ঠিকানা রিপোর্ট : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অনেকটা ‘জিহাদ’ ঘোষণা করেছেন। ট্রাম্প প্রশাসনের নির্দেশে প্রতিদিনই আমেরিকান পাসপোর্টধারী সন্তান থাকার পরও অনেক অবৈধ অভিবাসীকে গেপ্তারপূর্বক দেশে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। স্ত্রীর কাছ থেকে স্বামীকে, স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রীকে, সন্তানের কাছ থেকে তার অভিভাবককে নির্দয়ভাবে আলাদা করে দেয়া হচ্ছে। এমনতর ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও দালালের মাধ্যমে ‘স্বপ্নের দেশ’ আমেরিকায় আসতে বাংলাদেশিদের কেউ কেউ বেছে নিয়েছেন বিপদসঙ্কুল মেক্সিকো-টেক্সাস সীমান্ত। অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করার লক্ষে চলতি ২০১৮ সালেই ২৩০ জন বাংলাদেশি লাতিন আমেরিকান কুখ্যাত ড্রাগ কার্টেলদের হাতে অন্তত ৫০ কোটি টাকা তুলে দিয়েছে। জীবন ঝুঁকি নিয়ে সীমান্তবর্তী রিও গ্রান্দি নদী পাড়ি দেয়ার সময় তারা প্রত্যেকে ধরা পড়েছেন। সর্বশেষ গত ১৭ মে টেক্সাসের লারেদোর সীমান্তরক্ষী বাহিনী এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, দক্ষিণ লারেদোর রিও গ্রান্দি নদী পাড়ি দেয়ার সময় ইউএস বর্ডার পেট্রোল এজেন্টস আরো আট জন অবৈধ বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করেছে। ফরে শুধু এই একটি সীমান্তেই ধরা পড়া বাংলাদেশিদের সংখ্যা ২৩০-এ পৌঁছেছে।
লারেদো সেক্টর অ্যাসিস্ট্যান্ট চিফ পেট্রোল এজেন্ট গ্যাব্রিয়েল অ্যাকোস্তা বলেছেন, অন্যান্য সীমান্তের তুলনায় সর্বাধিক সংখ্যক বাংলাদেশি এ সীমান্তপথে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছে। মি. অ্যাকোস্তা বলেন, আমাদের এজেন্টরা প্রায় প্রতিদিনই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের গ্রেপ্তার করছেন। অবৈধ অনুপ্রবেশের কারণ গ্রেপ্তারের পরেই নির্ধারণ করা সম্ভব। অনুসন্ধানে দেখা যায়, রিও গ্রান্দি নদীটি যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-মধ্য কলোরোডো থেকে উৎসারিত হয়ে গালফ অব মেক্সিকোতে প্রবাহিত হয়েছে। নিউ মেক্সিকো এবং টেক্সাসের যে সীমান্ত নদী দ্বারা বিভক্ত সেখান থেকেই বিদেশি অভিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চেষ্টা করছেন।
গত ১৮ এপ্রিল এ বিষয়ে মার্কিন ডিজিটাল ম্যাগাজিন ওয়াশিংটন এক্সামিনারের সাংবাদিক অ্যানা গিয়ারিটেল্লি ‘বাংলাদেশিজ পেয়িং ড্রাগ কার্টেল আপ টু ২৭০০০ ডলার টু বি স্মাগলড ইনটটু দি ইউএস।’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়Ñ প্রত্যেক বাংলাদেশি মাথাপিছু ২৭ হাজার ডলার পাচারকারীদের পরিশোধ করেছে। এ হিসাব অনুযায় ২৩০ জনের জন্য দালালচক্র হাতড়ে নিয়েছে ৫০ কোটি ৯২ লাখ টাকা। এক্সামিনার রিপোর্ট বলেছে, চলতি আর্থিক বছরে লারেদোর এজেন্টরা ১৮৩ জন এবং এক মাসের ব্যবধানে ৪৭ বাংলাদেশি অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে প্রায় দেড়জন বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করেছে।
একজন মার্কিন মুখপাত্র এক্সামিনারকে বলেছেন, এশিয়া থেকে সাড়ে আট হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে ২০১৭ সালে যতো অবৈধ অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকার চেষ্টা করেছে, তাদের ৬০ ভাগই লারেদোকে ব্যবহারের চেষ্টা করেছে। আর তাদের পেছনে আছে ড্রাগ কার্টেল। ড্রাগ কার্টেল আগ্রহী বাংলাদেশীদের এশিয়া থেকে প্রথমে দক্ষিণ আমেরিকায় নিয়ে আসে। তারপর মানবপাচারকারী চক্রই বিভিন্ন পরিবহনযোগে তাদের মধ্য আমেরিকার নানা স্থান ঘুরিয়ে আনে মেক্সিকোতে। এ ব্যক্তিরা (বাংলাদেশি) নিজেরা কিন্তু জানে না যুক্তরাষ্ট্র নামের দেশে কোন সীমান্ত দিয়ে তারা ঢুকবে। ২০১৭ সালে লারেদো থেকে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের ২৫ হাজার ৪৬০ ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে।