ঠিকানা রিপোর্ট: ইমিগ্র্যান্টরা আমেরিকায় না আসলে ক্ষতি হবে কার? এই প্রশ্ন আমেরিকার জনপ্রিয় ম্যাগাজিন ফোর্বাসের। ম্যাগাজিনটি আমেরিকায় আসা এবং জন্ম নেয়া ইমিগ্র্যান্টদের সন্তানদের নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। সেই প্রতিবেদনের শুরুতেই এই প্রশ্নটি করা হয়। প্রশ্নটি করার সাথে সাথেই উল্লেখ করা হয়, সারপ্রাইজলি ওয়ান অব দ্যা ইম্পর্টেন্ট থিঙ্কস আমেরিকা উড লুজ ইন দ্যা কন্ট্রিবিউশন্স মেইড বাই দেয়ার চিল্ড্রেন।
এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে ন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর আমেরিকান পলিসির নতুন জরিপে দেখা গেছে, ২০১৬ সালের ইন্টেল সাইন্স ট্যালেন্ট সার্চে ফাইনালিস্টদের মধ্যে ৮৩% ছাত্রছাত্রী হচ্ছেন ইমিগ্র্যান্টদের সন্তান। তাদের সাফল্য ৪০ জনের মধ্যে ৩৩ জন। প্রতি বছর সোসাইটি ফর সায়েন্স এন্ড পাবলিক হাই স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের প্রতিযোগিতা আহ্বান করে।
২০১৭ এই বছর এই প্রতিযোগিতা ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত হয় মার্চের ৯ তারিখ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে। এই প্রতিযোগিতায় সায়েন্সসহ ম্যাথামেটিক্সেরও পরীক্ষা নেয়া হয়। সব পরীক্ষাতেই আমেরিকায় যারা পারিবারিক ভিসা এবং এমপ্লয়মেন্ট ভিসায় এসেছেন তাদের সন্তানরা অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে উত্তীর্ণ ৭৫% ছাত্রছাত্রী হচ্ছেন যারা এমপ্লয়মেন্ট ভিসায় আমেরিকায় এসেছে। এইচ ওয়ান বি ভিসায় এসে তারা পর্যায়ক্রমে আমেরিকার সিটিজেন হয়েছে। এস সিটিজেনদের সংখ্যা আমেরিকার জনসংখ্যার মাত্র ১%।
যে সব অভিভাবক এদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য এসেছেন তাদের সন্তানদের মধ্যে ৬৮% ছাত্রছাত্রী এ পরীক্ষায় উত্তর্ণী হচ্ছে। পারিবারিক ভিসায় যারা এসেছেন তাদের সন্তানদের মধ্যে ৭.৫% ছাত্রছাত্রী এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হচ্ছেন।
২০১৬ সালের ইন্টেল সায়েন্স ট্যালেন্ট সার্চে ফাইনালিস্ট ৪০ জন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ১৪ জন অভিভাবকের জন্ম ভারতে। ১১ জন জন্ম চীনে এবং ৭ জন অভিভাবকের জন্ম আমেরিকাতে। পিউ রিসার্চ সেন্টারের জরিপ অনুযায়ী ভারত এবং চীনের জনগণের সংখ্যা আমেরিকার জনসংখ্যার ১%। অন্যান্য দেশের অভিভাবকদের মধ্যে রয়েছেন কানাডা, সাইপ্রাস, ইরান, জাপান, নাইজেরিয়া, সিঙ্গাপুর, সাউথ কোরিয়্,া তাইওয়ান ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে।
জরিপে আরো উল্লেখ করা হয়, এই পরীক্ষায় ইমিগ্র্যান্টদের সন্তানরা দিন দিন ভাল করছে।
২০০৪ সালে ছিলো ৬০% (৪০ জনের মধ্যে ২৪ জন), ২০১১ সালে ছিলো ৭০% ( ৪০ জনের মধ্য্যে ২৮ জন), ২০১৬ সালে ছিলো ৮৩% ( ৪০ জনের মধ্যে ৩৩ জন)। ইন্টেল সায়েন্স ট্যালেন্ট সার্চে যারা পাশ করে তাদের মধ্যে ৭০% ছাত্রছাত্রীর সাইন্টিস্ট হিসাবে তাদের জীবন বেচে নেন। ২০১৬ সালের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সেরা ৯ জন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ৭ জন ছিলো ইমিগ্র্যান্ট পরিবারের। এর মধ্যে প্রথম স্থানও পেয়েছে অমল পাঞ্জাবি। অমল পাঞ্জাবিসহ যারা এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন তারা তাদের অভিমতে জানিয়েছেন, তাদের বাবা-মা কঠিন সংগ্রাম করছে আমেরিকায় তাদের উন্নত জীবনের জন্য। তারা বলতে গেলে সব কিছু বিসর্জন দিয়েছেন তাদের সন্তানের জন্য। সুতরাং তাদের বাবা- মার পাশাপাশি তারা নিজেরাও তাদের স্বপ্নের বাস্তাবায়ন করতে চান। তারা আরো বলেন, আমেরিকায় লেখাপড়া করলে স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব, সেই স্বপ্ন তারা পূরণ করতে চান।
নাইজেরিয়ান ইমিগ্র্যান্টের সন্তান অগাস্টা বলেন, নাইজেরিয়ায় ভাল লেখাপড়ার সুযোগ ছিলো না বলে তার বাবা- মা তাকে নিয়ে আমেরিকায় এসেছেন। এখানে এসে তারা আমার জন্য অনেক কষ্ট করছেন, তারা আমার জন্য অনেক কিছু সেক্রিফাইস করেছেন। অগাস্টা আরো বলেন, আমার বাবা বড় হয়েছেন নাইজেরিয়ায় গৃহ যুদ্ধের সময়। আমরা দরিদ্র ছিলাম, যে কারণে আমার লেখপড়ার ব্যয়ভার তিনি বহন করতে পারছিলেন না এবং ভাল স্কুলও ছিলো না। অগাস্টার বাবা তোবেস সংগ্রাম করে ফিজিক্যাল থ্যারাপিস্ট হন এবং এইচ ওয়ান বি ভিসা নিয়ে আমেরিকায় চলে আসেন। তোসাবা বলেন, আমার সন্তানের জন্যই আমি সব কিছু ছেড়ে আমেরিকায় চলে আসি। কারণ আমেরিকা হচ্ছে অবাধ সুযোগ-সুবিধার দেশ। সেই সুযোগ আমরা নিতে চাই। আমি খুশি যে আমার সন্তান ভাল করছে।
শুধু এই পরীক্ষায় নয়, গত সপ্তাহে নিউইয়র্ক সিটির স্পেশালাইজড স্কুলের পরীক্ষার যে ফলাফল বেরিয়েছে তাতেও ইমিগ্র্যান্ট কম্যুনিটির ছাত্রছাত্রীরা ভাল করেছে। বিভিন্ন টিউটোরিয়ালের শিক্ষকদের সাথে আলাপকালে তারা জানান, এই পরীক্ষায়ও বাংলাদেশীসহ দক্ষিণ এশিয়ান ছাত্রছাত্রীরা ভাল করেছেন। তাদের সংখ্যা ৭০%।
অনেকেই প্রশ্ন রেখে বলেছেন, যে সব ইমিগ্র্যান্টের ছাত্রছাত্রীরা ভাল করছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কেন তাদের আমেরিকা থেকে বের করে দিচ্ছেন? এর ফলেতো আমেরিকারই ক্ষতি হবে। এই বিষয়টি ভেবে দেখা দরকার বলে তারা অভিমত ব্যক্ত করেন।