নিজস্ব প্রতিনিধি : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের দিন নির্ধারণে সরকারের উচ্চ পর্যায় এবং নির্বাচন কমিশন দ্বিধায় পড়েছে। ২৭ ডিসেম্বর নির্বাচনের তারিখ স্থির করা হয়েছিল। ২৭ ডিসেম্বর নির্বাচন হবে বলে অর্থমন্ত্রীর আগাম ঘোষণা তালগোল পাকিয়ে দিয়েছে। এখন নির্বাচনের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর অথবা নতুন বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠানের প্রস্তাব সক্রিয় বিবেচনায় রাখা হয়েছে। তফসিল ঘোষণা করা হবে নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের শেষের দিকে।
বিএনপিসহ বিরোধীরা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড, ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে ভোটকেন্দ্র পর্যায়ে সেনা মোতায়েন, সংসদ বাতিল, তারেক রহমানের সাজানো মামলা বাতিল, সকল রাজনৈতিক বন্দীর মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবিতে রাজপথে সক্রিয় থাকলেও সরকার এ নিয়ে বিচলিত না হয়ে তাদের কর্মপরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণার পর বিএনপির নেতা-কর্মীরা ঢাকাসহ সারা দেশে কী ভূমিকায় অবতীর্ণ হন, তাও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণসহ প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে তারেক রহমানসহ অন্য আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা শুরু থেকেই দাবি করে আসছিলেন। এই রায়ই সরকারের বিএনপির নেতা-কর্মীদের সরকারবিরোধী আন্দোলন দমিত করার মুখ্য কৌশল। একই সঙ্গে সরকারি দল ও তাদের সহযোগীরা নির্বাচনী কার্যক্রম জোরালোভাবে শুরু করার মাধ্যমে বিরোধীদের নির্বাচনবিরোধী কার্যক্রম মোকাবিলার নীতি নিয়েছে।
নির্বাচনে অংশ নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত এবং এ ব্যাপারে প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিএনপি, জাতীয় ঐক্য, যুক্তফ্রন্ট কর্মসূচি ঘোষণা করতে যাচ্ছে। সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি এবং দেশবাসী ও আন্তর্জাতিক পরিম-লে সরকারের একগুঁয়েমিমূলক, কোনো রকম ছাড় না দেওয়া, আলোচনা-সমঝোতায় না আসার মানসিকতা অধিকতর স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে চূড়ান্ত পর্যায়ের কর্মসূচি দেবে বিরোধীরা। এতে রয়েছে সচিবালয় ঘেরাও, নির্বাচন কমিশন অবরোধ, বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দরসহ দেশব্যাপী রাজপথ-রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি। এর আগে ঢাকাসহ সারা দেশে মানববন্ধন, রাজপথে অবস্থানসহ বিভিন্ন অপেক্ষাকৃত নমনীয় কর্মসূচি দেওয়া হবে। স্বল্প সময়ের ব্যবধানে চূড়ান্ত কর্মসূচি দেওয়া হবে। এর অন্যতম হবে অসহযোগ। বিরোধীদের উদ্দেশ্য সরকারকে ন্যূনতম ছাড় দিতে এবং নির্বাচন পিছিয়ে নিতে বাধ্য করা। কিন্তু সরকারের ও আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের সূত্রে জানা যায়, বিরোধীদের দাবি অপূরণ রেখেই সরকার তার নির্বাচনী কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহের মধ্যে ছোট আকারে ২৫-২৭ সদস্যের মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে। নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার পর লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে দৃশ্যমানভাবে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেবে সরকার। সাংবিধানিক ব্যবস্থার বাইরে কোনো পদক্ষেপ নেবে না সরকার। তবে সাংবিধানিক ব্যবস্থার মধ্যেই মুখ রক্ষার ছাড় দেওয়ার চিন্তা রয়েছে উচ্চ পর্যায়ে। সচিবালয় ঘেরাও, রাজপথ-নৌপথ-রেলপথ-সমুদ্রবন্দর-বিমানবন্দর অবরোধসহ কর্মসূচি হিংসাত্মক হলে পুলিশ-বিজিবি দিয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেবে। কিছুদিন পর সেনাবাহিনীও মোতায়েন করা হবে।