ঠিকানা অনলাইন : নারীর পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে ইরানে আন্দোলনরত বিক্ষোভকারীরা দেশটির ইসলামি বিপ্লবের নায়ক প্রয়াত আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিওতে দাবি করা হচ্ছে, বিক্ষোভকারীরা প্রয়াত নেতা আয়াতুল্লাহর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। তবে দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বিক্ষোভকারীদের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। খবর আল জাজিরার।
তবে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এবং ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি বলেছে, তারা ভিডিওগুলোর অবস্থান যাচাই করে দেখেছে। এতে দেখা যায়, ইরানের ইসলামি বিপ্লবের প্রয়াত নেতার বাড়িটিই আগুনে পুড়ছে এবং মারকাজি প্রদেশের খোমেইন শহরে বিক্ষোভকারীদের মিছিল চলছে। তবে রয়টার্স এবং এএফপি ভিডিওগুলো ধারণের তারিখ স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করতে পারেনি বলে জানিয়েছে।
খোমেনির বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার দাবি অস্বীকার করে ইরানের আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা তাসনিম বলেছে, খোমেনির বাড়ির বাইরে অল্প সংখ্যক মানুষ জড়ো হয়েছিল। তবে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার খবরটি মিথ্যা। ইসলামি বিপ্লবের প্রয়াত নায়কের বাড়ির দরজা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে। ১৯৮৯ সালে খোমেনির মৃত্যুর পর তার বাড়িটি জাদুঘরে পরিণত করা হয়।
ইরানের সরকারবিরোধী আন্দোলনকারীদের নেটওয়ার্ক ১৫০০-তাসভির বলেছে, ইসলামি বিপ্লবের প্রয়াত নেতা খোমেনির বাড়িতে বৃহস্পতিবার অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
গত সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে সঠিক নিয়মে হিজাব না পরার কারণে ইরানের নৈতিকতা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর মারা যান ২২ বছর বয়সী মাহসা আমিনি নামের এক তরুণী। তার মৃত্যুর পর ইরানজুড়ে নারীর পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়, যা পরে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে রূপ নেয়। বিক্ষোভ দুই মাস পেরিয়ে তিন মাসে পড়েছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা বলেছে, সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভে ইরানের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহিংসতায় অন্তত ৪০০ বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। তবে ইরানি কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভে হতাহতদের ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনো পরিসংখ্যান এখনো প্রকাশ করেনি।
চলতি সপ্তাহে ২০১৯ সালের প্রাণঘাতী বিক্ষোভের বার্ষিকী উপলক্ষে দেশটিতে নতুন করে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। ওই বছর ইরানে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে লোকজন রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সে বছর দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনী দেড় হাজার বিক্ষোভকারীকে হত্যা করে বলে অভিযোগ রয়েছে।
মাহসা আমিনির মৃত্যু ঘিরে বুধবারও দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় খুজেস্তান প্রদেশের ইজেহ শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। ওইদিন এই শহরে গুলিতে অন্তত সাতজনের প্রাণহানি ঘটেছে। নিহতদের মধ্যে ৯ ও ১৩ বছর বয়সী দুই শিশুও রয়েছে। এই সহিংসতার জন্য সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা ইরানি কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেছে। যদিও দেশটির সরকার বলেছে, মোটরসাইকেলে করে এসে দুই বন্দুকধারী জনতার ওপর গুলি চালিয়েছে।
ঠিকানা/এনআই