ইমিগ্রেশনে প্রতারণা : অনেকেই ফেঁসে যেতে পারেন রিভিউতে

আমেরিকা শুধু ক্ষমতা, শৌর্যে-বীর্যেই শ্রেষ্ঠ দেশ নয়। আমেরিকার পরিচয় কেবল যুদ্ধবাজ দেশ বা পরাশক্তি নয়। অন্য দেশে মানবাধিকার নিয়ে যত প্রশ্নই তুলুক, নিজ দেশে তারা অনেক মানবিক। সব দেশের, সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের ঠাঁই হয় এই দেশে। আমেরিকা নিয়ে বাইরে অনেক সমালোচনা আছে, অনেক বিতর্ক আছে। দেশের অভ্যন্তরে অনেক অসংগতি, অনেক অপরাধ, মাস শুটিংয়ের মতো অনেক ঘটনাই ঘটছে। তবে কোনো কিছুই মাত্রাহীন, নিয়ন্ত্রণহীনভাবে হতে পারে না। দুটি কারণে- এক. আইনের শাসন এবং তার যথার্থ প্রয়োগ। দুই. জনমতের গুরুত্ব এবং মূল্য। কোনো প্রেসিডেন্ট, কোনো বিচারপতি, সর্বোচ্চ থেকে সর্বনিম্ন পর্যায়ের যেকোনো শ্রেণি-পেশার মানুষই হোক না কেন, একবার আইনের হাতে পড়লে, তাদের নিস্তার নেই। বিচার হবেই। দল পরিচয়ে, মর্যাদা পরিচয়ে, স্বজন পরিচয়ে কারও পার পাওয়ার উপায় নেই। জনমতকে উপেক্ষা করে কোনো শাসকের পক্ষেই কিছু করা সম্ভব হয় না।

আরেকটা হচ্ছে আমেরিকার মানবিক দিক। সমগ্র পৃথিবীর নিপীড়িত-অত্যাচারিত এবং বঞ্চিত, হতাশাগ্রস্ত, মানুষের আশার জায়গা, স্বপ্নহীন মানুষের স্বপ্নপূরণের জায়গা। ছোট-বড়, উচ্চ-নিম্ন সবাই স্থান পায় আমেরিকার বুকে। আমেরিকা সব হতাশাগ্রস্ত মানুষের আশার আলো। সবার জন্যই আমেরিকার দরজা খোলা। তাই তো বিশ্বের সব অভিবাসী মানুষের ভিড় জমে আমেরিকায়। সবাই মনে করে, আমেরিকার বুকে যদি স্থান মেলে, তাহলে তাদের দুঃখ ঘুচে যাবে। স্বপ্ন পূরণ হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হবে। তাদের শিক্ষা, কর্মসংস্থান, আর্থিক উন্নয়নের সম্ভাবনা উন্মুক্ত হবে।
তবে আমেরিকায় বৈধভাবে অভিবাসন নেওয়ার নীতিমালা না মেনে কেউ যদি মিথ্যা ও প্রতারণার আশ্রয় নেয়, তবে তাদের ভবিষ্যৎ ভালো হয় না। তারা বৈধতাপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হবে। আগেই বলা হয়েছে, আমেরিকা আইনের শাসনের কথা। তাই প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে কেউ রক্ষা পায় না। অভিবাসনে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ধরা পড়লে তাদের ‘আম-ছালা’ দুটোই যাবে। গেল সপ্তাহে (১৭ মে ২০২৩) ইমিগ্রেশনে এক ভয়ংকর প্রতারণার খবর পাওয়া গেছে। খবরটি ঠিকানার প্রধান শিরোনাম হয়ে প্রকাশিত হয়েছে। শিরোনামটি হচ্ছে ‘ইমিগ্রেশনে ভয়াবহ প্রতারণা’, উপশিরোনাম ‘অ্যাম্বেসি রিভিউতে বহু বাংলাদেশির অ্যাসাইলাম আবেদন’।

খবরটির শুরু হয়েছে এভাবে : ‘ল্যান্ড আর অপর্চুনিটির দেশ আমেরিকা।’ এই প্রবাদ বাক্যের বিপরীতে আরেকটি প্রবাদ হলো : ‘আমেরিকা বেশির ভাগের জন্য সুযোগের দেশ, সবার জন্য নয়।’ কিন্তু প্রায় সবাই প্রথম প্রবাদটির সুযোগ নিচ্ছেন হরহামেশাই। এই সুযোগ নিতে গিয়ে অনেকেই ইমিগ্রেশনে প্রতারণার আশ্রয় নিতে গিয়ে ফেঁসে যাচ্ছেন। ‘অ্যাম্বেসি রিভিউ’ বলে ইমিগ্রেশনে আবেদনকারীদের সত্যতা যাচাইয়ের প্রক্রিয়া হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় অনেকের অ্যাসাইলাম আবেদনে প্রতারণা ধরা পড়ছে। প্রতারকদের তালিকায় অনেক বাংলাদেশির নামও রয়েছে। এখন তাদের ভাগ্য অনিশ্চিত। জানা গেছে, একজন প্যারালিগ্যালের পরামর্শে দাখিল করা আটজনের আবেদনে একই রকম গল্প থাকায় ইমিগ্রেশনের সন্দেহ জাগে। এ কারণে আবেদনগুলো ‘অ্যাম্বেসি রিভিউতে’ পাঠিয়েছে। মিথ্যা প্রমাণিত হলে তাদের ভাগ্যে শিকে তো ছিঁড়বেই না, অন্য দুর্গতিও নেমে আসতে পারে। এ কারণে বাংলাদেশের দুর্নামও হবে। ফলে ভবিষ্যতে আবেদনকারীদের জন্য রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়া কঠিন হবে।

ইমিগ্রেশন আমেরিকার সবচেয়ে স্পর্শকাতর বিষয়। এ ব্যাপারে আমেরিকা সবচেয়ে বেশি সতর্কও। এ ক্ষেত্রে কারও পরামর্শে নিজের ক্ষতি এবং দেশের দুর্নামের কারণ হওয়াটা কাম্য নয়। আমাদের চোখের সামনে মিথ্যা পরামর্শে কাজ করতে গিয়ে ইতিপূর্বে ট্যাক্স ফাইল এবং রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদনে কৌশলের আশ্রয় নিয়ে অনেকের সর্বনাশ হওয়ার দৃষ্টান্ত রয়েছে। তাই আমাদের পরামর্শ হচ্ছে, কেউ এমন কিছু করবেন না, যাতে নিজের এবং দেশের ক্ষতি হয়। মনে রাখবেন, সততার জন্যও কিন্তু একটা পুরস্কার মেলে মানুষের জীবনে।