নিজস্ব প্রতিনিধি : ৩০০ আসনে ইভিএমের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা ভেস্তে গেল। বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ অধিকাংশ বিরোধী দলের বিরোধিতার মুখে ইভিএম ব্যবহার যে বাস্তবসম্মত, গ্রহণযোগ্য নয়; সরকার এবং নির্বাচন কমিশন তা বিবেচনায় নেয়নি। কারণ, নির্বাচন কমিশন ৩০০ আসনে ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা নিয়েছিল প্রধানত বিএনপির ওপর কার্যকর চাপ রাখার জন্য। কিন্তু বিশাল অঙ্কের আর্থিক সম্পৃক্ততা ছাড়াও রয়েছে সময়স্বল্পতার সমস্যা।
নির্বাচন কমিশন ৩০০ আসনেই ইভিএমে নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা নিলেও দেড় হাজার ইভিএম কমিশনের হাতে রয়েছে। আরো দুই হাজার ইভিএম সংগ্রহের পরিকল্পনা নিতে ব্যয় হবে ৮ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। পরিকল্পনা কমিশন এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলে সংশোধিত প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণের জন্য বলে। সরকার থেকেও প্রশ্ন ওঠে, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ব্যয় সংকোচন নীতি নিয়েছে অনেক দেশই। বাংলাদেশও ব্যয় কমিয়ে আনছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। সেই অবস্থায় বিপুল ব্যয়সাপেক্ষ এ পরিকল্পনার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। এতে সরকার ব্যাপকভাবে সমালোচিত হবে আশঙ্কায় সরকার প্রকল্প ব্যয় যথাসম্ভব কমিয়ে আনার পক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়। সরকারের এ অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন ৩০০টির স্থলে ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহারের সংশোধিত সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা-ও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, কৌশলে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যে দেড়শ আসনের কথা বলা হলেও শেষ পর্যন্ত তা-ও করা যাবে না। নির্বাচন কমিশন শেষাবধি ৬০ থেকে ৭০টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করবে। এর মাধ্যমে ১৮ থেকে ২০টি আসনে নির্বাচনী ফলাফল ইভিএম-ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে সরকারি দলের পক্ষে আনার কৌশল নেওয়া হতে পারে। বিএনপি ইভিএমের ঘোরতর বিরোধী হলেও জাতীয় পার্টি তা নয়। তারা নির্দিষ্ট স্বল্পসংখ্যক আসনে ইভিএম ব্যবহার মেনে নেবে। কিন্তু ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত তারা মেনে নেবে না। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে।
প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক এই ব্যবস্থা ব্যবহারের পক্ষে তাদের জোরালো অবস্থান নির্বাচন কমিশনকে শক্তি জোগাচ্ছে। ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহারে সংশোধিত সিদ্ধান্তও বিএনপি মেনে নেবে না। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের মতে, ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত মূলত বিএনপির ওপর চাপ রাখার জন্য। সরকার ও নির্বাচন কমিশন শেষ পর্যন্ত সর্বাধিক ৭০টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করতে পারবে। বিএনপি তাতেও রাজি হোক না হোক নির্বাচন কমিশন এ থেকে সরে আসবে না। বিদেশিরা নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট বলে নির্বাচন কমিশন দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে বলেই জানা যায়। ইভিএমে টেকনিক্যাল সহকারী হিসেবে প্রশিক্ষিত, অভিজ্ঞ সেনাসদস্যদের নিয়োগ করা হবে। জাতীয় নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সাহায্যকারী হিসেবে রাখা হবে। তারা থাকবেন স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থানা সদরে এবং উপজেলার নির্দিষ্ট কিছু জায়গায়। সমস্ত নির্বাচনী এলাকায় তারা টহলে থাকবেন। উপজেলা ও ইউনিয়নের প্রধান সড়ক দিয়ে তারা টহল দিয়ে বেড়াবেন। কেন্দ্রভিত্তিক কোনো দায়িত্ব থাকবে না তাদের। এতে নির্বাচনে সন্ত্রাসী, ভোট চোর, জালিয়াতদের নিয়ন্ত্রণ করা নির্বাচন কমিশনের আয়ত্তের বাইরেই থেকে যাবে। কেন্দ্রভিত্তিক সিসিটিভি স্থাপনের ব্যাপারে কমিশনের পরিকল্পনা কতটা বাস্তবভিত্তিক, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সবগুলো কেন্দ্রে সিসি টিভি যদি স্থাপন করাও হয়, নির্বাচনের দিন নির্বাচন কমিশন বা জেলা, উপজেলা থেকে তা সর্বক্ষণ পর্যবেক্ষণ করাও সহজসাধ্য নয়। গাইবান্ধার উপনির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ঢাকায় বসে কয়েকটি কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করে বাহবা নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। সেই সঙ্গে এটাও প্রমাণ করেছেন, সিসিটিভি ব্যবস্থা কার্যকর করা সম্ভব না-ও হতে পারে। তার ওপর কেন্দ্রভিত্তিক সিসিটিভি সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে বিনষ্ট করতে পারে।
২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিন আগে নির্বাচন করতে হবে।
ইভিএম ব্যবহার হবে ৬০ কেন্দ্রে
নির্বাচনে সেনাসদস্যদের কেন্দ্রভিত্তিক দায়িত্বে নয়