কামরুন আক্তার :
সামনে ঈদ। তানজির কিছুদিন হলো ইউরোপে প্রবেশ। প্রায় দুই বছর হলো তার বিদেশের জীবন। এরই মধ্যে দুই সন্তানের মা। পারিবারিক জীবনের সঙ্গে বিবাহিত জীবনের বহু তফাত। তবু তার বিদেশ অনেক ভালো লাগে আর এই ভালো লাগা হতেই ভালোবাসা। সেই ভালোবাসা সংসারের জন্য, স্বামীর জন্য আর দুটো ফুটফুটে বাবুর জন্য। অনেকবার সে মাকে বিদেশের মাটিতে আনার ইচ্ছা করেও পারেনি। কারণ এখানকার নিয়মের অনেক কঠোরতা। কিন্তু তার বান্ধবীরা কী সুন্দর তাদের মায়েদের নিয়ে চলে গেল উন্নত দেশ আমেরিকায়। সে তার কষ্টের কথা বলতে গেলেই মা জানিয়ে দেয় তার অতীত ইতিহাস। এই ইতিহাস সে বহুবার শুনেছে, তবু মা তা মনেই রাখতে পারে না, বরং বলতেই থাকে সে।
আজ হতে তিরিশ বছর আগে…! তাই মাকে সে অনেক কিছু বলতে নারাজ। নিজেই নিজেকে সান্ত্বনা দিতে থাকে আর মোনাজাতে বলে, ‘আল্লাহ, তুমি আমার ধৈর্যশক্তি বাড়িয়ে দাও।’ তার সব সমস্যা দুই বছরের কন্যাসন্তানটি। যখন মেয়েটি একেবারে ছোট ছিল, তখন তাকে ঘিরে ছিল তার রাজ্যের জল্পনা-কল্পনা। কখনো তাকে মুকুট পরিয়ে স্বামীকে ডেকে বলত, ‘সে আমার জীবনের প্রথম রাজকন্যা।’ কখনো মেকআপ দিয়ে সাজিয়ে দেখত তার মেয়েটিকে বউ সাজলে কেমন লাগবে আর তার মনের এই উঁকিঝুঁকিগুলো ছবি তুলে মাকে পাঠাত।
কিছুদিন ধরে তানজি লক্ষ করল, মেয়েটি কিছু খেতে পারছে না। শুরু হলো শারীরিক সমস্যা। একই সঙ্গে তার সাংসারিক জীবনের সমস্যা। এত আদরের কন্যাসন্তানের সবকিছুতেই তার বিরক্তির কারণ! এরই মধ্যে সে আবার দ্বিতীয় সন্তানের মা হলো। এবার সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে তার নাভিশ্বাস উঠে যায়। নতুন বাবুর জীবনে প্রথম ঈদ। পাঞ্জাবিতে কেমন মানাবে, তাই তার খুব দেখতে ইচ্ছা হলো। বাবুর দিকে তাকায় আর রঙিন স্বপ্ন দেখে। সে কত রকম কল্পনা! একদিন তারা বুড়ো হবে, আর সব দায়িত্ব আসবে তার এই বাবুর কাঁধে। হঠাৎ চিৎকারে তার ধ্যান ভাঙে। মেয়েটি তার বাবুর গালে দুটো চড় বসিয়ে দিয়ে গেল। যখনই মারতে গেল, তার মায়ের কথা মনে পড়লে চুপসে গেল।
মা বলেছিলেন, ‘খবরদার, আমার নাতনির গায়ে হাত তুলবে না। কারণ সে আমাদের আনন্দ, সে আমাদের রঙিন স্বপ্ন।’ মা যে কী বলে! একবার এসে দেখে যাক না তার রঙিন স্বপ্ন আমার জীবনকে কীভাবে কালো রং দিয়ে সাজিয়ে রেখেছে। কিছুদিন পরই ঈদের আগমন হবে, কত কিছুর যে দরকার তার হিসাব মেলাতে গিয়ে বসতে না বসতেই তার কন্যাসন্তানটি পুরো এক জগ পানি ফেলে দিয়ে বলছে, এটা তার বাথটাব, এখানে সে গোসল করবে! যখন এই সমস্যা, তখন ছোট বাবুর সে কী কান্না। তানজি কী করবে কেবলই ভাবছে, তখনই কলিং