আমেরিকা-বাংলাদেশ সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন

মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী আমেরিকান বন্ধুদের সম্মাননা

ঠিকানা রিপোর্ট : বঙ্গবন্ধুর ৫০টি আলোকচিত্র প্রদর্শণ, ব্লকেড চলচ্চিত্র প্রদর্শন এবং যুত্তরাষ্ট্রের মূলধারার ব্যবসায়িক সংগঠন গ্রেটার নিউইয়র্ক চেম্বার অব কমার্স ও বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যবসায়িক সংগঠন এফবিসিসিআই-এর মধ্যে মেমোরেন্ডাম স্বাক্ষরের মধ্যে দিয়ে গত
২৩ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হলো তিন দিনব্যাপী বাংলাদেশি ইমিগ্র্যান্ট ডে ও ট্রেড ফেয়ার।
২৩ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় নিউইয়র্কের টাইমস স্কয়ারের ম্যারিয়ট মার্কি হোটেলে ফিতা কেটে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আলোকচিত্র প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মণি। এর আগে সকাল ৯টায় মিড টাউন হিলটন হোটেলে বাংলাদেশ ও আমেরিকার শতাধিক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে গ্রেটার নিউইয়র্ক চেম্বার অব কমার্সের বাৎসরিক এক্সপো শুরু হয়।
বাংলাদেশ ও আমেরিকা থেকে ১৯টি বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান এই মেলায় অংশগ্রহণ করে। বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদিত এক্সপোট প্রমোশন ব্যুরো নিবন্ধিত ও এফবিসিসিআই এর সহযোগিতায় মুক্তধারা নিউইয়র্ক ও ইউএসএ-বাংলাদেশ বিজনেস লিঙ্কস-এর উদ্যোগে গ্রেটার নিউইয়র্ক চেম্বার অব কমার্সের এক্সপোর সাথে বাংলাদেশ কো-পাটনার হিসেবে যুক্ত হয়।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাক্তণ গভর্নর ড. আতিউর রহমান, এফবিসিসিআই-এর সভাপতি এমডি জসিম উদ্দিন, সংসদ সদস্য ও এফবিসিসিআই এর প্রাক্তন সভাপতি এমডি সাইফুল ইসলাম মহিউদ্দিন, ঢাকা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি রিজওয়ান রহমান, গ্রেটার নিউইয়র্ক চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট ও সিইও মার্ক জেফসহ বিপুল ব্যবসায়ী নেতৃবন্দ ‘রিবন কার্টিং’ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেন। গ্রেটার নিউইয়র্ক চেম্বার এনুয়াল বিজনেস এক্সপো উইথ ইন্টারন্যাশনাল প্যাভিলিয়নস ফিচারিং: বাংলাদেশি ইমিগ্র্যান্ট ডে অ্যান্ড ট্রেড ফেয়ার ২০২২ অনুষ্টানে ইন্টারন্যাশনাল পার্টনার হিসাবে বাংলাদেশকে সম্মাননা দিলে, সেটি গ্রহণ করেন অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক ডা. জিয়াউদ্দীন আহমেদ।
এরপর আমেরিকার মূলধারার অনুষ্ঠানে ইনভেস্টমেন্ট অপরচুনিটিজ ইন বাংলাদেশ অ্যান্ড প্রোমোটিং বাংলাদেশি প্রোডাক্টস ইন দ্য নর্থ আমেরিকান মার্কেট’ শিরোনামে এক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ফিবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স ও মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ও সহ-সভাপতিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
এছাড়া হিলটনে বাংলাদেশের ডিজিটাল রেভ্যুলেশন: আইটি আউটসোর্সিং ইন বাংলাদেশ, কোয়ালিটি সার্ভিসেস অ্যাট লো কস্ট’ শিরোনামে তানভীর রাব্বানীর সঞ্চালনায় আরো একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে বেসিস-এর সহ-সভাপতিসহ আমেরিকার বিভিন্ন আইটি বিশেষজ্ঞারা অংশগ্রহণ করেন।
তিন দিনের অনুষ্ঠানটি শুরু হয় ২৩ সেপ্টম্বর নিউইয়র্ক টাইমস স্কয়ার এর হিলটন মিডটাউন-এ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংক এর সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান, এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট জসিম উদ্দিন, গ্রেটার নিউইয়র্ক চেম্বার অব কমার্স-এর সভাপতি, বেসিস-এর ভাইস প্রেসিডেন্টসহ অনেকে।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয় টাইম স্কয়ার এর ম্যারিয়ট মার্কি হোটেলের বল রুমে। প্রায় চার শতাধিক অতিথির উপস্থিতিতে সম্মান জানানো হয় মুক্তিযুদ্ধ-এ বাংলাদেশকে সহায়তাকারী ড. ডেভিড নালিন, ডেভিড উইসব্রড এবং লিয়ার লেভিনকে। এদিন সঙ্গীত পরিবেশন করেন ইমন চক্রবর্তী।
২৪ সেপ্টম্বর শুরু হয় প্রথম দিনের প্রোগ্রাম এর উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপুমনির বক্তব্য আর বঙ্গবন্ধুর বিরল চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন। দ্বিতীয় ছিল বেশ কয়েকটি সেমিনার। তবে এ দিন বাংলাদেশ ও আমেরিকার সম্পর্কের ৫০ বছর অনুষ্ঠানটি ছিল নানান কারণে তাৎপর্যময়। গভর্নর অফিস, মেয়র অফিস, সিনেটর, অ্যাসেম্বলি মেম্বার ও পাবলিক এডভোকেটের অংশগ্রহণে দিনটি হয়ে উঠে গুরুত্বপূর্ণ।
বক্তারা বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেন। সেই সাথে নিউইয়র্ক অ্যাসেম্বলি মেম্বার কর্তৃক সম্মাননা দেওয়া হয় বাংলাদেশ-এর এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্টকে। এদিন অনুষ্ঠান শেষ হয় দিনাত জাহান মুন্নী এবং নবনীতা চৌধুরীর সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে।
রোববার ছিল অনুষ্ঠানের ৩য় ও শেষ দিন দিন। উল্লেখ্যযোগ্য অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিল ‘বঙ্গবন্ধু : ভিষণ ও বাংলাদেশি ইমিগ্র্যান্ট ডে,’ যেখানে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডঃ দিপু মনি, এফবিসিসিআই প্রেসিডেনট জসিম উদ্দিন, সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান, নিউইয়র্ক চেম্বার অব কমার্স-এর চেয়ারম্যান ও শতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশি। এসময় গ্রেটার নিউইয়র্ক চেম্বার অব কমার্স এবং এফবিসিসিআই মধ্য ঐতিহাসিক ম্যামোরেন্ডাম স্বাক্ষরিত হয়।
দুই দেশের দুই বণিক সংগঠন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের উন্নয়নে কাজ করবে বলে ঐকমত্য হয়, যা বাংলাদেশের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে বলে অর্থনীতিবিদ ড. আতিউর রহমান উক্ত সভায় তাঁর বক্তব্যে অভিমত প্রকাশ করেন।
এই ট্রেড ফেয়ার অংশগ্রহণ করে আইএফআইসি ব্যাংক, ওয়াল্টন, প্রাণ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক, ঐক্য-ডট-কম, প্রিমিয়াম ফুড, বিভিন্ন আইটি কোম্পানীসহ ১৯টি প্রতিষ্ঠান।
শিল্পী পৌষালী ব্যানিাজীর সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে তিনদিনব্যাপী ট্রেড ফেয়ারের সমাপ্তি ঘটে।
বাংলাদেশ ইমিগ্রান্ট ডে এন্ড ট্রেড ফেয়ার ২০২২ এর অনুষ্ঠানটি নানা কারণে বাংলাদেশ ও আমেরিকার মধ্যে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
এই প্রথম অনুষ্ঠানটির সাথে যুক্ত হয় গ্রেটার নিউইয়র্ক চেম্বার অব কমার্স, এফবিসিসিআই, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ইপিবি। এই অসাধ্য সাধন হয়েছে ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস লিংক এবং মুক্তধারা নিউয়র্ক কর্ণধার বিশ্বজিত সাহার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়। আর এই অনুষ্ঠানটি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌছাতে ড. জিয়াউদ্দীন আহমেদ এর ভূমিকা প্রশংসনীয়।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে আসা ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল এই ট্রেড ফেয়ারকে নিয়ে খুবই ব্যস্ততার মধ্যে সময় কাটান। রোববার রাত সাড়ে ১২টায় সম্মিলিত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।
শেষ দিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নৃত্য পর্বে অংশ নেয় আড্ডার শিল্পীরা। সংগীতে ছিলেন সায়রা রেজা ও পৌষালী বন্দ্যোপাধ্যায়। ট্রেড ফেয়ার উপলক্ষে বিশ্বজিত সাহার সম্পাদনায় ১০০ পৃষ্ঠার ‘গ্লোবাল বিজনেস’ প্রকাশিত হয়।