নিজস্ব প্রতিনিধি : ঢাকায় কিছু কর্মসূচি বাস্তবায়নে সফল হলেও তৃণমূলে ঠেকে গেল বিএনপি। ইউনিয়ন পদযাত্রা কর্মসূচি সফলভাবে পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে দলটি। সাবেক মন্ত্রী ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান তার নিজ জেলা নরসিংদীতে দাঁড়াতেই পারেননি। এ ছাড়া বড় কর্মসূচি দিয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশের বাইরে গেছেন চিকিৎসার জন্য। কেন্দ্রীয় নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ঢাকায় থাকলেও কেউই ইউনিয়ন পদযাত্রা কর্মসূচিতে অংশ নেননি।
সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের অংশ এবং ১০ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ১১ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। ১৬ বছরেরও বেশি ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি দেশের সাড়ে চার হাজার ইউনিয়নে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে। একইভাবে একই দিন আওয়ামী লীগ করেছে শান্তি সমাবেশ। ক্ষমতাসীন দল শক্তি প্রদর্শনে মাঠের কর্মসূচিতে শক্ত অবস্থান গড়তে পারলেও বিএনপি অনেক জায়গায় দাঁড়াতেই পারেনি। বিএনপির অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এবং আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ তাদের কর্মসূচিতে বাধা দিয়েছে। হামলা করা হয়েছে দেশের বহু স্থানে। বাধায়, সংঘর্ষে আহত ও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন কয়েক শ নেতাকর্মী।
জেলাভিত্তিক পুলিশের অভিযানে আটকের সংখ্যাও অনেক। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ভাঙচুর ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সেখানে ১৩টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে নারায়ণগঞ্জে, গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ২০ জন। খবর পাওয়া গেছে নরসিংদীতে বিএনপির কর্মসূচিতে লাঠিপেটা করেছে পুলিশ। নাটোরে বিএনপির মঞ্চ আওয়ামী লীগ দখলে নিয়ে শান্তি সমাবেশ করেছে। বগুড়ার আদমদীঘিতে বাধায় পণ্ড হয়ে গেছে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি। গাজীপুরে হামলায় বিএনপির ৯ নেতা আহত হয়েছেন। বরগুনার পাথরঘাটায় ছাত্রলীগের হামলায় বিএনপির সাত নেতা আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। যশোরে বিএনপির পদযাত্রার আগে ১২ নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ। লক্ষ্মীপুরে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ১৫ জন। নোয়াখালীতে পদযাত্রায় হামলায় আহত হয়েছেন ২২ জন। জামালপুরে সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ২৮ জন, আটক হন ছয়জন। ভোলায় হামলায় আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক।
বিএনপির ইউনিয়ন পর্যায়ের পদযাত্রা কর্মসূচি ঘিরে ভয়ভীতি দেখানো ও দমন-পীড়ন চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স। ১৩ ফেব্রুয়ারি দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করে বলেন, পদযাত্রা কর্মসূচি ঘিরে গ্রামেগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার রাজাকারদের মতো আচরণ করেছে আওয়ামী লীগের কর্মীরা। শান্তি কমিটির মতো সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছে তারা। তিনি বলেন, ইউনিয়ন পদযাত্রা কর্মসূচিকে ঘিরে নতুন ৪৫টি গায়েবি মামলা দেওয়া হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে তিন শতাধিক। এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়েছে ১ হাজার ৭০০ জনকে, অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ৪ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে। পাশাপাশি পুরোনো মামলায় গ্রেপ্তার ও হয়রানিও অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া নেতাকর্মীদের বসতবাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়েছে। প্রিন্স আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। সারা দেশে গণগ্রেপ্তারের পুরোনো খেলায় মেতে উঠেছে তারা।
এদিকে বিএনপির এই ইউনিয়ন পদযাত্রা কর্মসূচি নিয়ে দলের মধ্যেই নানা আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে এই কর্মসূচির যৌক্তিকতা নিয়ে। কর্মসূচির প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়েও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে দলের কর্মীদের মধ্যে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জাতীয় রাজনীতি হচ্ছে সম্পূর্ণ ঢাকাকেন্দ্রিক। যেকোনো আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র হলো ঢাকা। কিন্তু বিএনপি হঠাৎ ঢাকার বাইরে ইউনিয়নে ইউনিয়নে কেন কর্মসূচি দিল? দাবি আদায় করতে হলে কিংবা সরকারের পতন ঘটাতে চাইলে ঢাকাকে দখল করতে হবে। ঢাকা দখল ব্যতীত কোনোভাবেই দাবি আদায় বা আন্দোলন সফল হবে না। অতীতে যারাই ঢাকাকে দখল করতে পেরেছে কিংবা ঢাকাকে অবরুদ্ধ করতে পেরেছে, রাজনীতির সুবিধা তারাই ভোগ করেছে। এটা কেন্দ্রীয় নেতারাও বেশ ভালো করেই জানেন। এর পরও কেন ঢাকা ছেড়ে বিএনপি ইউনিয়নে গেল, সেটা বোধগম্য নয়।