আরেকটি অর্থনৈতিক মন্দা

বিশ্বচরাচর ডেস্ক : মাত্র এক বছর আগেও বিশ্ব অর্থনীতির গতি ছিল সবার জন্যে সন্তোষজনক। ২০১৭ সালে ব্রিটেন ছাড়া বৃহৎ অর্থনীতির অন্য দেশগুলো অর্থনীতির এ চাঙ্গা ভাব উপভোগ করেছে। বৈশ্বিক বাণিজ্যের হারও ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছিল। ফলস্বরূপ ব্যাপক লাভবান হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পৃথিবীর অপর প্রান্তেও ছিল একই চিত্র। অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কায় থাকা চীনও ঝুঁকি কাটিয়ে উঠেছে। এ দিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর অর্থনীতিতেও বইছিল সুবাতাস। কিন্তু মাত্র এক বছরেই পালটে গেছে সব।
২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সাল যে বিশ্ব অর্থনীতির জন্য কঠিন সময় তা স্বীকার করবেন যে কেউ। এ সপ্তাহে বিশ্বব্যাপী শেয়ারবাজারের উথাল-পাতাল অবস্থা রীতিমত বিনিয়োগকারীদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। এ বছরে দ্বিতীয় বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ধীরগতি ও দেশটির নতুন প্রণয়ন করা কঠিন অর্থনৈতিক নীতি এ ভয়কে ভালোভাবেই গেঁথে দিয়েছে।
২০১৮ সালে বিশ্বের অর্থনীতি উঁচু ও নিচু উভয় পথেই এগিয়ে চলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন অর্থনৈতিক পলিসির কারণে এ বছর দেশটির উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে ৪ শতাংশেরও বেশি। ১৯৬৯ সালের পর বর্তমানে সব থেকে কম বেকারত্ব রয়েছে দেশটিতে। তার পরেও আইএমএফ বলছে, এ বছর যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর সব বৃহৎ অর্থনীতির দেশের উৎপাদন ব্যাপক মাত্রায় হ্রাস পাবে। সত্যিকার অর্থেই বিশ্বজুড়ে উদীয়মান বাজার এখন ঝুঁকির মুখে রয়েছে। এটাই প্রমাণ করে দেশগুলোর অর্থনৈতিক পলিসিতে সমস্যা ছিল এবং রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ২০১৫ সালের ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ৮ বার সুদের হার বাড়িয়েছে। যেহেতু পৃথিবীর অন্য কোথাও এটি হয়নি তাই ডলার শক্তিশালী হয়েছে। এটি উদীয়মান এই বাজারের জন্য এখন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই ডলারে ঋণ আর পরিশোধ করতে পারছে না। একই সঙ্গে আর্জেন্টিনা ও তুরস্কের মতো দেশগুলো গভীর খাদে পড়েছে। এ দিকে, এ সপ্তাহে পাকিস্তান আইএমএফের কাছে বৃহৎ ঋণের আবেদন করেছে। দেশটির নতুন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী প্রথম দিকে যতই বলেছে তার দেশ আর বিদেশিদের উপর নির্ভর করবে না কিন্তু শেষমেশ দেশের অর্থনীতির করুণ হালই তাকে বাধ্য করল পূর্বসরিদের পথে পা বাড়াতে।
তবে, এর মধ্যে সুখবর হলো যে এক দশক আগে যখন বিশ্ব ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দা দেখেছিল তার তুলনায় বর্তমানে ব্যাংকিং সিস্টেম অনেক বেশি স্থিতিশীল রয়েছে। তাই সেরকম একটি ভয়াবহ মন্দার ঝুঁকি বর্তমানে বেশ কম। তাই যদিও বাজারের প্রকৃতির কারণে বিনিয়োগকারীরা অর্থনৈতিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন কিন্তু তাদের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা ঊর্ধ্বমুখীই ছিল। তবে, এখানেই শেষ নয়। যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে যে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেছে তার প্রভাব এখনো পুরোপুরি পড়তে শুরু করেনি। ভয়াবহ ধরনের ক্ষতির শিকার হওয়ার আশঙ্কা দু’পক্ষের মধ্যেই রয়েছে। ভয়ের কারণ রয়েছে আরো। সাম্প্রতিক রিপোর্টগুলো বলছে যুক্তরাষ্ট্রের ধনীরা একটা হালকা মাত্রার অর্থনৈতিক মন্দার জন্যেও প্রস্তুত না। মন্দা নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যেও রয়েছে আতঙ্ক। জার্মানিসহ উত্তর ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে এ ভয় রয়েছে যে মন্দার কারণে হয়তো রাষ্ট্রগুলো তাদের পাওনা ফেরত দিতে পারবে না। আসন্ন এ মন্দা প্রতিহত করার পথে রাজনীতি একটি বড় বাধা। ২০০৮ সালে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক সংকটের সময় অভূতপূর্ব আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতা বৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরি ছিল। কিন্তু পপুলিস্টদের উত্থানের কারণে এ ধরনের সহযোগিতার পথ কঠিন হয়ে গেছে। তার পরেও, সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারলে এখনো হয়তো আসন্ন মন্দার ক্ষতি কিছুটা কমিয়ে আনা যাবে।