আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস আজ

শতভাগ সাক্ষরতা অর্জনে এখনও অনেক পেছনে বাংলাদেশ

ঠিকানা অনলাইন : আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস আজ ৮ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার)। সারাবিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশেও প্রতিবছর দিবসটি পালন করা হয়। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘সাক্ষরতা শিখন ক্ষেত্রের প্রসার’। সাক্ষরতা বিস্তারে আন্তর্জাতিক ফোরামের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো সাক্ষরতা দিবস পালিত হয়।

২০০৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ঘোষণা ছিল ২০১৪ সালের মধ্যে দেশ থেকে নিরক্ষরতা দূর করা হবে। ক্ষমতায় আরোহণ করেছে দলটি। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের পর আরও আট বছর পেরিয়ে গেছে, সে প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে সাক্ষরতার হার ৭৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ। অর্থাৎ এখনো দেশে ২৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ মানুষ নিরক্ষর। এবারের প্রতিপাদ্য ‘সাক্ষরতা শিখন ক্ষেত্রের প্রসার’। নানা আয়োজনে দেশে দিবসটি পালনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে সাক্ষরতার হার ছিল ৭৩ দশমিক ৯ শতাংশ, ২০১৯ সালে ৭৪ দশমিক ৭ শতাংশ, ২০২০ সালে ছিল ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০২১ সালেও সাক্ষরতার হার একই ছিল। তবে চলতি বছরের ২৭ জুলাই প্রকাশিত জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২-এর প্রাথমিক ফলাফলে বাংলাদেশে মোট (পুরুষ ও মহিলা) সাক্ষরতার হার (সাত বছর ও তদূর্ধ্ব) ৭৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ। যদিও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, বর্তমানে সাক্ষরতার হার ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশ। আর বৃদ্ধির ধীরগতির বিষয়টি বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশকে শতভাগ নিরক্ষরমুক্ত করতে অন্তত আরও ২৭ বছর লাগবে।

অন্যদিকে বেসরকারি সংস্থা গণসাক্ষরতা অভিযান ২০১৬ সালে সাক্ষরতার হার নিয়ে সর্বশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। সেখানে সাক্ষরতার হার দেখানো হয়, ৫১ দশমিক ৩ শতাংশ। তারা দেখিয়েছিল, বছরে মাত্র ০ দশমিক ৭ শতাংশ বাড়ে সাক্ষরতার হার। অগ্রগতি যদি এই হারে চলতে থাকে তাহলে সাক্ষরতা দক্ষতার প্রাথমিক স্তরে পৌঁছতেই বাংলাদেশের সব নাগরিকের আরও ৪৪ বছর এবং অগ্রসর পর্যায়ে উন্নীত হতে আরও ৭৮ বছর লাগবে। যদিও এ বিষয়টির ওপর আর কোনো জরিপ করেনি সংস্থাটি।

২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করতে হলে দেশকে নিরক্ষরমুক্ত করতে হবে। কিন্তু যে গতিতে সাক্ষরতা কার্যক্রম চলছে তাতে এই সময়ের মধ্যে প্রকৃত অর্থেই দেশ নিরক্ষরমুক্ত হবে না। এমন আশঙ্কাই করা হয়েছে। তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আমিনুল ইসলাম খান বলেন, আমরা ২০৩০ সালের মধ্যেই দেশকে শতভাগ নিরক্ষরমুক্ত করতে পারব।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাক্ষরতার সংজ্ঞার কারণে সাক্ষরতার হারেও তারতম্য হয়। আন্তর্জাতিক সংজ্ঞানুযায়ী, সাক্ষরতা হচ্ছে পড়া, অনুধাবন করা, মৌখিকভাবে এবং লিখার বিভিন্ন পদ্ধতিতে ব্যাখ্যা করা, যোগাযোগ স্থাপন করা এবং গণনা করার দক্ষতা। সাক্ষরতা সম্পন্ন এক জন ব্যক্তি বাংলাদেশের পঞ্চম শ্রেণি পাশ করা শিক্ষার্থীর সমমানের হতে হবে বলে মানদণ্ড নির্ধারণ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে সিনিয়র সচিব আমিনুল ইসলাম খান বলেন, দেশে এখানো সাক্ষরতার কোনো রূপরেখা তৈরি করা হয়নি। কতটুক শিখলে সাক্ষরতা জ্ঞান অর্জন হবে তার একটি রূপরেখা করা হবে। দেশে ৪ কোটি মানুষের বেশি যারা এখনো সাক্ষরতার বাইরে রয়েছে। তাদের এর আওতায় আনা হবে।

গতকাল এক অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেন, এখনো ২৪ শতাংশের বেশি মানুষ সাক্ষরতার বাইরে। তাদের সাক্ষরতার আওতায় আনতে নানা ধরনের কর্মসূচি হাতে নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে দেশের ৬৪ জেলার নির্বাচিত ২৪৮টি উপজেলার ১৫ থেকে ৪৫ বয়সি ৪৪ লাখ ৬০ হাজার নিরক্ষরকে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মাধ্যমে মৌলিক সাক্ষরতা জ্ঞান দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে পিইডিবি-৪ প্রকল্পের আওতায় স্কুল থেকে ঝরে পড়া ও স্কুলে যায়নি এমন ৬ লাখ শিক্ষার্থীদের মৌখিক শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। এরপর তাদের হাতে কলমে কাজের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

গণসাক্ষরতা অভিযানের উপ-পরিচালক কে এম এনামুল হক বলেন, বর্তমানে সাক্ষরতার হার বাড়ানোর মূল উৎস আনুষ্ঠানিক শিক্ষা। আর অন্য কোনো ধরনের কার্যক্রম নেই বললেই চলে। এখন খুবই প্রয়োজন বেসিক লিটারেসি প্রোগ্রাম, সেকেন্ড চান্স এডুকেশন প্রোগ্রাম এবং এনজিও পরিচালিত উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা। এছাড়া ডিজিটাল লিটারেসি লার্নিং স্পেসও বাড়াতে হবে।

উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মু. নুরুজ্জামান শরীফ সাংবাদিকদের বলেছেন, এতদিন আমাদের কাজগুলো ছিল মূলত এনজিওনির্ভর। এখন আমরা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কাজ করতে চাই। এজন্য প্রত্যেক উপজেলায় আমাদের তিন জন নিজস্ব জনবল নিয়োগের পরিকল্পনা প্রায় চূড়ান্ত। তবে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে শতভাগ নিরক্ষরমুক্ত করতে হলে আরও বড় ধরনের পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে।

প্রাথমিক শিক্ষা বিশেষজ্ঞ মাছুম বিল্লাহ মনে করেন, সময় লাগলেও রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে নিরক্ষরমুক্ত দেশ গড়া সম্ভব। সে লক্ষ্যে নানামুখী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও সে অনুযায়ী বাস্তবায়ন করতে হবে।

এদিকে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস উপলক্ষ্যে প্রাথমিক এবং গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় মহাখালীর উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো (বিএনএফই) অডিটোরিয়ামে আলোচনাসভার আয়োজন করেছে। আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। প্রসঙ্গত, ১৯৬৫ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেসকো ৮ সেপ্টেম্বরকে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।

ঠিকানা/এসআর