ঠিকানা রিপোর্ট : বাঙালি মাত্রই উৎসবপ্রিয়, আপন সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যপ্রিয়। প্রবাসে যারা থাকেন তারা স্বদেশের এবং শিকড়ের তীব্র, টান অনুভব করেন প্রতি মুহূর্তে। তাই যে কোন উপলক্ষে তারা নিজেদের শিল্প-সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে সাড়ম্বর আয়োজনে মেতে ওঠেন। এসবের মধ্যে বাংলা নববর্ষ সবচেয়ে বড় সাংস্কৃতিক উৎসব। নববর্ষের উৎসব সব ধর্ম, সব সম্প্রদায়, সব রাজনৈতিক বিশ্বাসের উর্ধ্বে সর্বজনীন এবং অসাম্প্রদায়িক উৎসব।
অন্যান্য বছরের মতো এবারও তাই প্রবাসে বিশেষত নিউইয়র্কে বসবাসরত বাঙালিরা সাড়ম্বর উৎসবে মেতেছিল বাংলা নববর্ষ ১৪২৫ বঙ্গাব্দকে ঘিরে। জেবিবিএ, ড্রামা সার্কেল, বিপা, বাংলাদেশ উইমেন্স ফোরাম, বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরাম, ব্রঙ্কসের বাংলাদেশি আমেরিকান কালচারাল এসোসিয়েশনসহ আরো বেশ কয়েকটি সংগঠনের আয়োজনে মানুষের ঢল নেমেছিল। প্রকৃতিও যেন হঠাৎ করেই উদার হয়ে উঠেছিল। বাংলা নববর্ষ ১৪২৫ এর প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ এবং দ্বিতীয় দিন ২ বৈশাখ দু’দিনই নিউইয়র্ক হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশিদের উৎসবের নগরী।
পার্কচেস্টারে ঘরোয়া আয়োজনে বাংলা বর্ষবরণ
ব্রঙ্কস ব্যুরো : বিগত বছরের জরা, দুঃখ, হতাশা, গ্লানিকে বিদায় দিয়ে নতুন বর্ষকে বরণ করতে নিউইয়র্কের বিভিন্ন স্থানে চলছে বর্ষবরণ আয়োজন। এমনি একটি আনন্দঘন বর্ষরণের আয়োজন ছিল এটর্নি এন মজুমদার ও রেক্সোনা মজুমদারের গৃহে। এই উপলক্ষে তার বাড়ির আঙ্গিনায় বসেছিল বৈশাখী মেলা।
হরেক রকম পিঠে পুলি, নানা পদের ভর্তা, পান্তা, ইলিশসহ নানারকম সুস্বাদু খবার বাদ যায়নি বাঙালির ঐতিহ্যবাহী পান সুপারি। আয়োজনে কোনো কিছুর যেন কমতি ছিল না। তাছাড়া আবহাওয়াও ছিল অনুকূলে। বৈশাখী মন ভোলানো বাতাসে কিংবা আঁচল দুলানো হাওয়ার সাথে প্রাণবন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আগত অতিথিরা প্রাণভরে উপভোগ করছে। ঘরোয়া এই আয়োজনে প্রবাসের শিল্পী, সাহিত্যিক, কবি এবং বিশিষ্টজনরা উপস্থিত ছিলেন। মধ্যাহ্ন ভোজের সাথে সাথে চলতে থাকে সাংস্কৃতিক পর্ব। এই পর্বটি পরিচালনা করেন কবি ছন্দা বিনতে সুলতান। অনুষ্ঠানের শুরুতেই তিনি আয়োজক রেক্সোনা মজুমদার ও এন মজুমদারকে স্বাগত বক্তব্য দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন।
এটর্নি এন মজুমদার বলেন, মূলত এই আয়োজন করেন তার স্ত্রী রেক্সোনা মজুমদার, তিনি তাকে সহযোগিতা করেছেন মাত্র। তিনি বলেন, বাঙালির যতগুলো উৎসব আছে তার মধ্যে পহেলা বৈশাখ সবচেয়ে উৎসবমুখর, কেননা এই উৎসব সার্বজনীন। ধর্ম বর্ণ মিলেমিশে এই উৎসব পালন করে। তারা দু’জনে আগত অতিথিদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। এরপর আবৃত্তি করেন শক্তিমান আবৃত্তিকার গোপন সাহা। তিনি জীবনানন্দ দাসের বনলতা সেন কবিতাটি আবৃত্তি করেন। আগত অতিথিরা মোহবিষ্ট হয়ে তার আবৃত্তি উপভোগ করে।
অনুষ্ঠানে আরো আবৃত্তি করেন জুই ইসলাম ও এই প্রজন্মের গুঞ্জরী সাহা। সঙ্গীত পরিবেশন করেন সুতপা ম-ল, তাহমিনা ইসলাম ও তাকিয়া। স্বরচিত কবিতা পাঠ করে ছন্দা বিনতে সুলতান ও জুলি রহমান। বক্তব্য রাখেন সোনিয়া কাদের। দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত আয়োজন চলে। দেশের প্রতি ভালোবাসা, বাঙালি সাংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা আর হৃদয়ে বাংলাদেশ থাকলে ঘরোয়াভাবেও যে এমন উৎসবমুখর এবং আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজন সম্ভব তারই প্রমাণ পাওয়া গেল এটর্নি এন মজুমদার এবং রেক্সোনা মজুমদারের বর্ষবরণের এই আয়োজনে।
আলবেনিতে বাফা
নিউইয়র্ক: জমজমাট আয়োজন আর ব্যাপক উদ্দীপনায় নিউইয়র্কের রাজধানী আলবেনিতে অনুষ্ঠিত হলো বাংলা বর্ষবরণ ১৪২৫। আলবেনির পার্শ্ববর্তী শহর লাথামের একটি এলিমেন্টারি স্কুলের মিলনায়তনে গত ১৪ এপ্রিল শনিবার দুপুরে বাংলা বর্ষবরণের আয়োজন করেন বাংলাদেশি আমেরিকান ফাউন্ডেশন অব আলবেনি(বাফা) আশেপাশের বেশ কয়েকটি শহরের প্রচুর সংখ্যক প্রবাসী নারী পুরুষ বাফা’র এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানান।
বাংলাদেশি আমেরিকান ফাউন্ডেশন অব আলবেনি(বাফা) বাংলা বর্ষবরণের এ অনুষ্ঠানে ছিলো আলোচনা, কবিতা আবৃত্তি, শিশু-কিশোরদের মনোমুগ্ধকর ফ্যাশন শো এবং আকর্ষণীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়াও ছিল মিষ্টি ও জুয়েলারির বেচাকেনা।
বাফা’র চেয়ারম্যান মোদাসসের হুসাইনের সভাপতিত্বে এবং প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী হুমায়ুন কবিরের সঞ্চালনায় নতুন কমিটির পরিচয় পর্ব এবং আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন ভাইস চেয়ারম্যান জেসমিন সিদ্দিকা, জেনারেল সেক্রেটারি রতন হুদা, কালচারাল সেক্রেটারি মিজানুর রহমান প্রধান, অর্গানাইজেশন অব বাংলাদেশি আমেরিকান কমিউনিটি (অবাক) এর প্রেসিডেন্ট মাজহারুল রিপন, বাফা’র চেয়ারম্যান মোদাসসের হুসাইন ও প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির। এ সময় মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন বাফার ফাইন্যান্স সেক্রেটারি আসিফ মাহমুদ, উপদেষ্টা আব্দুল্লাহ খান তুষার, জাবেদ মনির, সোহেল আহমেদ, সঞ্জয় শিকদার, অবাক এর ভাইস প্রেসিডেন্ট মহিউদ্দিন মানিক ও অবাক এর সাধারণ সম্পাদক হাফিজ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।
মিজানুর রহমান প্রধান ও জয়া সাহা’র যৌথ উপস্থাপনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন অতিথি শিল্পী কৌশলী ইমা, শর্মী খান, রহিম বাদশা, আবদুল্লাহ খান তূষার, শরিফুল আলম, হারুন অর রশীদ, তাহমিনা সোনিয়া ও টিউলিপ দত্ত। নৃত্য পরিবেশন করেন তানিয়া মনির, সুবহা ও দিগর্না। কবিতা আবৃত্তিতে অংশ নেন ফারহানা পলি, জয়া সাহা ও শরিফুল আলম। সাংস্কৃতিককর্মী রহিম বাদশা’র পরিচালনায় সমবেত সঙ্গীত ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’ এবং ফ্যাশন শো’তে বাফা’র শিশু শিল্পীরা অংশ নেন।বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে মধ্যাহ্নভোজে পান্তাভাত, রুপচাঁদা মাছ ও হরেক রকম ভর্তায় অতিথিদেরকে আপ্যায়ন করেন বাফা’র কর্মকর্তারা।
ওয়াশিংটনে ফ্রেন্ডস এন্ড ফ্যামেলি
ওয়াশিংটন : বাংলা আর বাঙালি সংস্কৃতিকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দিয়ে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে তুলে ধরবার দীপ্ত অঙ্গীকারের মধ্যে দিয়ে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হল ফ্রেন্ডস এন্ড ফ্যামেলির বর্ষবরণ ‘‘বৈশাখী মেলা ১৪২৫”। বিশ্বায়নের বাস্তবতায় বাঙালির আত্মপরিচয়ের তালাশে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনের অদুরে নয়নাভীরাম পোটম্যাক নদীর তীরে অবস্থিত ভার্জিনিয়ার আর্লিংটনস্থ গেটওয়ে পার্কে সবুজ শ্যামল ছায়ায় অনুষ্ঠিত হল এই বৈশাখী মেলা ১৪২৫।
লেখক সাংবাদিক শিব্বীর আহমেদ ও সারা তান্নীর উপস্থাপনায় অনুষ্ঠিত এই বৈশাখী মেলায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতবাসের ডেপুটি মিশন প্রধান মাহবুব হাসান সালেহ। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদশে রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দীনের স্ত্রী মিসেস ইয়াসমিন জিয়াউদ্দীন, ভয়েস অব আমেরিকা বাংলা বিভাগের প্রধান রোকেয়া হায়দার। এছাড়াও আমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন আর্লিংটন কাউন্টি বোর্ড সুপারভাইজার কেইট ক্রিষ্টাল, কংগ্রেস প্রার্থী এলিশন ফ্রাইডম্যান, কংগ্রেস প্রার্থী জাসমিন মোয়াদ, ও মুসলিম ককাস অব আমেরিকার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি গাজালা সালাম।
আর্লিংটনের গেটওয়ে পাকে বিকাল প্রায় সাড়ে তিন টায় সম্মিলিত কন্ঠে ”এসো হে বৈশাখ” সংগীত পরিবেশনার মধ্যে দিয়ে বৃহত্তর ওয়াশিংটন প্রবাসীরা স্বাগত জানান পহেলা বৈশাখকে। লাল হলুদ সবুজ সহ বিভিন্ন রঙ বেরঙের পোশাকে এ সময় উপস্থিত দর্শক শ্রোতা ও শিল্পীবৃন্দ সুর-ছন্দ আর তাল-লয়ে বৈশাখের বন্দনা করে স্বাগত জানান নতুন বছর ১৪২৫-কে। তাদের সে আয়োজনে ছিলো বৈশাখের মগ্নতা, হৃদয়ে নতুনকে কাছে পাবার তৃষ্ণা আহবান। ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সকলের অংশগ্রহণ ও উচ্ছ্বাসে আরো দীপ্ত হয়ে উঠে নতুন বছর ১৪২৫ এর প্রথম দিন।
অনুষ্ঠানে একক সঙ্গীত, দলীয় সঙ্গীত ও নৃত্যে অংশগ্রহণ করে শান্তানু বড়–য়া, এরিকা, বৃষ্টি, জাফর বাউল (মেট্র), শিল্পী রোজারীও, পিটার, সান্দ্রা, মনিষা, রিতা, শেরিল, সামান্তা, এলিজাবেথ, সারা, রাফি, দিপ্তী, উৎপল বড়–য়া, বনানী চৌধুরী, অংকিতা, অবন্তি, সুষ্মিতা ও অতশী। অনুষ্ঠানের শব্দ নিয়ন্ত্রণ শিশির, কিবোর্ড সৌমি, ড্রাম ক্যানী, গীটার তুর্ঘ, তবলা আশীষ, বেইজ নাফিস ও রাফি, এবং অক্টোপ্যাড প্রান্তীক। অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্বাবধানে ছিলেন আবু রুমি, শামসুন পারভিন, আকতার হোসাইন, ও ফাহমিদা শম্পা।
অনুষ্ঠানে কমিউনিটিতে বিশেষ অবদানের জন্য অ্যান্থনী পিয়ুষ গোমেজ, সুবীর কাস্মির পেরেরা, ফকির সেলিম, রাজিব বড়–য়া, বিপ্লব দত্ত, কচি খান, বনানী চৌধুরী, শিল্পী রোজারীও, করিম সালাউদ্দীন ও মোস্তফা হোসাইন মুকুলকে অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। এছাড়াও বিশেষ অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেন শামসুন পারভিন ও ফাহমিদা হোসাইন। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিবৃন্দ এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেন। এ সময় ফ্রেন্ডস এন্ড ফ্যামেলির দুই কর্মকর্তা আবু রুমি ও আকতার হোসাইন উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রায় চল্লিশটিরও বেশি স্টল বসে। স্টলগুলোতে শাড়ি চুড়ি দেশীয় পোষাক, পন্য, খেলনা ও খাবার সহ নানাবিধ জিনিষপত্রের সমাহার ছিল। স্টলগুলোতে দিনভর মানুষের উপচে পড়া ভিড় ছিল লক্ষ্যণীয়। অনুষ্ঠানের বিশেষ আকর্ষন হিসাবে উপস্থিত ছিলেন নিউইয়র্ক থেকে আগত শফিক ঢোলকীয়, কলকাতা থেকে আগত শিল্পী প্রিয়ংকদা ব্যানার্জী এবং বাংলাদেশ থেকে আগত বাউল শিল্পী নাসিমা দেওয়ান।
কিশোরগঞ্জ ডিস্ট্রিক্ট এসোসিয়েশন
বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ ১৪২৫ উদযাপন করলো প্রবাসের অন্যতম বৃহত্তম সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন কিশোরগঞ্জ ডিস্ট্রিক্ট এসোসিয়েশন ইউ.এস.এ ইনক। গত ১৫ এপ্রিল রোববার নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের মেজবান রেস্টুরেন্টের পার্টি হলে সংগঠনের সভাপতি মো: আনোয়ার উদ্দিনের সভাপতিতে দুই পর্বে অনুষ্ঠিত প্রথম পর্ব নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় ও ‘প্রবাসে নববর্ষের মিলন মেলা’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সঞ্চালনায় ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো: এনামুল হক। নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর বক্তারা বলেন, বাংগালীর নববর্ষ আজ আন্তর্জাতিক রূপ পাচ্ছে। বিশ্বের যেখানেই বাংগালী সেখানেই প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ উদযাপিত হয়। আগামী প্রজন্ম ও বিশ্ববাসীর সামনে আমাদের নববর্ষের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য তুলে ধরতে হবে। অনুষ্ঠানে নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় ও বক্তব্য রাখেন ট্রাস্ট্রি বোর্ড সদস্য মো: আবদুল আউয়াল সিদ্দিকী, ট্রাস্ট্রি বোর্ড সদস্য একেএম আশরাফুল হক, ট্রাস্ট্রি বোর্ড সদস্য হাবিব রহমান হারুন, ট্রাস্ট্রি বোর্ডের সদস্য মো: জাইদুল কবীর খান সারোয়ার, উপদেষ্টা হেলাল উদ্দিন আহমেদ, উপদেষ্টা তারক চন্দ্র পন্ডিত, উপদষ্টো মো: শহীদুল হাসান, উপদেষ্টা এ.কে.এম. রফিকুল ইসলাম ডালিম, সহ সভাপতি জয়ন্ত শর্মা বিশ্ব, সহ সভাপতি মো: হুমায়ুন কবীর, সহসভাপতি মো: ইমরুল হাসান ফেরদৌস, সহ সভাপতি মীনা ইসলাম, সহ সভাপতি মো: আলী আহসান আকন্দ শামীম, সহ সাধারণ সম্পাদক জাবির হোসেন তাকবীর, সহ সাধারণ সম্পাদক মুহিবুর রশিদ সুজন, প্রচার সম্পাদক ফয়সাল কবীর, ক্রীড়া সম্পাদক জাহাঙ্গীর জামিল দিপু, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মো: গোলাম হায়দার শামীম, শিক্ষা সম্পাদক তানবীর রায়হান মিঠু, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক খালেদা আক্তার কিরণ, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক বাবু তপন বিশ্বাস, কার্যকরী সদস্য আশরাফুল আলম হিমেল, সদস্য রাফিউল করীম খান সাজ্জাদ, সদস্য হাবিবুর রহমান কামাল, সদস্য মো: সাইফুল ইসলাম প্রমুখ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কিশোরগঞ্জ উপজেলা সদরের ভাইস চেয়ারম্যান কামরুন্নাহার লুনা, মো: আ: হালিম, মো: আলী আকবর, মো: নজরুল ইসলাম, বাবু লিটন চন্দ্র সাহা, সহ কমিটির সকল সদস্যদের পরিবার বর্গ নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক মো: গোলাম হায়দার শামীমের উপস্থাপনায় দলীয় সংগীত পরিবেশন করে তারার আলোর সদস্যবৃন্দ, নৃত্য পরিবেশন করেন অনন্যা শর্মা পিয়া, নববর্ষের ক্রাউন হিসেবে আনন্দ পরিবেশন করেন মি. মাইক এবং সমগ্র অনুষ্ঠানটি মাতিয়ে রাখেন প্রবাসের অন্যতম কন্ঠশিল্পী সোমা রহমান। পান্তা ইলিশ ও হাওড় বাউরের অন্যতম প্রসিদ্ধ হিদল ভর্তায় নৈশ ভোজের পর সভাপতি মো: আনোয়ার উদ্দিন বর্ষবরণ ১৪২৫ সমাপ্তি ঘোষণা করেন এবং ২২ জুলাই বার্ষিক চড়–ইভাতি অনুষ্ঠানে স্বপরিবারে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানান।
কানেকটিকাটে বেঙ্গল লায়ন্স ক্লাব
আনন্দঘন পরিবেশের মধ্য দিয়ে বাংলা বর্ষবরণ ও প্রবাসীদের স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচি পালন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যের ওয়ালিংফোর্ড বেঙ্গল সেন্টেনিয়াল লায়ন্স ক্লাব। গত ১৪ এপ্রিল শনিবার ম্যানচেস্টার শহরের ইস্ট ক্যাথলিক হাই স্কুলে অনুষ্ঠিত উক্ত বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে প্রবাসীদের জন্য ছিল বিনামূল্যে চোখ, বাকশক্তি, শ্রবণশক্তি ও ডায়াবেটিস পরীক্ষা।
শারমিন আজম ও তাহসিন জিলু সামিহা’র যৌথ উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানের শুরুতেই শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ওয়ালিংফোর্ড বেঙ্গল সেন্টেনিয়াল লায়ন্স ক্লাবের সভাপতি মো: মাসুদুর রহমান (অপু)।
অনুষ্ঠানে আগত সকল অতিথিকে ধন্যবাদ জানিয়ে মাসুদুর রহমান (অপু) বলেন, ওয়ালিংফোর্ড বেঙ্গল সেন্টেনিয়াল লায়ন্স ক্লাব প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিভিন্নভাবে আমরা প্রবাসী বাংলাদেশিদের কল্যাণে সেবা প্রদান করে আসছি। আজকের এই অনুষ্ঠানস্থলেও স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা ছিল। লায়ন্স ক্লাবের সব ধরনের কর্মকান্ডই প্রবাসীদের মাঝে ছড়িয়ে দেবার ঘোষণা দেন তিনি। ওয়ালিংফোর্ড বেঙ্গল সেন্টেনিয়াল লায়ন্স ক্লাবের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করায় ক্লাবের সকল সদস্যকে তিনি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। এ সময় উপস্থিত দর্শকদের সঙ্গে তিনি ক্লাবের সকল সদস্যকে পরিচয় করিয়ে দেন। লায়ন্স ক্লাবের শতবর্ষ বার্ষিকীর বিষয় নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেন ক্লাবের স্থানীয় ডিস্ট্রিক্ট গভর্ণর ডা. শওকত খান।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন স্টেট সিনেটর ও ডিপুটি মেজরিটি লিডার পল আর. ডয়লি রয়, স্টেট রিপ্রেজেন্টিটিভ ও হাউজ জুডিশিয়ারি কমিটির চেয়ারম্যান উইলিয়াম টং, সেক্রেটারি অব স্টেট ডেনিস ডব্লিউ. মেরিল, সাবেক হাউজ অব রিপ্রেজেন্টিটিভ ও সেক্রেটারি অব স্টেট স্জুান বাইসিউইজ, ম্যানচেস্টারের সিটি মেয়র জে. মোরান ও সাউদার্ণ কানেকটিকাটের উর্বান লীগের বোর্ড অব ডাইরেক্টর দিতা ভারগাভা।
বক্তারা কানেকটিকাট প্রবাসী বাংলাদেশিদের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে সব ধরনের সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেন। এছাড়া তারা ওয়ালিংফোর্ড বেঙ্গল সেন্টেনিয়াল লায়ন্স ক্লাবের উত্তোরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করেন।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন পশ্চিমবাংলার জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী ড. স্মিতা গুহ, নিউইয়র্ক প্রবাসী জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী শান্তনীল ধর, সোমা রহমান, কানেকটিকাট প্রবাসী কন্ঠশিল্পী শারমিন আজম, অপু রহমান, তাসমিহা আমির,বর্ষা সরকার, ব্রিয়ানা বিশ্বাস, আরিয়ানা বৈরাগী ও ফিহা আমীর অরোরাসহ আরো অনেকে। বিকেল থেকে অনুষ্ঠানস্থলে পিঠাসহ রকমারি খাবার, জুয়েলারি ও বাহারি পোষাকের দোকানে চলে বেচাকেনা। অনুষ্ঠানের মাঝে বেঙ্গল লায়ন্স নামের একটি ম্যাগাজিনের মোড়ক উন্মোচন এবং শেষে র্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের নৈশভোজের মাধ্যমে আপ্যায়ন করেন ওয়ালিংফোর্ড বেঙ্গল সেন্টেনিয়াল লায়ন্স ক্লাবের কর্মকর্তারা।
শ্রী শ্রী রাধামাধব মন্দির ব্রুকলিন
শ্রী শ্রী রাধামাধব মন্দির ব্রুকলিনে বাংলা নববর্ষ ১৪২৫ উদযাপিত হল গত ১৪ এপ্রিল শনিবার নিজস্ব মন্দির প্রাঙ্গণে। এটি একটি ব্যতিক্রম ধর্মী অনুষ্ঠান। প্রচুর দর্শক সমাগম হয়েছে, সকাল ১০.০০ থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত এ অনুষ্ঠান চলে। অনুষ্ঠান সূচিতে ছিল মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান, নাচ গান, আলোচনা ও বিভিন্ন বিষয়ের অবতারণা করা হয়। অনুষ্ঠানটির সার্বিক পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন রাধামাধব মন্দিরের সাংস্কৃতিক সম্পাদক শ্রী মতি বীনা সরকার ও যুগ্ম সাংস্কৃতিক সম্পাদক শ্রী মতি রুমা ভৌমিক। উভয় সম্পাদক ভক্তদের উদ্দেশ্য তাদের বক্তব্যে অনুষ্ঠাটি সুন্দর ও সাফল্যের জন্য অভিভাবকদের নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। অভিভাবক গণ যদি অনুরুপ সহযোগিতা না করতেন তাহলে এই ধরনের সুন্দর অনুষ্ঠান করা সম্ভব হত না।
বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে রাধামাধব মন্দিরের নব-নির্বাচিত সভাপতি মিন্টুলাল মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুমন বিশ্বাস যৌথ বক্তব্যে ভক্তদের উদ্দেশ্য বলেন, নতুন বছর সবার জীবনে বয়ে আনুক সুস্থতা, সাফল্য, সার্বিক উন্নতি ও অনাবিল আনন্দ।
নেত্রকোনা জেলা এসোসিয়েশন ইউএসএ
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে নিউইয়র্কে জ্যামাইকার পানসী পার্টি হলে গত ১৫ এপ্রিল রোববার বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় জমকালো সাংস্কৃতিক উৎসব ও নেত্রকোনা প্রবাসীদের মিলন মেলা। বর্ষ বরণ উৎসবে নেত্রকোনা প্রবাসীদের ঢল নামে। প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ছাড়াও জমজমাট এ উৎসবে ছিল ইলিসসহ বাঙালী সব খাবার-দাবার।
নেত্রকোনা জেলা এসোসিয়েশন ইউএসএ’র সভাপতি মো. বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন খান শামীমের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের সাবেক ডিআইজি জহুরুল হক। আনন্দঘন ও উৎসবমুখর পরিবেশে তিনি এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংগঠনের উপদেষ্টা ইকবাল হায়াৎ খান ও বজলুর রহমান নয়ন, প্রধান পৃষ্ঠপোষক উপদেষ্টা মো. বশির ফারুক। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম আনোয়ার।
অনুষ্ঠানে অতিথিরা ছাড়াও বর্ষ বরণ উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক জামাল উদ্দিন, প্রধান সমন্বয়কারী মো. আনোয়ারুল আলম ভূইয়া, সমন্বয়কারী অধ্যাপক ¯েœহাংশু সরকার, অর্থ সচিব হাবিবুর রহমান হাবিব, নাসির উদ্দিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, পহেলা বৈশাখ উৎসব প্রিয় বাঙালীদের প্রাণের উৎসব। হাজার বছরের ঐতিহ্যে লালিত এ সংস্কৃতি প্রবাস প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। এ আয়োজন প্রবাসে জন্ম নেয়া ও বেড়ে ওঠা আমাদের নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশের কৃষ্টি-কালচারের সাথে পরিচিত করার একটি বড় সুযোগ। আলোচনার ফাঁকে বিভিন্ন জন বৃহত্তর ময়মনসিংহ সহ নেত্রকোনা জেলার হাস্য রসাত্মক ও ঐতিহ্যমন্ডিত কৌতুক পরিবেশন করেন।
পরে সাংস্কৃতিক পর্বে প্রবাসের জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী শশী, সম্পা জামান ও নাজিয়া নীনা সঙ্গীত এবং সাদিয়া নৃত্য পরিবেশন করেন। সাউন্ড সিস্টেমে ছিলেন অনুপ। বিপুল সংখ্যক প্রবাসী অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন সংগঠনের কর্মকর্তাগণ।