প্রণবকান্তি দেব : একজন আনোয়ারুজ্জামান এখন ‘টক অব দ্যা সিলেট সিটি’। আসন্ন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হচ্ছেন তিনি- এ খবর চাউর হওয়ার সাথে সাথে সিলেটের রাজনৈতিক মহলে বইছে অন্যরকম হাওয়া। পাল্টে গেছে অনেক হিসেব-নিকেশ। যদিও এখনো চূড়ান্ত হয়নি
কিছুই তবু আনোয়ারুজ্জামানের সমর্থকেরা বলছেন, ‘এটাই ফাইনাল, অপেক্ষা শুধু সময়ের’। আবার কেউ বলেছেন ‘উড়ো’ খবর, কারও মতে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পেয়েছেন তিনি। কিন্তু খবর যাই হোক, সিলেটের আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বিষয়টি জন্ম দিয়েছে নানা আলোচনার। বিশেষ করে এতোদিন ধরে যাদের নাম শোনা গিয়েছিল প্রার্থী হিসেবে তারাও হতবাক, নিশ্চুপ। গুঞ্জন, আলোচনা বলয়ে বলয়ে।
এই আলোচনার মধ্যেই গত রবিবার সিলেটে এসে পৌঁছেছেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। আর এতেই সিলেট আওয়ামী লীগের রাজনীতি হয়ে উঠেছে সরগরম। দেশে ফিরে তিনি সাংবাদিকদের জানান, ‘আমি সিলেটের সন্তান। বিগত সংসদ নির্বাচনে আমি সিলেট-১ আসনের দলীয় প্রার্থী ড. এ কে আবদুল মোমেন ও সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের জন্য সরাসরি মাঠে এসে কাজ করেছি। প্রতিটি ওয়ার্ডে গণসংযোগে অংশ নিয়েছি। নির্বাচন নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমি এই শহরেই বড় হয়েছি, পড়ালেখা করেছি। তাই সিলেট নগরীর মানুষ আমার আপনজন। দল যাকে মনোনয়ন দেবে তাকে নিয়েই আমরা কাজ করবো সবাই।’ মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আনোয়ারুজ্জামান বলেন, ‘মেয়র মনোনয়ন নিয়ে দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি এখনো। তাই এখনো বলার কিছু নেই। প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছেন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে একজন কর্মী হিসেবে কাজ করতে চাই। মনোনয়নের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত দেবেন মাথা পেতে নেব সেটা।’ প্রবাসীদের জন্য কাজ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করে আনোয়ারুজ্জামান বলেন, ‘সিলেটের অসংখ্য প্রবাসী যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকেন। তাদের অনেক সমস্যা। তাদের সমস্যা সমাধানে কাজ করতে চাই আমি।’ শোনা যাচ্ছে, সিলেট সিটি কর্পোরেশনে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে পছন্দ করেছেন শেখ হাসিনা নিজেই। জানা যায়, সিলেটের একজন বর্ষীয়ান নারী নেত্রী ও সাবেক এমপির সাথে সম্প্রতি টুঙ্গীপাড়ায় ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় শেখ হাসিনা নিজেই এমন আগ্রহের কথা প্রকাশ করেছেন।
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ছাত্র জীবন থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। কলেজ জীবনে তিনি বালাগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সমাজসেবা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সক্রিয় নেতা ছিলেন তিনি। এরপর তিনি যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। সেখানে গিয়েও আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী থেমে থাকেননি। সেখানে প্রথমে তিনি যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এরপর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। বর্তমানে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরেই নিজ এলাকা সিলেট-২ আসনে প্রার্থী হতে তৎপর ছিলেন। জাতীয় সংসদ থেকে স্থানীয় সরকার সব নির্বাচনকালে ছুটে এসেছেন দেশে। দলীয় প্রার্থীর পক্ষে মাঠে সরব থাকতে দেখা গেছে তাকে। বিশেষ করে সিলেট-১ ও সিলেট-৩ আসন, সিলেট জেলা পরিষদ ও ওসমানীনগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিজয়ে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। নৌকার বিজয় নিশ্চিতে দিনরাত খেটেছেন তিনি। এ কারণে শুধু বিশ্বনাথ, বালাগঞ্জ কিংবা ওসমানীনগরেই নয়, সিলেট সদর ও সিলেট সিটি করপোরেশন এবং ফেঞ্চুগঞ্জে দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে আলাদা গুরুত্ব রয়েছে তাঁর। অনেকেই ইতোমধ্যে তাঁকে খেতাব দিয়েছেন ‘ম্যাজিক ম্যান’ হিসেবে। সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার সন্তান আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী স্থানীয়ভাবে মাঠের রাজনীতিতে সরাসরি না থাকলেও মেকানিজমের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরেই সক্রিয়। এদিকে সিসিকের সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই। নির্বাচিত পরিষদের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় ওই বছরের ৭ নভেম্বর। হিসেব অনুসারে সিসিক নির্বাচনের সময় গণনা শুরু হবে চলতি বছরের ৬ মে। আর ভোটগ্রহণ করতে হবে ৫ নভেম্বরের মধ্যে।
বিগত দুটি নির্বাচনে প্রয়াত বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের পরাজয়ের পর এবারের নির্বাচনে প্রার্থীতা নিয়ে ছিল জোর আলোচনা। তালিকায় বেশ কিছু নাম ঘুরেফিরে আলোচনায় এসেছে। এরমধ্যে আছে বদর উদ্দিন কামরানের রানিংমেট হিসেবে থাকা আসাদ উদ্দিন আহমদ, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন এবং মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক চারবারের সিটি কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদের নাম। অন্যদিকে, বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে রাজনীতিতে আসা আরমান আহমদ শিপলুকেও অনেকেই লিস্টে রেখেছিলেন। কিন্তু সকল হিসাবে নাড়া দিয়েছে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর নাম।