কাজী ইবনে শাকুর : ইমিগ্রেশন এর সাথে সম্পৃক্ত নয় এমন একটি কৃষি খামারে শ্রমিক যোগান সম্পর্কিত বিলে রিপাবলিকান কট্টরপন্থী ট্রাম্পবাদী কংগ্রেস সদস্যরা ভোট দেয়নি। কারণ তারা স্পিকার পল রায়ান ও অন্যান্য কংগ্রেস নেতাদের কঠোর ইমিগ্রেশন আইন পাস করার জন্য ভোট গ্রহণে অনীহা ও হতাশা প্রকাশ করেছে। ট্রাম্পের প্রিয়ভাজন এসব রিপাবলিকান সদস্যরা এককাট্টা হয়ে ইতিপূর্বে কঠোর আইন প্রণয়নে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবকে সম্মান দিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন স্পিকার পল রায়ান বরাবরে। তাদের সংখ্যা ছিল ২০। অথচ কৃষি খামার বিল একটি পলিসি বিল। তার সাথে ইমিগ্রেশন আইনের সম্পর্ক নেই। আর কট্টরপন্থী রিপাবলিকানরা তাতে ভোট না দিয়ে নিজ দলের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অনেকটা যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। রিপাবলিকান নেতারা একদিকে কৃষি খামার বিল পাসের চাপ ও অন্যদিকে ট্রাম্পের কঠোর ইমিগ্রেশন নীতি পাস করার চাপের মুখে এক টানাপড়েনের মধ্যে পড়েছে।
দলের সেন্ট্রিস্ট বা মধ্যপন্থী নেতারা যখন এদেশে শিশু হিসেবে আসা অবৈধ ইমিগ্র্যান্টদের বৈধতার জন্য একটি বিল নিয়ে কাজ করছেন তখন প্রতিনিধি পরিষদে কট্টরপন্থীরা যে নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে তা ফিরে পেতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।
এসব অবোধ হিসেবে আসা শিশুরা আজ বড় হয়ে এদেশের স্বপ্ন দেখছে। আর তাদের আশাকে নস্যাৎ করার জন্য কট্টরপন্থী রিপাবলিকানরা ‘ড্রিমারদের’ জন্য আইনের সাথে মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের জন্য অর্থ অনুমোদনের শর্ত জুড়ে দিতে চায়। আর চায় ইমিগ্রান্টদের জন্য অভয়নগরী সমূহের ব্যবস্থাদি বেআইনি ঘোষণা করতে। এর চাইতে কোন কিছু কম হলে তা হবে এ বছরের মিডটার্ম নির্বাচনের পূর্বে রিপাবলিকান গোঁড়া বেসসমূহের লোকদের সাথে বেইমানী। আর মধ্যপন্থী নমনীয় রিপাবলিকানরা যারা নিজেদের নির্বাচনী এলাকায় বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর তুলনামূলক সমান বিচরণ ক্ষেত্র থেকে এসেছেন তারা চায় ডেমোক্রেটদের সাথে আপস করতে এবং কোন ভোটকে জোরপূর্বক আদায়ের জন্য আইনগত প্রক্রিয়াকে স্বখাতে ব্যবহার করতে চায় না। নেতারা হিসপ্যানিক ভোটারদের জয় করার জন্য নমনীয় লাইন বেছে নিয়েছিলেন। কিন্তু ট্রাম্পের বিজয় সেই অংককে গোলমেলে করে দিয়েছে। এখন রক্ষণশীলরা ডেমোক্রেটদের সাথে কোনো আপসকামিতায় যাওয়ার বিরুদ্ধে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তারা ইমিগ্রেশন বিল পাসে প্রয়োজনীয় ২১৮ ভোট পেতে যারপরনাই প্রয়াস চালাচ্ছে। হাউজ ফ্রিডম ককাসের কঠিন রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান স্কট প্যারী বলেন, হাউজে ২১৮ ভোটের জন্য গতবারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল এই লক্ষ্যে। যা অধিকাংশ আমেরিকার জনগণ চায়, এই বিষয়টি হাউজ জানে।
২০১৬ সালের নির্বাচনের প্রচারণা শুরুর পর ইমিগ্র্যান্ট মায়ের পুত্র ও ইমিগ্র্যান্ট দাদার নাতি ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার অবৈধ ইমিগ্র্যান্ট বিরোধী প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন। আর তিনি প্রচারণা চালিয়েছেন বর্ডার ওয়ালের পক্ষে। রায়ান বলেছেন, তিনি ইমিগ্রেশন নিয়ে এমন কোনো বিল হাউজের ফ্লোরে রাখতে চান না যাতে প্রেসিডেন্টের সমর্থন নেই। কিন্তু সে জন্য কি প্রয়োজন হবে তা পরিষ্কার নয়।
ব্যক্তিগতভাবে হোয়াইট হাউজ কর্মকর্তারা একটা ইমিগ্রেশন সমঝোতা প্রতিষ্ঠিত হবে কিনা তা নিয়ে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছেন। ট্রাম্পও তার সীমান্ত দেয়াল তার আশানুরূপ কা- পায়নি বলে হতাশ। এই কারণে হোয়াইট হাউজ ২০১৯ সালের বাজেটে ১.৬ বিলিয়ন ডলার বাজেট ২.৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার অনুরোধ জানাবে বলে এই বিষয়ে ওয়াকিবহাল মহল সূত্রে জানিয়েছে।
রায়ানের উত্তরাধিকার নির্বাচনেও এই বিতর্ক কংগ্রেসের বিতর্কে আসবে। কারণ রায়ান এই বছরের শেষে কংগ্রেসে থাকছেন না। তার দুই মেজরিটি নেতা ক্যালিফোর্নিয়ার ক্যাবিন ম্যাককালী ও মেজরিটি হুইপ লস এঞ্জেলেসের স্টিভ স্কালাইস যদি নেতৃত্ব দিতে চায় তাহলে তাদের কট্টরপন্থীদের সমর্থন লাগবে।
মধ্যপন্থী রিপাবলিকানরা ‘ডাকা’ বা শিশুকালে আগত অবৈধ ড্রিমারদের সিটিজেনশীপ দেয়ার পক্ষে। কিন্তু রিপাবলিকান কট্টরপন্থীরা ভর করে যে, এই ধরনের একটি বিল সংখ্যালঘু রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটদের ভোটে পাস হয়ে যাবে। কিন্তু তারা এককভাবে দাঁড়াতে চায় একটি কঠিন কঠোর কট্টরপন্থী বিল নিয়ে একথা জেনেশুনে যে, তা পাসে ব্যর্থ হবে কিন্তু তা মধ্যপন্থীদের প্রয়াসকে নস্যাৎ করবে। ফ্রিডম ককাসের চেয়ারম্যান রিপাবলিকান মার্ক মিডোস (নর্থ ক্যারোলিনা) বলেন, এই গ্রুপ ভোট স্থগিত রাখতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যাতে নীতি-নির্ধারণী ফার্ম বিল পাস না হয়। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটা পুরোপুরি পরিষ্কার নয়, কিভাবে আগামী মাসে হাউজ ফ্লোরে তা বিবেচিত হবে।
মিডোস বলেন, আশা করছি ফার্ম বিলও ইমিগ্রেশন বিল এক সাথে ঠিক করা হবে। আমি মনে করি এই পর্যায়ে আমাদের প্রকৃত অর্থে প্রয়োজন ইমিগ্রেশন বিল কার্যকরভাবে সমঝোতা স্থাপন এবং আশা করছি তা সম্ভব।
ইমিগ্রেশনের অনেক বিশদ বিবরণ ঠিক করা এখনও বাকি। আর তা বাকি রেখে কিভাবে ইমিগ্রেশন বিল পাস হবে তা বলা দুষ্কর। রিপাবলিকান জেমস ডেনহেস বলেন ‘অবকাঠামো নিয়ে আমরা একমত কিন্তু বিলের বিশদ বিষয় নিয়ে আমরা সম্মত নয়।’
কিন্তু উভয়দলীয় আইন পাস করার জন্য অনেক ভোট রয়েছে। আর ইমিগ্রেশন নিয়ে বিতর্ক রিপাবলিকানদের বিভক্ত করবে। আর তাতে কোন না কোন অংশকে বিলের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলবে।
কট্টরপন্থীরা বলেন, আমরা এক সাথে ‘ডাকা’ চাই আবার সীমান্ত সুরক্ষা করতে চাই।
রিপাবলিকান গুডল্যাট্টি-ম্যাককাউল বিল সীমান্ত দেয়াল নির্মাণের অনুমতি, অভয়নগরীর ইমিগ্র্যান্টদের ওপর ক্র্যাকডাউন এবং তিন বছরের গেস্ট ওয়ার্কার পারমিট প্রদান যাতে সিটিজেনশীপের কোন সুযোগ থাকবে না। নেতারা ও কট্টরপন্থীরা রাজি হয়েছে যে, এই বিল পাস হবার মতো ভোট নেই। ট্রাম্পের ভূমিকা হবে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি যদি এখানে জড়িত হতে চান এবং হাউজের ভোটে সরাসরি নাক গলান তিনি একটা ইতিবাচক ফল নিয়ে আসতে পারেন। কিন্তু তিনি যদি সমাবেশ করে সমর্থকদের চিৎকার- ‘সেই দেয়াল বানাও’ ধ্বনি শুনে শুনে সময় শেষ করে তাহলে হাউজ নেতারা কিছুই করতে পারবে না বলে অনেকে মনে করেন।
মডারেট রিপাবলিকানদের বিলে আর মাত্র ৫ জন রিপাবলিকানদের ভোটের দরকার। অর্থাৎ যে বিলে কট্টরবাদীদের সমর্থন নেই। সেটা পাস করতে ৫ জন রিপাবলিকান দরকার। আর ইতিমধ্যে সমর্থন পেয়ে গেলে ২৫ জুন পুরো হাউজের ভোটে তা তোলা যাবে। কিন্তু রিপাবলিকান নেতারা সেই ইভেন্ট পরিত্যাগ করতে চায়। আর তারা এমন এক বিল তৈরি করতে চান যাতে অধিকাংশ রিপাবলিকান খুশি হয়। নভেম্বর নির্বাচনে তাদের চোখ আছে। এবং তারা চায় না তাদের নির্বাচকম-লী তাদের বিরুদ্ধে থাক।
ফার্ম বিল ব্যর্থ হওয়ার অনেক রিপাবলিকান সদস্য ক্ষুব্ধ হয়েছেন। কারণ তারা তাদের কৃষকদের খুশি করতে পারেননি। নেহায়েত রাজনৈতিক ফায়দার জন্য তারা এই প্রয়োজনীয় বিলে ভোট দেয়নি বলে অনেক রিপাবলিকান ক্ষোভ জানিয়েছেন। ইলিনয় কংগ্রেসম্যান বোস্ট তাদের একজন। সিনেটে এই ফার্ম বিল নাকচ হয়েছে সম্ভবত। কারণ দেখা গেছে ফুড স্ট্যাম্প গ্রহীতাদের সেই বিল অনুসারে কাজ করার প্রয়োজন থাকবে। সিনেট এখন উভয়দলের সমঝোতার নতুন ফার্ম বিল তৈরি করছে। হাউজকে সে বিলে সম্মতি দিতে হবে যদি তারা ট্রাম্পকে সই করার জন্য কিছু দিতে চায়। বর্তমান আইন ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বলবত থাকবে।
ট্রাম্প হাউজের বিলের পক্ষে ফুড স্টাম্পের জন্য কাজ করাতে চায়, কিন্তু বিল পাস না হওয়ায় তিনি হতাশা ব্যক্ত করেছেন।
ফার্ম বিল ও ইমিগ্রেশন বিল রিপাবলিকানদের দ্বিধাবিভক্ত করেছে। সম্ভবত এই ইমিগ্রেশন ইস্যু আগামী দিনে আমেরিকার রাজনীতিকে দাড়িপাল্লায় ওজন দেবে। আর সে ওজনে এদেশের মানুষ অবশ্যই ভালো কিছু বেছে নেবে। এই রাজনীতি এখন থেকে শুরু আর আর তার শেষ হবে ২০২০ সালের নির্বাচনে।