ইমরুলময় এক জয়

স্পোর্টস রিপোর্ট : জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঘরের মাঠে জয় যেন অভ্যাসই করে ফেলেছে বাংলাদেশ। এর আগের দুই ওয়ানডে সিরিজেও হোয়াইটওয়াশ হয়ে ফিরেছে জিম্বাবুয়ে। তবু মিরপুরের অননুমেয় উইকেটই ভাবনা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আগের দিন সংবাদ সম্মেলনেও মিরপুরের ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ উইকেট নিয়ে শঙ্কা জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ দলপতি মাশরাফি বিন মুর্তজা। ম্যাচে সেই আশঙ্কাই সত্যে পরিণত হলো উইকেটে গতির ঝড় তুললেন জিম্বাবুয়ের দুই পেসার কাইল জারভিস ও তেন্দাই চাতারা। ১৩৯ রান তুলতেই ৬ উইকেট নেই স্বাগতিকদের। গভীর খাদ থেকে বাংলাদেশকে টেনে তোলেন ইমরুল কায়েস ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। ম্যাচসেরা ইমরুলের দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ভর করেই ৮ উইকেটে ২৭১ রানের লড়াকু পুঁজি গড়ে টাইগাররা। জবাব দিতে স্বাগতিকদের স্পিনে নাকাল জিম্বাবুয়ে ৯ উইকেটে স্কোরবোর্ডে তুলতে পারে ২৪৩ রান।

২৭২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা মন্দ করেনি জিম্বাবুয়ে। সতর্ক ব্যাট করে দুই ওপেনার হ্যামিল্টন মাসাকাদজা ও সিপাস জুয়াও উদ্বোধনী জুটিতে করেন ৪৮ রান। এরপরই দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ।

৫২ রানের ব্যবধানে প্রতিপক্ষের ৫ উইকেট তুলে নেন টাইগাররা। ১০০ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে চলে যায় জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশের উইকেট উৎসব শুরু মোস্তাফিজুর রহমানের হাত ধরে। দলীয় অষ্টম ওভারে প্রথমবার বল হাতে নিয়েই উইকেট তুলে নেন কাটার মাস্টার। নিজের প্রথম বলেই জুয়াওকে সরাসরি বোল্ড করেন। ২৪ বলে ৪টি চার ও ২টি ছয়ে ৩৫ রান করেন জুয়াও। এরপর দলীয় ৫৯ রানে ৫ রান করা ব্রেন্ডন টেলরকে বোল্ড করেন স্পিনার নাজমুল ইসলাম অপু। জিম্বাবুয়ে বড় ধাক্কাটা খায় চার রান বাদেই, দলীয় ৬৩ রানে অধিনায়ককে হারিয়ে। ভুল বোঝাবুঝিতে রানআউট হন সবচেয়ে অভিজ্ঞ ও নির্ভরযোগ্য মাসাকাদজা, ব্যক্তিগত ২১ রান করে। ইমরুলের দুর্দান্ত থ্রো ধরে উইকেট ভাঙতে একটুও বেগ পেতে হয়নি মুশফিকুর রহিমকে। সেখান থেকে দলের ইনিংস টানার চেষ্টা করেন ক্রেইগ আরভিন ও সিকান্দার রাজা। তবে দ্বিতীয় স্পেলে এসে অপু নিজের দ্বিতীয় শিকার তুলে নেন ৭ রান করা সিকান্দারকে বোল্ড করে। ১২ রানের ব্যবধানে ফিরে যান আরভিন। প্রথম স্পেলে খুব একটা ভালো করতে পারেননি মিরাজ। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরেই বোল্ড করেন আরভিনকে (২৪)। জুটি গড়ার চেষ্টা করেছিলেন পিটার মুর ও শন উইলিয়ামস। মুরকে নিজের দ্বিতীয় শিকার বানিয়ে ৪৫ রানের জুটি ভেঙে দেন মিরাজ। দলীয় স্কোরে ৩ রান যোগ হতেই রান আউট হন তিরিপানো (২)। দলীয় ১৬৯ রানে অষ্টম উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। মাভুতা ঝড় তোলার আগেই নিজের বলে রিটার্ন ক্যাচ নিয়ে তাকে থামিয়ে দেন মিরাজ। নবম উইকেটে ৬৭ রানের জুটিতে হারের ব্যবধান কমানোর চেষ্টা করেন উইলিয়ামস ও জারভিস। ৩৩ বলে ৩৭ করা জারভিসকে ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙেন মাহমুদউল্লাহ। ২ রানে চাতারা এবং ৫৮ বলে ৫টি চার ও একটি ছয়ে ৫০ করে অপরাজিত ছিলেন উইলিয়ামস। মিরাজ ৪৬ রানে ৩ ও অপু ৩৮ রানে ২ উইকেট নেন।

টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। দুই পেসার জারভিস ও চাতারার বোলিং তোপে নিজেদের খুঁজেই পাচ্ছিলেন না টাইগার ব্যাটসম্যানরা। উইকেটের পেছনে একের পর এক ক্যাচ দিয়ে আত্মঘাতী হচ্ছিলেন তারা। চাতারার প্রথম ৫ ওভারের ওই স্পেলটি ৫-১-২০-২, সেখানে জারভিসের ২-০-২-০ ব্যাটিং পাওয়ার-প্লের ১০ ওভারে বাংলাদেশের স্কোর ৩৯/২। বাংলাদেশের টপঅর্ডার আবারও ব্যর্থ। এশিয়া কাপের ফাইনালে সেঞ্চুরি করা লিটন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেননি। ষষ্ঠ ওভারের প্রথম বলে চাতারার বলে মিডঅফে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন লিটন (৪)। একই ওভারে অভিষেক ম্যাচে নামা ফজলে রাব্বি ফিরেছেন শূন্য রানে। শুরুর ধাক্কা সামলে নিয়ে মুশফিক আর ইমরুল মিলে গড়েন ৪৯ রানের দারুণ এক জুটি। মুশফিককে ১৫ রানে বিদায় দিয়ে জুটি ভাঙেন ব্রেন্ডন মাভুতা। এরপর ওপেনার ইমরুলকে সঙ্গ দিতে মাঠে নামেন মোহাম্মদ মিঠুন। দুইজনের ব্যাটে আশা জাগে বাংলাদেশের। দুইজন মিলে গড়ে তুলেন ৭১ রানের পার্টনারশিপ। বিপজ্জনক হয়ে ওঠা এ জুটি ভাঙেন কাইল জারভিস। নতুন স্পেলের দ্বিতীয় বলে কট বিহাইন্ড করে মিঠুনকে ফেরান এ পেসার। আউট হওয়ার আগে ৪০ বলে তিন ছক্কা আর এক চারে ৩৭ রান করেন তিনি। মিঠুনের পর ব্যাট হাতে ব্যর্থ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (০) এবং মিরাজও (৪)। মাত্র ১৩৯ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর বাংলাদেশের সামনে ২০০ রানও যেন দূরের বাতিঘর নিজের প্রিয় পজিশন ওপেনিংয়ে ফেরা ইমরুলই গড়ে দিলেন দুই দলের পার্থক্য। একপ্রান্ত আগলে রাখা ইমরুল সপ্তম উইকেটে সাইফউদ্দিনকে নিয়ে গড়লেন ১২৭ রানের অসাধারণ জুটি। দেশের হয়ে এ জুটিতে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়ার পথে ইমরুল খেলেন ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। আর সাইফউদ্দিনের ব্যাট থেকে এসে ক্যারিয়ারের প্রথম হাফসেঞ্চুরি। জারভিসের বলে কাটা পড়ার আগে নিজের তৃতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া ইমরুল ১৪০ বলে ১৩টি চার ও ৬টি ছক্কায় করেন ১৪৪ রান। আর চাতারার বলে মাভুতাকে ক্যাচ দেওয়ার আগে ৬৯ বলে ৩টি চার ও একটি ছয়ে কাঁটায় কাঁটায় ফিফটি করেন সাইফউদ্দিন। বিদায় নেওয়ার আগে অবশ্য জিম্বাবুয়ের দুই সফল পেসারকে এক হাত নেন ইমরুল ও সাইফ। ৪৬তম ওভারে চাতারাকে ২টি ছয় ও একটি চার হাঁকিয়ে ১৮ রান নেন। জারভিসের করা পরের ওভারে ২ চার ও এক ছক্কায় ১৮ রান তুলে নেন এ দুই ব্যাটসম্যান।

প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দন : জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথমটি দাপুটে জয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ২১ অক্টোবর রাতে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এর আগে সফরকারী জিম্বাবুইয়েকে ২৮ রানের ব্যবধানে সহজ জয় ছিনিয়ে আনে মাশরাফি বাহিনী। প্রথমে ব্যাট করা বাংলাদেশ নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৭১ রান করে। জবাবে পুরো ওভার খেললেও ৯ উইকেট হারিয়ে ২৪৩ রানের বেশি করতে পারেনি জিম্বাবুইয়ে।