ঠিকানা রিপোর্ট : ‘আমি যেন কোনো সুবিধাবাদের কাছে আত্মসমর্পণ না করি। সৎভাবে যেন মানুষের উপকারের চেষ্টা করতে পারি। আপনাদের দেয়া এ সম্মান যেন প্রেরণা হিসেবে কাজ করে। এবং মানুষের সেবায় জীবনের শেষদিন পর্যন্ত নিজেকে যেন ব্যাপৃত রাখতে পারি। সে শুভেচ্ছা যেন আমাকে আপনারা প্রতিনিয়ত করেন।’ গত ১৫ এপ্রিল জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকা আয়োজিত মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর যোদ্ধা, বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের সাংবাদিকতা, সামাজিক রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পথিকৃৎ সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবী তবারক হোসেইনের সম্মানে সৌজন্য সভা ও সাংবাদিক ইব্রাহিম চৌধুরী খোকনের স্মৃতিতে ও সংবাদে গ্রন্থের পাঠ উন্মোচন অনুষ্ঠানে তবারক হোসেইন এ কথাগুলো বলেন। এসোসিয়েশনের সভাপতি বদরুল হোসেন খান সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি জুয়েল চৌধুরী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। সততা, অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রথম সোপান উল্লেখ করে তবারক হোসেইন বলেন, নিজ এলাকা বড়লেখা শাহবাজপুরের তৃতীয় অথবা চতুর্থ শ্রেণির যখন ছাত্র সে সময় সিলেটে শিক্ষকের ডাস্টারের আঘাতে একজন ছাত্রের মৃত্যু হয়। সে ঘটনায় বিচার না হওয়ায় সমস্ত সিলেটজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। সে সময় পার্শ্ববর্তী একটি এলাকায় একটি জুনিয়র হাইস্কুল ছিল। সে স্কুলের ছাত্ররা বিচারের দাবিতে মিছিল বের করে এবং বিচার চাই, বিচার চাই বলে দাবি তুলে। আমি সেটি দেখি এবং মিছিলে শরিক হই। সে থেকে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রথম সোপান হিসেবে ১৯৬২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তৎকালীন শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে রাজনীতির হাতেখড়ি।
সাংবাদিককতার ব্যাপারে তিনি বলেন, আন্দোলনকে সংগঠিত, প্রতিবাদ, বিক্ষোভ, সমাবেশের খবর বিভিন্ন প্রত্রিকায় লিখে প্রেরণ করতাম। লেখাগুলো ছাপাতো। ১৯৬২ সালে সেসব সংবাদ প্রকাশিত হয় তাকেই তিনি নিজের প্রথম প্রকাশিত প্রথম সংবাদ হিসেবে উল্লেখ করেন। তবারক হোসেইন বলেন, রাজনীতির সাথে সংবাদপত্রে মানুষের কথা বলার পাশাপাশি দুটি কাজে তিনি আত্মনিয়োগ করেন। পূর্বের রাজনীতি ও বর্তমান রাজনীতির তুলনামূলক আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, সে সময় কর্মীদেরকে ন্যায়, নিষ্ঠা, সততার পরামর্শ দেয়া হতো। বর্তমানে সেটা বদলে গেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেখানে একটি কথা প্রচলিত রয়েছে, দুই দলে ষাট ভাগ ও ৪০ ভাগ। সে সময় ভাগাভাগির কথা চিন্তা করা যেত না। সে সময় আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে অনেকেই রাজনীতিতে এসেছেন। দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটের একটি চিত্র তুলে ধরে বলেন, ভুয়া মুক্তিযুদ্ধের সনদ দেখিয়ে সচিবরা চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধি করেছেন। সে তথ্য ধরা পড়ার পরও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয় না। বলা হয় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পরও সে ব্যবস্থা তুলে নিয়ে অভিযোগ মিথ্যা প্রচার করে তাকে আবার ফুলের মালা দিয়ে ফিরিয়ে নেয়া হয়। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর যেখানে অভিযোগের কথা বলেছেন, সেকথা পত্রিকা মিডিয়ায় এসেছে। কীভাবে সেটা মিথ্যা বলে খ-ন করা হয়।
অনুষ্ঠানে একজন বক্তার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তবারক হোসেইন বলেন, আমেরিকার গণতন্ত্র ঋড়ৎ ঃযব ঢ়বড়ঢ়ষব একটা ক্রিটিক্যাল। যার প্রমাণ বর্তমান আমেরিকা ও ২য় জর্জ ডব্লিউ বুশ, তবে এদেশে আইনের শাসন রয়েছে। এখানেই জনগণের অধিকার অর্জিত। আমরা সেখানে পৌঁছতে পারি নাই। অনেক পথ হাঁটতে হবে। অনেক শ্রম দিতে হবে।
নতুন প্রজন্মের অভিভাবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের সন্তানদের যেন লোভ-লালসা না করে সত্য ও ন্যায়ের পথে, গণতন্ত্রের পথে নিজেদেরকে গড়ে তুলতে পারে সে শিক্ষা ও পরামর্শ দেয়া হয়। দেশকে গড়ে তোলার জন্য তারা যেন আত্মনিয়োগ করতে পারে। সাংবাদিক ইব্রাহীম চৌধুরী খোকনের বই স্মৃতিতে ও সংবাদে গ্রন্থের কথা উল্লেখ করে বলেন, লেখার রচনা শৈলী, গতিময়তা, বাচনভঙ্গি, উপস্থাপনা, নিজস্ব চিন্তাধারা, বিষয়ভিত্তিক নির্বাচন রয়েছে। বইটি পাঠক প্রিয়তার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। পরিশেষে আয়োজক, উপস্থিত সকলকে সম্মান প্রদর্শনের জন্য কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ প্রকাশ করেন। সৌজন্য সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন প্রবীণ সাংবাদিক মাহবুবুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মুকিত চৌধুরী, লীগ অব আমেরিকার সাবেক সভাপতি এমাদ চৌধুরী এসোসিয়েশনের সহ সভাপতি মোশাররফ আলম, এসোসিয়েশনের সাবেক সাহিত্য সম্পাদক শাহীন ইবনে দেলওয়ার, এসোসিয়েশনের সাবেক নির্বাচন কমিশনার সালেহ চৌধুরী, শিল্পী সেলিম চৌধুরী, লেখক ইশতিয়াক রুপু, এসোসিয়েশনের সাবেক সেক্রেটারি মইনুল হক চৌধুরী হেলাল, কম্যুনিটি এক্টিভিটর শামস উদ্দিন, বিয়ানীবাজার সমিতির সাবেক উপদেষ্টা গৌছ উদ্দিন খান, বাংলা পত্রিকার সম্পাদক আবু তাহের। কবিতা আবৃত্তি করেন ফারহানা ইলিয়াস তুলি ও পায়রা শিল্পীগোষ্ঠীর শাহানারা চৌধুরী।
মোড়ক উন্মোচন: সাংবাদিক ইব্রাহীম চৌধুরী খোকনের লেখা স্মৃতিতে ও সংবাদে গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন সম্মানিত অতিথি এডভোকেট তবারক হোসেইন। এ সময় সাংবাদিক মাহবুবুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা মুকিত চৌধুরী, সংগঠনের সভাপতি বদরুল হোসেন খান, সেক্রেটারি জুয়েল চৌধুরী, আব্দুস সালাম, সংগঠনের উপদেষ্টা একলিমুজ্জামান নুনু এবং লেখক ইব্রাহীম চৌধুরী খোকন উপস্থিত ছিলেন। সৌজন্য সভা শেষে ঘরোয়া খাবার পরিবেশন করা হয় হেলিমউদ্দিন ও মিসেস হেলিমউদ্দিনের সৌজন্যে।