
নিজস্ব প্রতিনিধি : জুলাই মাসকে সামনে রেখে চূড়ান্ত আন্দোলনের পরিকল্পনা করছে বিএনপি। তবে চলমান কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলন জমে গেলে যেকোনো সময় নেতাকর্মীদের মাঠে নামানো হবে। এর মধ্যে দলের কিছু শীর্ষ নেতা আটক হলেও তাতে বিচলিত না হতে হাইকমান্ড থেকে বার্তা দেওয়া হয়েছে। এবার শুধু কেন্দ্রীয় নেতাদের দিয়েই আন্দোলন নির্ভর করা হচ্ছে না, আন্দোলনের জন্য এবার ভিন্ন ছক করা হচ্ছে। ভরসা রাখা হয়েছে তৃণমূলের ওপর।
বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, এবার আর কোনো কিছুতেই নীরবতা বজায় রেখে চলা হবে না। খুন-খারাবি, হামলা-মামলা, গ্রেপ্তার-নির্যাতন সবকিছুরই তীব্র প্রতিবাদ জানানো হবে। দলীয় সকল কর্মসূচিতে নির্ভয়ে সামনের সারিতে থাকবেন নেতারা। বিএনপিকে নানা ষড়যন্ত্র করে ভোটে নিতে চেষ্টা করলেও সরকার সফল হবে না। দলের শীর্ষ কিছু নেতা সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে চলে শেষ বেলায় সবকিছু ভেস্তে দেন। তাদের চিহ্নিত করা হলেও ভোটের আগে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সম্প্রতি আন্দোলনের যে ফর্মুলা দিয়েছেন, সেই আলোকেই দল এগিয়ে যাবে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূলের অভিযোগ ছিল ঢাকা ও মহানগরগুলোতে আন্দোলন হয়নি। সেই অভিযোগের কারণ জেনে সমাধানও দিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এবার বিএনপি শুধু হাইকমান্ডের ওপর ভরসা করে চলবে না। এ জন্য তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিজেই কথা বলছেন। গতানুগতিক কর্মসূচি পালন করে চূড়ান্তভাবে মাঠে নামা হবে। রাজপথের আন্দোলনে অভিজ্ঞ এমন দুই ডজন নেতা সম্প্রতি লন্ডনে গিয়ে তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এসেছেন। তাদের সবাইকে দেওয়া হয়েছে আন্দোলনের বার্তা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য নেতারা হলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ও মিডিয়া সেলের সদস্যসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, মানবাধিকার-বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. আসাদুজ্জামান, প্রশিক্ষণ-বিষয়ক সহসম্পাদক ও মিডিয়া সেলের সদস্য অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ কাইয়ুম, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির বর্তমান সদস্যসচিব আমিনুল হক, ঢাকা দক্ষিণের বিএনপির মেয়র প্রার্থী ও মহানগরীর সদস্য প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন।
দলটির নেতাকর্মীরা বলছেন, বিএনপি যখন আন্দোলনে নানা কর্মসূচি দিয়ে সরব হয়ে উঠছে, তখন সরকার ফের পুরোনো কৌশলে কঠোর হয়ে উঠছে। নেতাকর্মীদের নামে মামলা দিচ্ছে, গ্রেপ্তার করছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে। বেশ পুরোনো মামলা নিয়েও অভিযান চালাচ্ছে। মূলত, আন্দোলন দমাতে সরকার ভয় দেখাচ্ছে। তবে তারা এবার ভয় পাবেন না। প্রথম সারির সব নেতাকে আটক করা হলেও মধ্যম সারির নেতাদের দিয়েই আন্দোলন সফল করা হবে। লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এমনই নির্দেশনা দিয়েছেন। দল থেকে মেসেজ দেওয়া হয়েছে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী আন্দোলনের মতো যদি এবারও বিএনপি ব্যর্থ হয়, তাহলে অস্তিত্ব হুমকিতে পড়বে দল। পুরোনো সব মামলায় নেতাকর্মীদের আটক করা হবে, সাজা দেওয়া হবে। নিজদের অস্তিত্ব ও দেশের মানুষকে মুক্তি দিতে যেকোনো পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে হবে।
এদিকে বিএনপির কঠোর আন্দোলনের বার্তা শুধু সরকার ও রাজনৈতিক মাঠেই নয়, কূটনৈতিক দপ্তরেও রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এ জন্য রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে থাকা মার্কিন নাগরিকদের সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরার পরামর্শ দিয়েছে ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস। ‘ডেমোনেস্ট্রেশন অ্যালার্ট’ শিরোনামে প্রচারিত ওই সতর্কবার্তায় বলা হয়, বাংলাদেশের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন ২০২৪ সালের জানুয়ারির আগে বা তার মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর সমাবেশ এবং অন্যান্য নির্বাচন-সম্পর্কিত কার্যক্রম এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। সাধারণ নির্বাচনের সময়ক্ষণ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক সমাবেশ এবং বিক্ষোভের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান হারে বাড়তে পারে এবং এগুলোর গতি তীব্রতর হতে পারে। সম্ভাব্য পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশে থাকা মার্কিন নাগরিকদের আগাম সতর্কতা অনুশীলন করাতে হবে।
সার্বিক বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আবারও একতরফা নির্বাচন করার লক্ষ্যে দেশজুড়ে মিথ্যা ও গায়েবি মামলার হিড়িক পড়েছে। ১৫ বছর ধরে শেখ হাসিনার নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হচ্ছে গণতন্ত্রকামী হাজার হাজার মানুষ। বিএনপির কেন্দ্রঘোষিত চলমান কর্মসূচি বানচাল করতে সরকার মামলা, মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার ও নির্বিচারে গুলি চালিয়ে অসংখ্য মানুষকে হত্যা, অন্ধ ও পঙ্গু করে যাচ্ছে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্যসচিব রফিকুল আলম মজনুকে নিজ বাসভবন থেকে তুলে নিয়ে গেছে গোয়েন্দা পুলিশ। আমরা হুঁশিয়ার করে বলছি, এবার আর জনগণ এই সরকারের নিপীড়ন সহ্য করবে না। শিগগিরই সরকারকে মসনদ থেকে টেনে নামানো হবে।