ঈদের ছুটিতে সড়কে ঝরল ৩৩ প্রাণ

ফাইল ছবি

ঠিকানা অনলাইন : বৃষ্টির বাগড়া সত্ত্বেও যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা ও উৎসবের আমেজে উদযাপিত হয়েছে পবিত্র ঈদুল আজহা। তবে ঈদের এই আনন্দঘন সময়েও অনেক পরিবারে নেমেছে শোকের ছায়া। সড়ক দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে তাদের প্রিয়জনকে।

২৭ জুন মঙ্গলবার থেকে ১ জুলাই শনিবার বিকেল পর্যন্ত শুরু হওয়া ঈদের ছুটিতে পাঁচ দিনে ঝরেছে অন্তত ৩৩ প্রাণ। এর মধ্যে বেশি মৃত্যু হয়েছে বেড়াতে গিয়ে। আর দিনের হিসাবে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি হয়েছে ঈদের দিন বৃহস্পতিবার ও তার পরদিন শুক্রবার। এ দুই দিনেই ২১ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া ঈদের ছুটি শুরুর দিন মঙ্গলবার পাঁচজন, ঈদের আগের দিন বুধবার পাঁচজন এবং শনিবার বিকেল পর্যন্ত দুজনের মৃত্যু হয়েছে।

এলাকার হিসাবে বগুড়ায় পাঁচজন; রাজধানী, গাইবান্ধা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও সিরাজগঞ্জে চারজন করে; টাঙ্গাইলে তিনজন; মুন্সীগঞ্জ ও লক্ষ্মীপুরে দুজন করে এবং চুয়াডাঙ্গা, যশোর, কিশোরগঞ্জ, রংপুর ও রাজবাড়ীতে একজন করে নিহত হয়েছেন।

ঈদের দিন বৃহস্পতিবার সিরাজগঞ্জের সলঙ্গায় ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে চারজন নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হন আরও দুজন। ওই দিন সকালে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কের সলঙ্গা থানার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের পুকুরপাড় এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন গাইবান্ধা সদরের ফুলকড়ি গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে সুজন (৩০), একই জেলার সাঘাটা থানার হাসিলকান্দি গ্রামের সবুজ আলীর ছেলে রাব্বি (২৫), নাটোরের বেড়াবাড়িয়া এলাকার সোহরাব আলীর ছেলে রানা (৩২) ও নাটোরের বাগাতিপাড়া থানার তমালতলা এলাকার শরিফুল ইসলামের ছেলে আয়ান (৪)।

সলঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, গরু বিক্রি করে একটি পিকআপ ভ্যানে ঢাকা থেকে রাজশাহীর দিকে যাচ্ছিলেন তারা। একই সময় রাজশাহীর দিক থেকে আসা ঢাকাগামী একটি ট্রাকের সঙ্গে পুকুরপাড় এলাকায় সেই পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই চারজনের মৃত্যু হয়।

এদিন সকাল সাড়ে নয়টার দিকে বগুড়ার শিবগঞ্জের মোকামতলা বাজারে ঈদের নামাজ শেষে ফেরার পথে ট্রাকের ধাক্কায় নিহত হন মোস্তফা কামাল (২৭) নামের এক ব্যক্তি। তিনি স্থানীয় একটি মসজিদে খতিবের দায়িত্ব পালন করতেন।

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলায় ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারান আকুব্বর আলী (৬৫) নামের এক ব্যক্তি। যশোরের শার্শায় বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে বেরিয়ে প্রাইভেট কারের ধাক্কায় বিপ্লব হোসেন (১৪) নামে মোটরসাইকেল আরোহী এক কিশোর নিহত হয়।

ওই দিন সকাল সোয়া ৮টার দিকে রংপুর মহানগরীতে বাসের সঙ্গে একটি পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষে মিনহাজুল ইসলাম নামে একজন নিহত হন। তিনি পিকআপটির চালক ছিলেন।

এদিন বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে বেরিয়ে রাজবাড়ীতে মাইক্রোবাসের চাপায় সজীব মোল্লা নামের এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হন। তিনি নৌবাহিনীর এন্ট্রি কর্মকর্তা ছিলেন।

বেশি মৃত্যু ঈদের পরদিন

ঈদের ছুটির ফাঁকা রাস্তায় দুর্ঘটনা বেশি ঘটেছে ঈদের পরদিন শুক্রবার। এদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনায় ১২ জনের প্রাণহানি হয়েছে।

শুক্রবার বিকেলে টাঙ্গাইলে বন্ধুরা মিলে একটি অটোরিকশায় ঘুরতে বের হন। ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গায় পৌঁছালে যাত্রীবাহী বাসের চাপায় তিনজন নিহত হন।

এদিন লক্ষ্মীপুরে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণ হারান শাফায়েত হোসেন (১৮) ও রাজন হোসেন (১৮) নামের দুই তরুণ।

শুক্রবার মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি উপজেলার বেশনাল এলাকায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ যায় জিসান রাজা (১৭) ও আপন মালত (১৬) নামে দুজনের। উপজেলার দীঘিরপাড় বাজার থেকে পুরা বাজারের দিকে যাওয়ার পথে রাত ১০টার দিকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে মোটরসাইকেলসহ পুকুরে পড়েন তারা।

একই দিন গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় প্রাইভেট কারের চালকসহ দুজন নিহত হন।

এদিন মধ্যরাতে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানার কুর্মিটোলা এলাকায় প্রাইভেট কারের ধাক্কায় মোটরসাইকেলচালক ও আরোহী নিহত হন। এরা হলেন জান্নাত আক্তার (১৮) ও মো. শামীম (৩৫)।

এদিন বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় বাসচাপায় জয় কুমার দাস (৫৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়।

ঠিকানা/এনআই