আসন বিন্যাস না করেই নির্বাচনের প্রস্তুতি ইসির

ব্যালটেই ৩০০ আসনে ভোট

নিজস্ব প্রতিনিধি : সংসদীয় বিভিন্ন আসনের সীমানার প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে কার্যক্রম জোরালোভাবেই শুরু করেছিল নির্বাচন কমিশন। মুখের কথা আর বাস্তব কার্যক্রমে দেখা গেল বিস্তার তফাত। সীমানা নির্ধারণ, পুনর্নির্ধারণে কমিশন উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকাই পালন করেনি। বর্তমান সীমানাই তারা বহাল রেখেছে। মাত্র ছয়টি নির্বাচনী এলাকায় সামান্য পরিবর্তন আনা হয়েছে। নির্বাচনী এলাকাগুলোর ভোটার সাধারণের সমস্যার প্রতিফলন, তাদের চাওয়া-পাওয়ার কোনো প্রতিফলন ঘটেনি।
এদিকে ৩০০ আসনেই ব্যালটের মাধ্যমে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রাথমিক প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। যদিও কমিশন এর আগে ১৫০ আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিল। সে জন্য নতুন করে দুই লাখ ইভিএম কেনার প্রকল্পও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অর্থসংকটের কারণে আপাতত সেই প্রকল্প স্থগিত করা হয়েছে। তা ছাড়া ইসির সংগ্রহে থাকা দেড় লাখ ইভিএমের কিছু ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বাকিগুলোর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মেশিন কমবেশি ত্রুটিপূর্ণ। ফলে কমিশন ধারণা করতে পারছে না, এসব ইভিএম মেরামত করার পর তা দিয়ে কত আসনে ভোট করা যাবে বা আগামী সংসদ নির্বাচনে কতটি আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। তাই আপাতত ব্যালটেই এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি সচিবালয়। শুধু তা-ই নয়, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ এবং গাজীপুর, সিলেট, খুলনা, বরিশাল ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জন্যও ব্যালটের ব্যবস্থা করে রাখা হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, সংসদীয় এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণে জনশুমারি বিবেচনার দাবি রাখলেও এবার তা আমলেই নেওয়া হয়নি। নির্বাচনী এলাকার সমস্যা, মানুষের চাওয়া-পাওয়া উপেক্ষিত হয়েছে, যা অতীতে কোনো সময়েই হয়নি। নির্বাচন কমিশন এ কাজটি না করেই সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজ সমাপ্ত করেছে। সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হলে নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি হবে, অনেকে আদালতেরও আশ্রয় নিতে পারেন। প্রধানত এ ভয়েই নির্বাচন কমিশন নিজেদের যতটা সম্ভব গুটিয়ে রাখে। অথচ ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষার পাশাপাশি আদমশুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যার বাস্তবভিত্তিক বণ্টন জরুরি। এবার কমিশন তা করেনি। কোনো এলাকার ভোটার নির্বাচন কমিশনের এই আচরণের বিরুদ্ধে আদালতের আশ্রয় নিলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন করা কমিশনের পক্ষে সম্ভব না-ও হতে পারে। অবশ্য নির্বাচন কমিশন বিভক্ত সীমানার খসড়ার ওপর সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার মানুষের দাবি, আপত্তি উত্থাপন, তার ওপর শুনানির সুযোগ রেখেছে। তার পরই চূড়ান্ত সীমানা পুনর্নির্ধারিত হবে। কিন্তু সীমানা পুনর্নির্ধারণ প্রক্রিয়াই অনুসরণ না করায় গোড়াতেই সমস্যা রয়ে গেছে। তবে নির্বাচনী এলাকা নির্ধারণে নির্বাচন কমিশনকে একক ক্ষমতা দেওয়ার বিধান করায় সংক্ষুব্ধ সম্ভাব্য প্রার্থী বা তার সমর্থক কোনো ভোটার আদালতের শরণাপন্ন হয়েও সুবিধা করতে পারবেন না বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
জানা যায়, মাদারীপুর-৩, সুনামগঞ্জ-১, সুনামগঞ্জ-৩ ও কক্সবাজার-৩ আসনের সীমান্ত পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। আরো তিনটি আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের বিষয় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ভৌগোলিক অখণ্ডতার পাশাপাশি প্রশাসনিক সুবিধার দিক বিবেচনায় ঘরে বসেই নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্গঠন করা হচ্ছে। জনশুমারি, নির্বাচনী এলাকার জনসংখ্যা বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। এতে করে নির্বাচনী এলাকার ভোটারসংখ্যায় উল্লেখযোগ্য ব্যবধান থেকে যাবে। দেখা যাচ্ছে, একই জেলার একটি আসনে ভোটার সংখ্যা ৯ লাখ, ওই জেলারই অপর একটি আসনে ভোটারসংখ্যা তিন লাখ। এ ধরনের ব্যবধান দাঁড়াচ্ছে ৬০টিরও বেশি নির্বাচনী এলাকায়। যেসব নির্বাচনী এলাকার আয়তন অনেক বেশি এবং ভোটার সংখ্যাও উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি, সেসব নির্বাচনী এলাকার প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয় থাকছে সমান। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকাগুলোর প্রার্থীদের মধ্যে হতাশা, ক্ষোভ দূর করতে নির্বাচন কমিশন বাস্তবভিত্তিক কোনো ব্যবস্থাও নিচ্ছে না। এটিসহ আরো কিছু সমস্যা পূর্ববর্তী সংসদ নির্বাচনগুলোতেও ছিল। নির্বাচন কমিশন সেগুলোর প্রতিকার করেনি। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে সমস্যাগুলো অধিকতর তীব্র আকারে দেখা দেবে। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত প্রশ্নবিদ্ধ করার আইনগত সুযোগ না থাকায় প্রার্থী ও ভোটার সাধারণের হতাশা থেকেই যাবে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর দেড় লাখ ইভিএম কিনতে ৩ হাজার ৮২৫ কোটি ২৪ লাখ টাকার প্রকল্প পাস হয়। সেবার ভোটের আগে এত ইভিএম কিনলেও মাত্র ছয়টি সংসদীয় আসনে এই যন্ত্রের মাধ্যমে ভোট নেওয়া হয়। ইসির সংগ্রহে থাকা সেই ইভিএমের প্রায় সবগুলোই কমবেশি মেরামত করতে হবে। এ ছাড়া বেশ কিছু ইভিএম ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তাই আপাতত ব্যালটের প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হচ্ছে। আগামী ২৯ জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।