হাওয়ার্ড ব্লুম
সবাই যখন আমেরিকার ২৪২তম স্বাধীনতা দিবস পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন আমেরিকান স্বাতন্ত্র্য কিছুটা হলেও নড়বড়ে। আমরা যদি পেছনে ফিরি, আমাদের সংবিধানে জাতি হিসেবে সাহসী, দূরদর্শী ও নৈতিকতাসম্পন্ন অসাধারণ কথা লেখা রয়েছে। এগুলো প্রজন্মকে বিশ্বে আমেরিকার স্বাতন্ত্র্যে আত্মবিশ্বাসী হতে সাহায্য করছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এই গর্বিত ও আত্মপ্রত্যয়ী ধারণায় চিড় ধরেছে।
আজ অনেকেই বলছেন, আমরা ব্যতিক্রমী নই। ইতিহাসের ঝড়ে দেশটি এক অসহায় অবস্থায় পড়ে, আর আমরা পৃথিবীর অন্যান্য জাতির মতোই কিছুটা পাপী। আর ডোনাল্ড ট্রাম্প তো দাঁড়িয়ে আছেন সেই স্বাতন্ত্র্যবাদের বিপরীতে। ২০১৩ সালে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সিরিয়ার সংকটের সমাধান করতে চেয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আমরা শিশুদের মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করব। তাদের জন্য দীর্ঘকাল পর্যন্ত এক নিরাপদ বিশ্ব গড়ে তুলব। অন্য দিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন তা প্রতিহত করেন। এরপর আসেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ক্ষমতায় এসেই ট্রাম্প আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্বের জায়গাগুলোতে বাদ সাধেন। তার কার্যকালে তিনি এক কঠিন নীতি গ্রহণ করেন। যেখানে পরোপকারী নীতি থেকে সরে এসে তিনি আমেরিকার স্বাতন্ত্র্যবাদকেই খারিজ করে দেন। আমেরিকার ফাউন্ডিং ফাদাররা এই ৪ জুলাইয়েই এমন দেশ গঠনের স্বপ্ন দেখেন। আমেরিকার ফাউন্ডিং ফাদারদের অন্যতম থমাস জেফারসন, যিনি আমেরিকার তৃতীয় প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ১৮০৯ সালে তার মেয়াদ শেষে তিনি বলেছিলেন- এটি বিশ্বের একমাত্র দেশ, যেটি মানবাধিকার প্রশ্নে অটল, অবিচল; যেটি নাগরিক স্বাধীনতায় বিশ্বের কাছে দৃষ্টান্ত।
আমেরিকার স্বাতন্ত্র্য এবং স্বাধীনতা, সমতা ও অধিকারের ক্ষেত্রে আমেরিকার স্বাধীনতার ঘোষণায় যা রয়েছে, এখন তার বিপরীত চলছে। আজ প্রেসিডেন্ট সর্বক্ষেত্রেই বলছেন, আমেরিকা ফার্স্ট, তথা আমেরিকাই প্রথম। এটি হতে পারে না।
সুতরাং ২৪২ বছর পর স্বাধীনতার ঘোষণার সেই আমেরিকান স্বাতন্ত্র্য কতটা রয়েছে, সন্দেহ। আমাদের প্রেসিডেন্ট তিনি সবাইকে নিয়ে এক সুন্দর আমেরিকা গড়ার কথা বলছেন? নাকি নানাভাবে জাতিকে বিভক্ত করে নানাদিকে যুদ্ধাবস্থা উসকে দিচ্ছেন?
তবে এখনও এটা বিশ্বাস করার কারণ রয়েছে যে, জেফারসনের সে নিন্দেশনা এখনও জাজ্বল্যমান এবং এখন তা পথ দেখাচ্ছে। সে উদারমনা স্পৃহা আমেরিকার স্বাতন্ত্র্য।
আমরা যদি দেখি, কিছু শিশুর ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট চাইছেন তাদেরকে তাদের মা-বাবা থেকে বিচ্ছিন্ন করতে। তাদের আশ্রয় হবে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে। আর তা জাতি প্রত্যক্ষ করবে? এ তো বিরাট মিথ্যা। এটাই কি প্রেসিডেন্টের মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন তথা আমেরিকাকে আবার শ্রেষ্ঠ বানাও-এর দৃষ্টান্ত? মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন- এ স্লোগানের মূল্য কি জাতি এভাবেই দেবে- যথেষ্ট হয়েছে। রিপাবলিক, ডেমোক্র্যাট, লিবারেল ও কনজারভেটিভরা রুষ্ট হয়ে এ উপলব্ধি করছেন যে, যেটি আমেরিকাকে বিশ্ব থেকে স্বতন্ত্র করেছে, আমাদের ফাউন্ডিং ফাদাররা যে আদর্শ রেখে গেছেন, যেটি জাতি হিসেবে আমাদের গর্ব, তা আজ কলঙ্কিত হয়েছে। এখন সবাই একত্রিত হয়ে জোর গলায় প্রশাসনকে তা বলছেন। তাতে হয়তো প্রেসিডেন্ট তার ভুল বুঝতে পারবেন।
দার্শনিক কার্ল পপারের কথা প্রণিধানযোগ্য- তুমি দুই ধরনের সরকারের যেকোনো একটি গ্রহণ করতে পার। আমি বলি, এ সরকারের যেকোনো ধরনের সহিংসতা ছাড়াই অপসারণ করা যায়- একটি হলো গণতন্ত্র আর অন্যটি স্বৈরশাসন।
এটি আমাদের জন্য এক সতর্ক বার্তা। প্রেসিডেন্টকে সেই ৪ জুলাইয়ের কথা স্মরণ রাখা উচিত।
লেখক : কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, ভ্যানিটি ফেয়ার, ওয়াশিংটন।