই চলা যাবে না। তাতে ক্ষতি নিজেদের, ক্ষতি সরকার, দেশ ও গণতন্ত্রের। উন্নয়ন, অগ্রসরমানতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জনগণের নামে রাজনীতি করে জনগণের রায়, জনগণের স্বার্থের বিপরীতে দাঁড়িয়ে রাজনীতি করলে জনগণ তাদের মনে রাখে না। এক্ষেত্রে সরকারকেও যতটা জায়গা ছেড়ে দেওয়া দরকার, ততটা ছাড়তে হবে। বিরোধীদের পজিটিভ রাজনীতি করতে হবে। জনগণের রায়কে সম্মান জানাতে সংখ্যায় যা-ই হোক, সংসদে যোগ দিয়ে ভূমিকা রাখা দরকার। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি সংখ্যা বিবেচনা না করে সবাইকে কথা বলার স্বাধীনতা দেবেন।
সামনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। তিনি সব বাঙালির। আসুন, সবাই মিলে সেই শুভ দিনটি উদ্্যাপন করি। সামনে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। স্বাধীনতাও আমাদের সবার, যারা আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী এবং স্বাধীনতার আদর্শ ও চেতনা লালন করি। আসুন, সবাই মিলেই এগিয়ে যাই। পা রাখি আগামীর বাংলাদেশে, যেখানে আমাদের উত্তর-প্রজন্ম গাইবে আজকের রাষ্ট্রনায়কদের প্রশংসা-গীত। গাইবে একবিংশ শতকের বাঙালিদের বিজয় অর্জনের বীরত্বগাথা। মুক্তিযুদ্ধের গান। আজ যারা দেশের জন্য কাজ করবেন, দেশের মানুষের কল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করবেন, তারাই লাভ করবেন অমরত্বের বর।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনী প্রচারণায় যা বলেছেন, নির্বাচনে বিজয়ের পর বিজয় উৎসবে, জাতির উদ্দেশে ভাষণে, মন্ত্রিপরিষদের প্রথম সভায় এবং সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনেও তাঁর একই কথার প্রতিধ্বনি শুনতে পেরেছে জাতি। শেখ হাসিনা খুব স্পষ্ট ও বিশ্বাসযোগ্যতার সঙ্গে কঠোরভাবেই বলেছেন দুর্নীতি, সন্ত্রাস, অনিয়ম, নৈরাজ্যকে সহ্য করা হবে না। এসবের বিরুদ্ধে তিনি জিরো টলারেন্স দেখাবেন। যেকোনো মূল্যে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে যুবশক্তির বেকারত্ব দূর করবেন। উন্নয়ন, অগ্রগতি ও গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখবেন। এসব অঙ্গীকার ও ঘোষণা বাস্তবায়নে শুরু থেকেই তাঁর মধ্যে আন্তরিকতা ও সততা লক্ষ করা যাচ্ছে। তবে শেষ পর্যন্ত তা রক্ষা করতে হবে। সবাই আমরা জানি, ভালো কাজ শুরু করার চেয়ে শেষ করা কঠিন। এ জন্য আবার বাইরের তৎপরতার চেয়ে ভেতরের অর্থাৎ মানসিক দৃঢ়তা ও মানবিক প্রবৃত্তি জরুরি। আরও একটি কথা, মহান মানবিক এবং উত্তর-প্রজন্মের কাছে আদর্শ ও স্মরণীয় হয়ে থাকার জন্য প্রথমে নিজের চারপাশটা পরিষ্কার করতে হবে সর্বোচ্চ কঠোরতার সঙ্গে। যাদের বঙ্গবন্ধু বলেছেন ‘চাটার দল’ এবং শেখ হাসিনা নিজে যাদের ‘কেনা যায়’ বলে উল্লেখ করেছেন, তাদের থেকে নিজেকে এবং জাতিকে মুক্ত করতে হবে। এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যুগ থেকে যুগান্তরে স্মরণীয়-বরণীয় এবং অনুসরণীয় হয়ে থাকার একমাত্র পথ হবে দল-মত-ধর্ম-সম্প্রদায় নির্বিশেষে সবার প্রতি সমান ভালোবাসা ও কঠোরতা প্রদর্শন। তাঁকে কর্মে প্রমাণ করতে হবে-তিনি সবার প্রধানমন্ত্রী।
সেই ব্যক্তিই সর্বযুগে মহান মানুষ, যিনি সর্ব বিচারে, কর্মে ও কীর্তিতে মহান। বাংলাদেশে দুটি স্মরণীয় যুগ, একটি যুগের গৌরব নিয়ে আছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এ যুগের গৌরব নিয়ে আগামীর ইতিহাস বন্দনা করবে শেখ হাসিনার। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে দিয়ে গেছেন স্বাধীনতা। তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা যদি বাঙালির ঘরে ঘরে সেই স্বাধীনতার সুফল নিশ্চিত করতে পারেন এবং বাঙালিরা বিশ্বাস করেন তিনি পারবেন, তবে ‘আজিকার বসন্ত দিনে’র গান নিশ্চয় করে বলা যায়, ‘সেদিনের বসন্ত দিনে’ নবসুরে গীত হবে।
প্রধান সম্পাদক, ঠিকানা।
৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯।