আমেরিকা নয়: ট্রাম্পের যৌন কেলেঙ্কারি অভিযোগের অন্তহীন উত্তাপ বিশ্বব্যাপী

ঠিকানা রিপোর্ট : আমেরিকা নয়, বরং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিবাহ বহির্ভূত ব্যক্তিগত যৌন কেলেঙ্কারির খবরই এখন বিশ্বব্যাপী উত্তাপ ছড়াচ্ছে। এতে করে প্রেসিডেন্টের ভবিষ্যৎ নিয়ে শংকা তৈরি হলেও ট্রাম্প নিরুত্তাপ, নিরুদ্বিগ্ন। অথচ একের পর এক ট্রাম্পের নিত্যনতুন কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রকাশ পাওয়ায় বিশেষ করে আমেরিকার জনগণ বিরক্ত, হতাশ এং ক্ষুব্ধ।
প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার গ্রহণের পর ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অসংখ্য যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠলেও মোটামুটি চারটি অভিযোগ খুব ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। যার মধ্যে রয়েছে পর্নতারকা, মডেল স্টর্মি ড্যানিয়েল, কারেন ম্যাডুগলি, সামার জেরভস এবং সর্বশেষ এক গৃহকর্মীর সঙ্গে অবৈধ যৌন সম্পর্ক এবং বিয়ে বহির্ভূত মেয়ের বাবা হওয়ার খবর ট্রাম্পকে সবচেয়ে বড় বিপদে ফেলতে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে জেমস কোমির ট্রাম্পকে নিয়ে লেখা বইয়েও বেশ ঝড় তুলেছে। নিউইয়র্ক টাইমসসহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ট্রাম্পকে নিয়ে লেখালেখি, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে উত্থাপিত যৌন কেলেঙ্কারির অর্থের বিনিময়ে ধামাচাপা দেয়ার তৎপরতা নিয়েও এখন মিডিয়া জগতে চলছে তোলপাড়। অনেকের মুখেই এখন উচ্চারিত হচ্ছে যে, এতবড় প্লেবয় ইতোপূর্বে কখনোই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়নি।
ট্রাম্প-ডেনিয়েলস সম্পর্ক চাউর হওয়ার পর ট্রাম্পের ওপর প্রতিশোধ নেয়ার যেনো অপূর্ব সুযোগ এসে যায় গণমাধ্যমগুলোর। ট্রাম্পের প্রেমিকাদের সম্পর্কে খবর বের করতে উঠেপড়ে লাগে তারা। ফলে বের হয়ে আসে বিভিন্ন সময়ে প্রেমিকাদের দীর্ঘ তালিকা। ২০০১ সাল থেকে প্রায় দুই বছর কারা ইয়াং নামের এক মডেলের সঙ্গে নিয়মিত ডেটিং করেছেন ট্রাম্প। রোয়ানি ব্রিউয়ার লাইন নামের ২৬ বছরের আরেক মডেলের সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক নিয়ে কথা উঠেছিলো কিছুদিন। কোনো এক পুল পার্টিতে ট্রাম্পের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিলো দুজনের। ১৯৯৫ সালের দিকে বেশ কিছুদিনের জন্য কাইলি ব্যাক্স নামের অন্য এক মডেলের সঙ্গে প্রকাশ্যেই ডেট করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। শিথিল হলেও সম্পর্কটি বেশ কিছুদিন টিকিয়ে রেখেছিলেন তারা।
১৯৮৯ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প ডেট করেছেন গ্যাব্রিয়ালা সাবাতানি নামের এক টেনিস খেলোয়াড়ের সঙ্গে। ইভানাকে ডিভোর্স দেয়া এবং মেপলের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ায় এই সম্পর্কটি খুব একটা দীর্ঘ হয়নি। তবে ১৯৯৭ সালে আলসন জিয়ানিনি নামের ২৭ বছরের এক মডেলের সঙ্গে একসঙ্গে ছিলেন ট্রাম্প। এছাড়া ষাটের দশকের শেষ দিকে এমি অ্যাওয়ার্ড পাওয়া অভিনেত্রী কেন্ডিস বার্গেনের সঙ্গে মজে গিয়েছিলেন ট্রাম্প। মডেল ও টিভি তারকা আনা নিকোল স্মিথের সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক নিয়ে মার্কিন ট্যাবলয়েড পত্রিকা সংবাদ প্রচার করেছে। গুজব রটেছিলো ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজির স্ত্রী কার্লা ব্রুনিকে নিয়েও। সেটি ১৯৯১ সালের কথা। তবে এসব ঘটনাকে ছাড়িয়ে গেছে পর্নতারকা ডেনিয়েলসের সঙ্গে সম্পর্কের কেলেঙ্কারি। এই কেলেঙ্কারি নিয়ে এখনো কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি চলছে।
জানা যায়, ১৯৮০ সালের শেষের দিকে বিয়ে বহির্ভুত অবৈধ যৌনমিলনের মাধ্যমে নবজাতক জন্ম দেয়ার নতুন অভিযোগসহ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে গোপন অভিসার ও অবৈধ যৌন অভিযোগ ও কেলেঙ্কারির গ-া পুরেছে। সাবেক পর্র্ন অভিনেত্রী স্টর্মি ডেনিয়েলের সাথে ২০০৬ সালের জুলাইর একরাত, ২০০৬ ও ২০০৭ সালে সাবেক প্লেবয় প্লেমেইট কারেন ম্যাকডুগালের সাথে ১০ মাসের বিয়ে বহির্ভুত যৌনমিলন, গত বছর সাবেক অ্যাপ্রেন্সিটিস প্রতিদ্বন্দ্বী সামার জেরভসের সংবেদনশীল অঙ্গে নিজ পুরুষাঙ্গ দিয়ে চাপ দেয়ার অভিযোগ ছাড়াও অবৈধ সন্তান জন্ম দেয়ার নতুন অভিযোগ উঠেছে আমেরিকার ৪৫তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে।
ড্যানিয়েল ও ম্যাকডুগাল: স্টর্মি ড্যানিয়েলের দাবি অনুসারে, ২০০৬ সালের জুলাই মাসের রাতের কাহিনি ধামাচাপা দেয়ার জন্য ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ১১ দিন আগে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আইনজীবী ও পরম আস্থাভাজন মাইকেল কোহেনের মাধ্যমে নগদ ১ লাখ ৩০ হাজার ডলারের বিনিময়ে স্টর্মি হাস এগ্রিমেন্ট (মুখ না খোলার চুক্তিনামায়) স্বাক্ষর করেছিল। আর সাবেক প্লেবয় প্লেমেইট ম্যাকডুগালের দাবি অনুসারে, ২০০৬ ও ২০০৭ সালের দীর্ঘ ১০ মাসের বিয়ে বহির্ভুত যৌন সঙ্গমের বিনিময়ে ন্যাশনাল এনকুয়ারারের মাধ্যমে গোপনীয়তা বজার রাখার শর্তে তাকে দেড় লাখ ডলার প্রদান করা হয়েছিল। এ সকল অভিযোগের সাক্ষ্য-প্রমাণ বর্তমানে এফবিআইর হেফাজতের রয়েছে বলে খবরে প্রকাশ।
সামার জেরভস: সাবেক অ্যাপ্রেনটিস প্রতিদ্বন্দ্বী সামার জেরভস গত বছর অভিযোগ করেছিলেন যে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার পুরুষাঙ্গ জেরভসের সংবেদনশীল অঙ্গে ঘঁষামাজা করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জেরভসকে প্রকাশ্যে মিথ্যাবাদী বলায় জেরভস ম্যানহাটন অ্যাপীলেট ডিভিশনে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সেক্স-অ্যাসল্টের অভিযোগ করেছিলেন। মামলার শুনানীর দিন-ক্ষণ নির্ধারিত রয়েছে সেপ্টেম্বরে। সাবেক অ্যাপ্রেনটিস প্রতিদ্বন্দ্বী জেরভসের মামলা শুনানী অবরুদ্ধ করার জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চেষ্টা-তদ্বির চালিয়ে যাচ্ছেন বলে ১৬ এপ্রিল জানা গেছে।
জেরভসের মানহানির মামলার শুনানী স্থগিত করার জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কয়েকজন জাজ সমন্বয়ে গঠিত প্যানেলকে অনুরোধ করেছেন। ট্রাম্পের অনুরোধের বিরোধিতা করে জেরভসের আইনজীবী মারিয়ান ওয়াং বলেন, অযাথিত বিলম্বে স্মৃতিশক্তি ক্ষীণ হয়ে পড়ার কিংবা প্রমাণাদি হারিয়ে যাওয়ার পর্যাপ্ত ঝুঁকি রয়েছে। পক্ষান্তরে ট্রাম্পের পক্ষ থেকে যুক্তি দেখানো হয় যে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনে ব্যস্ততার দরুন তার পক্ষে জেরভসের মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন করার সুযোগ তার নেই।
অবৈধ সন্তান জন্ম দেয়ার নতুন অভিযোগ: সর্বশেষ উত্থাপিত অভিযোগে দাবি করা হয় যে ট্রাম্প ১৯৮০ সালের শেষের দিকে অবৈধ যৌন মিলনের মাধ্যমে নবজাতকের জন্ম দিয়েছিলেন এবং ট্রাম্প টাওয়ারের সাবেক দ্বাররক্ষী ডিনো সাজুদিন তা ফাঁস করতে চেয়েছিলেন। নবজাতকের তথ্য গোপন রাখার শর্তে ট্রাম্পের বন্ধুর পত্রিকা ন্যাশনাল ইনকুয়ারারের মাধ্যমে দ্বাররক্ষী সাজুদিনকে ৩০ হাজার ডলার প্রদান করার বিষয়টি সম্প্রতি জানাজানি হয়েছে।
ন্যাশনাল ইনকুয়ারারের এই অপকর্মের সংবাদ দ্য নিউইয়র্কার ও অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস ট্যাবলয়েড গত বৃহস্পতিবার রাষ্ট্র করেছে। প্রকাশিত তথ্যানুসারে, ২০১৫ সালের শেষের দিকে ট্রাম্প টাওয়ারের সাবেক দ্বাররক্ষী সাজুদিন ন্যাশনাল ইনকুয়ারারকে জানান যে তিনি শুনতে পেয়েছেন ১৯৮০ সালের শেষের দিকে এক কর্মচারীর সাথে বিয়ে বহির্ভূত অবৈধ যৌনমিলনের মাধ্যমে ট্রাম্প এক নবজাতকের জন্ম দিয়েছিলেন। ৩০ হাজার ডলারের বিনিময়ে পাকড়াও কর ও খুন কর- এ তত্ত্বের ভিত্তিতে সাজুদিনের কাছ থেকে ইনকুয়ারার তথ্যটি খরিদ করে। এরপর ট্রাম্পের পক্ষ থেকে প্রতিবেদনটি ধামাচাপা দেয়া হয়। দ্য নিউইয়র্কারের খ্যাতনামা সাংবাদিক রোনান ফ্যারো সম্প্রতি সিএনএনেক জানান যে প্রতিবেদনটি একান্ত গোপন রাখার নির্দেশ প্রদান করেছিলেন ইনকুয়ারারের প্রকাশক ও ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ড্যাভিড পিকার।
ট্রাম্প-কোমি বাকযুদ্ধ তুঙ্গে : এফবিআইর বরখাস্ত হওয়া সাবেক পরিচালক জেমস কোমির- এ হাইয়ার লইআলটি (উচ্চতর আনুগত্য) শীর্ষক গ্রন্থ বাজারে এসেছে ১৭ এপ্রিল। অথচ ওই গ্রন্থকে কেন্দ্র করে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং সাবেক পরিচালক কমীর বাকলড়াই রীতিমত খ-প্রলয় শুরু হয়েছে।
ট্রাম্পের বক্তব্য: ১৫ এপ্রিল প্রচারিত এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বরখাস্তকৃত পরিচালক কোমিকে নৈতিকভাবে অনুপযুক্ত এবং একগাদা মিথ্যাবাদী হিসেবে অভিহিত করেছেন। কমীর প্রতি দুর্বল এবং অবিশ্বাসী স্লাইম (অসাধু খোশামোদকারী বিনয়ী) ইত্যাদি আক্রমণাত্মক ভাষা চয়ন করতেও ট্রাম্প পিছ পা হন নি। কোমি, সাবেক উপপরিচালক এন্ড্রু ম্যাকক্যাবে এবং এফবিআইর অপর কর্মকর্তারা নানাবিধ অপরাধ করেছেন বলেও অভিযোগ করেছেন ট্রাম্প। তবে অপরাধের ধরন প্রকৃতি সম্পর্কে ট্রাম্প কোন ব্যাখ্যা দেননি।
ট্রাম্প বলেন, সময়ের পটভূমিতে জেমস কোমি একজন প্রমাণিত লিকার (তথ্য ফাঁসকারী) এবং মিথ্যাবাদী। প্রকৃতপ্রস্তাবে চাকরিচ্যুত হওয়ার আগ পর্যন্ত ওয়াশিংটনের প্রত্যেকেই ভেবেছিলেন যে কৃতকর্মের জন্য কোমির বরখাস্ত হওয়া উচিত। তিনি ক্লাসিফাইড (শ্রেণিবিন্যস্ত) তথ্য ফাঁস করেছিলেন যার জন্য তার বিচারের সম্মুখীন হওয়া উচিত। শপথ নিয়ে তিনি কংগ্রেসের কাছে মিথ্যা বলেছিলেন। দ্বিতীয় টুইট বার্তায় কোমির প্রতি ট্রাম্প এ ধরনের বিষোদগার করেন। অসাধু হিলারী ক্লিনটনের মামলা কোমি যেভাবে পরিচালনা করেছিল তা ইতিহাসে কলঙ্কচিহ্ন হয়ে থাকবে। আমি জেমস কোমিকে বরখাস্ত করে মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছি।
হোয়াইট হাউজ কর্মকর্তাদের বক্তব্য: হোয়াইট হাউজ কাউন্সেলর কেলিয়ানে কনওয়ে এবিসির গুড মর্র্নিং আমেরিকায় হাজির হয়ে কোমিকে ঠাট্টা করেছেন এবং চাকরিচ্যুত হতাশ কর্মকর্তা ও ক্ষমতার জন্য বুভুক্ষু হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। হোয়াইট হাউজ প্রেস সেক্রেটারি সারাহ হুকাবী স্যান্ডারস কোমির লেখা বইকে নিতান্ত নিম্নমানের উপাখ্যান হিসেবে অভিহিত করে তার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাওয়া এবং অর্থোপার্জনের দুর্মর প্রচেষ্টা হিসেবে অভিহিত করেছেন। কোমির বক্তব্য: প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে এন আনট্রুথফুল মব বস (অবিশ্বাসী ইতর নেতা) এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার অযোগ্য ও মিথ্যাবাদী হিসেবে কোমি নিজ গ্রন্থ- এ হাইয়ার লইআলটিতে চিত্রিত করেছেন। বইটির অংশবিশেষ এক সাক্ষাৎকারে উদ্ধৃত করার পর পরই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বরখাস্ত হওয়া এফবিআইর সাবেক পরিচালক কোমির বিরুদ্ধে বিষবাষ্প উদগীরণ করেছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চরিত্র এবং নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের ব্যাপারে সঠিক জবাব দিতে ট্রাম্পের ব্যর্থতার অভিযোগও কোমি নিজের লেখা গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন বলে এবিসি নিউজের সাথে এক সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেন । এরই পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্পের মেজাজ সপ্তমে চটে যায়। বরখাস্তকৃত পরিচালক কোমি তার গ্রন্থে কংগ্রেসের কাছে দেয়া তার সাক্ষ্যের পুরো বর্ণনাও দিয়েছেন বলে জানা যায়। ট্রাম্পের বিবৃতি এবং সভাগুলোর বর্ণনা শেষে কোমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সত্যের গ-িতে আবদ্ধ করা যায় না এমন মাফিয়ার মতো বস এবং সব কিছু নিজের মতো করতে চান বলে জানিয়েছেন।
ডেমক্র্যাটদের মন্তব্য: কোমির বই নিয়ে ডেমক্র্যাটরাও দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। কানেকটিকাটের ডেমক্র্যাটিক দলীয় রিপ্রেজেনটেটিভ জিম হাইমস সিএনএন-এর নিকট কোমির ইন্টিগ্রিটি বা সাধুতার পক্ষে কথা বলেছেন। ওবামার সাবেক উপদেষ্টা ড্যাভিড এক্সেলরড বইটির টাইমিং সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
ছাঁটাই-নিয়োগের খেলা: গত বছরের মে মাসে বহিষ্কারের মাধ্যমে রিপাবলিকান দলীয় আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন থেকে কাউকে বিদায় এবং ইচ্ছেমতো কাউকে নিয়োগ দেয়া নাটকের সূচনা করেছিলেন। এরপর থেকে ট্রাম্প প্রশাসনের অনেক ডাকসাইটে ও জাঁদরেল কর্মকর্তা কক্ষচ্যুত হয়েছেন এবং অনেক নতুন মুখ প্রশাসনে স্থান পেয়েছেন। এদিকে দীর্ঘ ১১ মাস নীরবতা বজায় রাখার পর বরখাস্তকৃত সাবেক এফবিআই পরিচালক কোমি মুখ খুলেছেন বলে ১৬ এপ্রিল জানা যায়।
ট্রাম্প ও ট্রাম্প প্রশাসনকে নিয়ে লেখা কোমির গ্রন্থ- এ হাইয়ার লইআলটি গ্রন্থে কোমি তার সাবেক বস প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে মাফিয়ার মতো মন্তব্যটি প্রশাসন এবং ট্রাম্পকে কিছুটা বিব্রতের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। ১৫ এপ্রিল এবিসির জর্জ স্টেফানোপাউলসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারের অংশবিশেষ টুয়েন্টি/টুয়েন্টি স্পেশাল প্রেসিডেন্ট এবং তার দলকে দারুণভাবে ক্ষুব্ধ হয়েছে।
কোমি সহসা দ্য ভিউ, সিএনএন, এমএসএনবিসি এবং ফক্স নিউজের সাথেও তার নতুন বুক এ হইয়ার লইআলটি সম্পর্কে কথা বলবেন বলে জানা গেছে। কোমির বরখাস্তের মধ্য দিয়ে স্পেশাল কাউন্সেল রবার্ট মুলারের তদন্তের পথ সুগম করেছে এবং ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের বিষয়াদি খতিয়ে দেখছে।
এদিকে, ডেনিয়েলসের বিরুদ্ধে সালিশি আদালতে নালিশ করেছেন ট্রাম্পের আইনজীবীও। চুক্তি ভঙ্গের দায়ে তার কাছে দুই কোটি ডলার দাবি করেছেন কোহেন। তার দাবি, চুপ থাকার জন্যই ডেনিয়েলসকে এক লাখ ৩০ হাজার ডলার দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু তিনি কমপক্ষে ২০ বার সেই চুক্তি ভঙ্গ করেছেন।
এই ঘটনা কবে বা কিভাবে শেষ হবে, তা কেউ জানে না। তবে এ ঘটনায় ঘরে-বাইরে সর্বত্রই কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন ট্রাম্প। গৃহদাহ শুরু হয়ে গেছে ট্রাম্পের সংসারেও। জানা গেছে, পর্ন তারকার সঙ্গে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই স্বামীর কাছ থেকে দূরে থাকছেন মেলানিয়া ট্রাম্প।
এছাড়া মেলানিয়ার মুখপাত্র স্টেফানি গ্রিশাম জানিয়েছেন, ট্রাম্পের সঙ্গে ডেনিয়েলসের সম্পর্ক পুরোপুরি ভিত্তিহীন। আর এ নিয়ে উদ্বিগ্নও নন মেলানিয়া। ফার্স্ট লেডি হিসেবে মেলানিয়া তার ভূমিকা পালনে সচেতন। গণমাধ্যমের এসব ভুয়া ও মুখরোচক খবর তার সেই ভূমিকায় প্রভাব ফেলতে পারবে না বলে জানান তিনি। কিন্তু তারপরও চাপা থাকছে না ট্রাম্প-মেলানিয়া সম্পর্কের টানাপড়েন। হোয়াইট হাউসের গ-ি ছাড়িয়ে বাইরেও তা দৃশ্যমান হচ্ছে।
এদিকে, ট্রাম্প-ডেনিয়েলস সম্পর্ককে সম্পূর্ণ গুজব বলে উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেও পার পাচ্ছে না হোয়াইট হাউস। সাংবাদিকদের প্রশ্নের কোনো জবাবই ঠিকমতো দিতে না পারায় ট্রাম্পের মুখপাত্ররা হচ্ছেন বিব্রত। এর আগে মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের নারী কেলেঙ্কারি নিয়ে হোয়াইট হাউসে অভিশংসনের প্রস্তাব নেয়া হয়েছিলো। ট্রাম্পকে নিয়ে এখন পর্যন্ত তেমন কিছু হয়নি। তবে হোয়াইট হাউসে তার অবস্থান অনেকটাই যে টালমাটাল, তা বুঝেছেন ট্রাম্প নিজেও।