ইমিগ্রেশন ইস্যু মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকানদের জন্য শাঁখের করাত

কাজী ইবনে শাকুর : প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে জাতীয়ভাবে ক্রমাগত বিতর্ক সৃষ্টির প্রয়াস এবং সীমান্তে ইমিগ্রান্ট ঠেকানোর নামে ন্যাশনাল গার্ড নিয়োগ বস্তুত কংগ্রেসে রিপাবলিকানদের নাভিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে। রিপাবলিকানরা ২০১৮ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচন তাদের সফল ট্যাক্স কাটের ওপর ভর করে শেষ করতে চেয়েছিল। কিন্তু তাড়াহুড়ো করে ইমিগ্রেশন নিয়ে বিতর্ক উত্থাপনের মধ্য দিয়ে রিপাবলিকানরা এখন অনেকটা প্রমাদ গুণছেন।
নতুন করে ট্রাম্প যে ইমিগ্রেশন নিয়ে বিতর্ক শুরু করেছেন ইতিমধ্যে যে সব রিপাবলিকান কংগ্রেসগণ ট্যাক্স কেন্দ্রিক বিজ্ঞাপন তৈরি ও প্রচার করেছেন তাদের বক্তব্য অসার করে ফেলেছে। ট্যাক্স সংস্কারের বেনিফিটের প্রচার দিয়ে আর তেমন সুবিধা করা যাবে না। এই ইমিগ্র্যান্ট সংক্রান্ত বক্তব্য সেন্ট্রিস্ট রিপাবলিকানদের সংকটে ফেলেছে। যদি ট্রাম্প চান যে তার দল বিতর্কিত বৈধ ইমিগ্র্যান্টদের প্রতিবন্ধকতা নিয়ে কাজ করুক, তাহলে তা হবে আরও মুশকিলের। কারণ রিপাবলিকান সদস্যরা ডেমক্রেটিক নির্বাচনী এলাকার বিশেষ করে উপ-শহরের ডিস্ট্রিক্টসমূহ ধরে রাখতে চান। ট্রাম্প যেভাবে ইমিগ্রান্টদের ছুঁড়ে ফেলে দিতে চান সেখানে রিপাবলিকান সদস্যরা সেভাবে ইমিগ্রেশনের রাজনৈতিক গুরুত্বকে অস্বীকার করে না। মিট রমনীর সাবেক সিনিয়র অ্যাডভাইজার কেভিন মেডেন একথা বলেন। তিনি বলেন, উপশহর অঞ্চলের ডিস্ট্রিক্টসমূহ হাউজে সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘু সৃষ্টি করে। আর সেখানে ইমিগ্রেশনের চেয়ে অর্থনৈতিক ইস্যু বিশেষ করে ট্যাক্স কাট নিয়ে কথা বলা শ্রেয়।
ট্রাম্পের অনেক উচ্চপদস্থ সহকারী ও মিত্রকর্মী অনেক মাস যাবত টাক্স রিফর্মকে রিপাবলিকান দলের মধ্যবর্তী নির্বাচনের বৈতরণী পাড়ি দেয়ার ভিত বলে প্রচার চালিয়েছিলেন। গত মাসে রিপাবলিকানরা প্রমাদ গুনছেন যখন ট্রাম্প বিভিন্ন দেশ থেকে ইমপোর্টের ওপর বিভিন্ন কর বসিয়ে দিয়েছেন। আর তা গত বছরের ট্যাক্স রিফর্মকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। আমদানিকারকরা বেদিশায় পড়েছে। আমদানি কম হলে রাজস্ব কমে যেতে পারে। গত ৬ এপ্রিল শুক্রবার ট্রাম্পের সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক উপদেষ্টা রিপোর্টারদের ল্যারি কুডলো বলেছেন, তিনি অন্য কোনো কিছু দিয়ে কর রেয়াতের মাধ্যমে অর্জিত প্রশংসাকে ম্লান হতে দেবেন না।
তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের রাজনৈতিক সফলতা অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অবনতির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ইতিমধ্যে সীমান্তে ন্যাশনাল ট্রুপ পাঠানোর ব্যবস্থা করেছেন। তাছাড়া তিনি ইমিগ্রেশন ব্যবস্থায় যে ফাঁকফোঁকর রয়েছে তা বন্ধের জন্য ‘আইনগুচ্ছ’ রচনার কথা বলেছেন।
যখন মিডটার্ম নির্বাচনের প্রচারণা তুঙ্গে থাকবে তখন যে সব বিষয় এক সময় কংগ্রেসে স্থগিত ছিল তা সামনে নিয়ে আসা হবে। গ্রীষ্মকালীন অধিবেশনে কংগ্রেসে সীমান্তে নিরাপত্তা বিষয় প্রধান আলোচ্য বিষয় হবে।
রিপাবলিকান কৌশলী ফোর্ড ও’কনেল বলেছেন, যেভাবে অবৈধ ইমিগ্র্যান্ট ইস্যু রিপাবলিকানদের ঐক্যবদ্ধ করবে সেভাবে কর সংস্কার ঐক্যবদ্ধ করতে পারবে না। সোচ্চারে তারা সমাবেশে আসবে না।
ও’কনেল বলেন, রিপাবলিকান ভোটাররা দায়সারা গোছের। তারা ভাবেন যে, ট্যাক্স বিল দিয়ে হাউজ রিপাবলিকান দখলে রাখা যাবে না। হাউজ ধরে রাখতে রিপাবলিকানদের কর বিলের চাইতে বেশি কিছু করতে হবে।
ও’কনেল আরো বলেন, ট্রাম্প সীমান্ত নিরাপত্তার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা বাস্তবায়নে সীমান্ত নিরাপত্তায় সেনাবাহিনী নিয়োগ করা হলে তা আরও বর্ধিত সুবিধা দিতে পারে। ডেমক্রেটরা ইমিগ্র্যান্টদের ব্যাপারে মৌলিক অর্থে অনেক উদার একথা বারবার ট্রাম্পকে স্মরণ করিয়ে দিতে হবে। অন্যান্য রিপাবলিকানরা ট্রাম্পের ইমিগ্রেশন বিরোধী হাঁকডাক থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখছেন। তারা মনে করছেন অতিরিক্ত ইমিগ্রেশন বিরোধিতা তাদের ভরাডুবি ডেকে আনবে। সিনেটর মার্কো রুবিও’র সাবেক সিনিয়র অ্যাডভাইজার ও রিপাবলিকান কৌশলী আলেক্স ক্যান্ট মনে করেন, ট্রাম্পের শর্তে অনেক রিপাবলিকান নিজেদের জন্য সুবিধা মনে করে না।
তিনি বলেন, সুইং ডিস্ট্রিক্টসমূহে কর রেয়াত নিয়ে নির্বাচন সুবিধাজনক। ট্রাম্প তার বেইসকে ধরে রাখতে চায়।
ট্রাম্প ট্যাক্স নিয়ে রাউন্ড টেবিলে ট্যাক্স ছাড়া সবকিছু নিয়ে কথা বলেছেন। তার অবৈধ ইমিগ্রেশন নিয়ে কথা, সীমান্ত দেয়াল নিয়ে কথা, ভোটার ফ্রড নিয়ে নজির না দিয়ে ভুয়া কথা, সিনেটর জো মানচিনের পরাজয় নিয়ে, হতাশা নিয়ে মত দিয়েছেন। আগামী শীতে নির্বাচন নিয়ে কঠিন অবস্থায় রয়েছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প যেভাবে ইমিগ্রেশনকে জিম্মি করে সীমান্তে ন্যাশনাল গার্ড নামিয়েছেন তার নেতিবাচক প্রভাব আগামী নির্বাচনে পড়তে বাধ্য। শুধু তাই নয়, এই ব্যবস্থা রিপাবলিকান দলের মধ্যে ইতিমধ্যে হতাশার সৃষ্টি করেছে। দৃশ্যত ইমিগ্রেশন ইস্যু তার ভোটারদের উজ্জীবিত করলেও তা অধিকাংশ ক্ষেত্রে শাঁখের করাত হিসেবে কাজ করবে। নির্বাচনী ইস্যু হিসেবে যেমন তা উপশহরগুলো বা সুইং ডিস্ট্রিক্টগুলোতে অচল, তেমনি আবার তা ট্যাক্স রিফর্মের সুফলকেও করতে পারে ম্লান।