উত্তর আমেরিকায় শারদোৎসবের প্রস্তুতি

আটলান্টিক সিটি প্রতিনিধি : বাংলার আকাশে এখন ছেঁড়া ছেঁড়া পেঁজা পেঁজা সাদা তুলোট মেঘের ছোটাছুটি, কাশবনে কাশ ফুলের দোল, শিউলি ফুলের সুগন্ধে মাতোয়ারা ধরিত্রী। আর এসব কিছুই বার্তা বয়ে আনছে শারদোৎসবের।দরজায় কড়া নাড়ছে দুর্গোৎসব। প্রবাসী বাংলাদেশী সনাতনী হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এখন সেই মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায়। তাদের অস্তরে যেন নিয়তঃ ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হচ্ছে -‘মা আসছেন’। সারা বিশ্বের সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মতো নিউইয়র্ক, নিউজার্সিসহ সমগ্র উত্তর আমেরিকায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশী সনাতনী হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাও কাউন্টডাউনে ব্যস্ত। পুজার খুশিতে লুটোপুটি খাওয়ার জন্য সবাই এখন হরেক আয়োজনে ব্যস্ত দিন কাটাচ্ছে।
পুরাণে দেবী দুর্গার আবির্ভাব তত্ত্বে বলা হয়েছে, সমাজের সব অশুভ শক্তির বিনাশে দেবী দুর্গার মর্ত্যে আবির্ভাব। ত্রেতাযুগে অসুরকূলের দাপটে সমগ্র মানব জাতি যখন উৎকণ্ঠিত তখন মানব কল্যাণে এই ধরাধামে আবির্ভূত হন ভগবান শ্রী রামচন্দ্র। তিনি পিতৃ আদেশে বনবাসে থাকাকালীন লঙ্কেশ্বর রাবন তার স্ত্রী সীতাকে অপহরণ করে লংকায় লুকিয়ে রাখেন।লংকাপুরী থেকে প্রিয়তমা স্ত্রী সীতাকে উদ্ধারের জন্য শক্তি সঞ্চয়ের উদ্দেশ্যে শ্রী রামচন্দ্র শরৎকালে দেবী দুর্গাকে মর্ত্যে আহবান করেন। বসস্তকালের পরিবর্তে শরৎকালে দেবী দুর্গাকে আহবান করায় এ পূজাকে ‘অকালবোধন’ বলা হয়।এর পরিপ্রেক্ষিতেই শরৎকালে দুর্গাপূজার প্রচলন হয়।
সনাতনী হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের বিশ্বাস,অসুর শক্তি বিনাশকারী দেবী দুর্গার আরাধনার মধ্য দিয়ে সমাজ থেকে সব পাপ দূর হয়ে যাবে, সমাজে ফিরে আসবে শাস্তি। এবছর দেবী দুর্গা মর্ত্যে আসছেন ঘোটকে, দেবী দুর্গা বিদায় নেবেন দোলায় চড়ে।
শারদোৎসবের বার্তা পেয়ে আটলান্টিক সিটির প্রবাসী বাংগালি হিন্দুরা মেতে উঠেছে দুর্গোৎসবের হরেক আয়োজনে। প্রথমেই আসা যাক পোশাক পরিচ্ছদ এর ব্যাপারে। প্রবাসে বেড়ে ওঠা তরুণ প্রজন্ম স্যাটেলাইটের কল্যাণে হাল ফ্যাশন সম্পর্কে সম্যক অবগত। তরুণীদের কাছে ভারতীয় টিভির বিভিন্ন সিরিয়ালের নায়িকাদের নাম দিয়ে তৈরি পোশাক বেশ জনপ্রিয়। তরুনীরা অনলাইনে অর্ডার দিয়ে, নিউইয়র্কের বিভিন্ন বাঙালি ফ্যাশন হাউজ থেকে তা সংগ্রহ করেছে।কেউ কেউ আবার দেশ থেকে পরিচিতজনদের মাধ্যমেও তাদের পছন্দের পোষাক সংগ্রহ করেছে। যেসব তরুণীর পছন্দ পাশ্চাত্য ফ্যাশন তারা ছুটছে মার্কিনী শপিং মলগুলোতে।
তরুণদের পছন্দ হাল ফ্যাশনের পাঞ্জাবি ও বিভিন্ন ধরনের পোশাক পরিচ্ছদ। তারাও নিউইয়র্কের ফ্যাশন হাউজ, অনলাইন অথবা দেশ থেকে তা আনিয়েছে।বাচ্চারা তাদের পোশাক ও জুতার জন্য মা-বাবার হাত ধরে ছুটছে মার্কিন শপিং মলগুলোতে। কেউ কেউ ছুটছে নিউইয়র্ক এর বাংলাদেশী ফ্যাশন হাউজগুলোতে।
নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যের আটলান্টিক সিটিতে দুর্গাপুজার ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। আটলান্টিক সিটির ফ্লোরিডা এভিনিউর গীতা সংঘের নিজস্ব প্রাঙ্গণে আগামী ১৫ অক্টোবর, সোমবার ষষ্ঠী পুজার মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসব শুরু হবে এবং ১৯ অক্টোবর, শুক্রবার বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে দুর্গাপুজা শেষ হবে। দুর্গাপূজার বিভিন্ন আয়োজনের মধ্যে থাকছে তিথি অনুযায়ী পুজা অর্চনা, অঞ্জলি,ধর্মীয় সভা,আরতি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান,মহাপ্রসাদ বিতরন ইত্যাদি। দুর্গাপূজার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গীতা সংঘের সিনিয়র শিল্পীদের সাথে প্রবাসে বেড়ে ওঠা প্রজন্মও অংশগ্রহন করবে।তাই মহড়াতে অংশগ্রহনকারীদের কল-কাকলিতে বিকেল থেকে রাত পর্যস্ত গীতা সংঘ প্রাঙ্গণ মুখরিত থাকে।গীতা সংঘের দুর্গাপূজার বিভিন্ন আয়োজনে নিউজার্সি ছাড়াও নিউইয়র্ক, পেনসিলভেনিয়া সহ অন্যান্য রাজ্য থেকেও প্রবাসী হিন্দুদের ব্যাপক সমাগম ঘটে।গীতা সংঘের দুর্গাপূজা নিয়ে আয়োজকরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।
আগামী ১৯ অক্টোবর, শুক্রবার রাতে অনুষ্ঠিত হবে মনোমুগ্ধকর ‘সংগীত রজনী’। সেই সংগীত রজনীতে দেশ-বিদেশের খ্যাতনামা শিল্পীদের মনোজ্ঞ পরিবেশনায় প্রবাসীরা মেতে উঠবেন অনাবিল আনন্দে।
প্রবাসীদের মনে শারদোৎসব উপলক্ষে আনন্দ-উচ্ছ্বাসের যে বহিঃপ্রকাশ তার সাথে দেশের শারদোৎসবের আনন্দ-উচ্ছ্বাসের তুলনাই মেলে না। তারপরও ‘দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো’র জন্য প্রবাসে এইসব আনন্দ-আয়োজনও কম কীসের?