আম্পায়ারকে চোর বললেন সেরেনা

স্পোর্টস ডেস্ক : এবারের ইউএস ওপেনের নারী এককের ফাইনালে ঘটে গেল অনাকাক্সিক্ষত এক ঘটনা। ফাইনালে গত ৮ সেপ্টেম্বর মুখোমুখি হন যুক্তরাষ্ট্রের সেরেনা উইলিয়ামস ও জাপানের নাওমি ওসাকা। সরাসরি সেটে সেরেনাকে ৬-২ এবং ৬-৪ গেমে হারিয়েছেন জাপানি তরুণী তুর্কি। কিন্তু ম্যাচটি যেভাবে শেষ হয়েছে তা সবার কাছে অপ্রত্যাশিত। ম্যাচ চলাকালীন কোচের থেকে ‘পরামর্শ’ নেয়ার অভিযোগ উঠে সেরেনার বিরুদ্ধে। প্রথমে তাকে সতর্ক করা হয়। পুনরায় একই কাজ করায় পেনাল্টি পয়েন্ট দেয়া হয় নাওমিকে। কিন্তু সেরেনা তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেন।
উল্টো আম্পায়ারকে ‘চোর’ এবং ‘মিথ্যুক’ বলেন। এ ছাড়া আম্পায়ারের বিরুদ্ধে লিঙ্গবৈষ্যমের অভিযোগ তুলেছেন সেরেনা। ৩৬ বছর বয়সী সেরেনা বলেন, কখনোই পুরুষদের থেকে ম্যাচ ছিনিয়ে নিতে পারবেন না তিনি। কারণ তাকে অনেক কথা শুনতে হবে। আমি অনেক দেখেছি ছেলেরা বিভিন্ন আম্পায়ারকে অনেক কথা বলে। আমি এখানে নারীদের হয়ে লড়াই করতে চাই। আমি নারীদের সমঅধিকার চাচ্ছি। ম্যাচের দ্বিতীয় সেট চলাকালীন ঘটনার সৃষ্টি হয়। কোচ প্যাট্রিক মরটালও সেরেনাকে হাত দিয়ে কিছু একটা ইশারা করেছিলেন। বিষয়টিকে ‘পরামর্শ’ বলছেন ইউএস ওপেন কর্তৃপক্ষ। ডব্লিউটিএ ইভেন্টে বিষয়টি বৈধ হলেও গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্টে বিষয়টি অবৈধ। আম্পায়ার কার্লোস রামোস প্রথমে সেরেনাকে সতর্ক করেন। কিন্তু সেরেনা জানান, কোচের থেকে কোনো ইশারা পাননি তিনি এবং আম্পায়ার রামোসকে তিনি বলেন, জয়ের জন্য আমি কখনোই চুরি করব না এবং পরিস্থিতির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি। তিন গেম পর নাওমিকে পেনাল্টি পয়েন্ট প্রদান করেন আম্পায়ার। কোর্টে সেরেনার অখেলোয়াড়সুলভ আচরণের জন্য আম্পায়ার পেনাল্টি পয়েন্ট উপহার দেন নাওমিকে। বিষয়টি মানতে পারেননি সেরেনা। পরে নিজের মেজাজ হারিয়ে আম্পায়ারকে ‘চোর’ এবং ‘মিথ্যুক’ বলে সম্বোধন করেন। চিৎকার করে বলে উঠেন, এমন কাজটা করা উচিত হয়নি। আমাকে এটা কষ্ট দিয়েছে। কিন্তু আমি বসে থাকবো না। নারীদের জন্য লড়াই করব। সমান অধিকারের জন্য লড়াই করবো। হয়তো আমার জন্য হবে না। কিন্তু পরে যারা আসবে তারা পাবে। এ দিকে ম্যাচ জয়ের পর নাওমি ওসাকা বলেন, ওই পরিস্থিতিতে কি হচ্ছিল তা আমি বুঝতেও পারছিলাম না। আমি আমার ফোকাস ঠিক রাখতে চাচ্ছিলাম। এটা আমার প্রথম গ্র্যান্ডসøাম ট্রফি। আমি এখানেই সন্তুষ্ট হতে চাই না।
শাস্তির মুখে সেরেনা : ইউএস ওপেনের ফাইনালে আম্পায়ারকে চোর’ ও ‘মিথ্যুক’ বলায় এবং কোড লঙ্ঘনের দায়ে জরিমানা গুনতে হচ্ছে সেরেনা উইলিয়ামসকে। ইউনাইটেড স্টেটস টেনিস অ্যাসোসিয়েশন (ইউএসটিএ) সেরেনাকে ১৭ হাজার ডলার জরিমানা করেছে। ইউএস ওপেনের রানার্সআপ হওয়ায় ১.৮৫ মিলিয়ন ডলার প্রাইজমানি জিতেছেন সেরেনা। প্রাইজমানি থেকে জরিমানার অর্থ কেটে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ইউএসটিএ।
বিষয়টি নিয়ে বিবিসির টেনিস উপস্থাপক বলেছেন, ‘আম্পায়ার বইয়ে লেখা আইন অনুসরণ করছিলেন, কিন্তু সেরেনার কথায় যুক্তি আছে। এ জন্য বলছি, অনেক সময় বইয়ের লেখা আইনেরও পরিবর্তন আনতে হয়।’ আম্পায়ারের বিপক্ষে লিঙ্গবৈষম্যের অভিযোগ তুলেছেন সেরেনা। তাকে সমর্থন করেছেন কিংবদন্তি বিলি। তিনি টুইটারে লিখেছেন, ‘যখন কোনো মেয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে, তখন তাকে বলা হয় হিস্টিরিয়াগ্রস্ত। কিন্তু পুরুষরা একই জিনিস করলে বলা হয়, বাহ! এ তো খোলাখুলি কথা বলতে ভয় পায় না। ছেলেটার শাস্তিও হয় না। এটি পরিষ্কার দ্বিচারিতা। ধন্যবাদ সেরেনা উইলিয়ামস, এই দ্বিচারিতাকে সামনে নিয়ে আসার জন্য।’
ডব্লিউটিএ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ডব্লিউটিএ বিশ্বাস করে, কোর্টে ছেলে কিংবা মেয়ে খেলোয়াড়দের প্রকাশ করা আবেগের সহনীয় মাত্রা একই হওয়া উচিত। কোর্টে নারী-পুরুষ সব খেলোয়াড়কে যেন সমান চোখে দেখা হয়। সবার প্রতি একই বিচার প্রতিষ্ঠায় সংস্থা কাজ করে যাবে। আমরা বিশ্বাস করি না যে, ইউএস ওপেনের ফাইনালে সেরেনার প্রতি সেই আচরণ নিশ্চিত হয়েছে।’