উন্নয়ন খায়? মাথায়ও দেয়?

মোস্তফা কামাল : চর্মচোখে দৃশ্যমান উন্নয়ন নিয়েও প্রশ্নের পর প্রশ্ন। এতে কার উন্নয়ন, কী উন্নয়ন? লাভ হলো কার? টেন্ডারটা কে পেলো? কমিশন, মারিং-কাটিংয়ের অংকটাই বা কেমন? আবার উন্নয়নের প্রচার ও স্তুতিও কি কম? বোকাতোতারা বলতে থাকে, শুনতে থাকে উন্নয়নের গীত। উন্নয়ন খাওয়া, মাথায় দেওয়া লোকও আছেন। এতো খাওয়ার পরও কবে উদর ভরবে তাদের?
নিজস্ব বিবেচনা বোধ না থাকলে যা হয়, অনেকের তাই হয়েছে। ভেতর থেকে চালিত না হওয়ার শক্তি না থাকলে যা হয়। এর পরিণতি থেকে কেউ রক্ষা পেয়েছে কখনো? না-কি পাবে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পেটের ভেতর দিয়ে মেট্রোরেল যাওয়া দেখে গত কিছুদিন কারো কারো ভেতর থেকে তাড়না আসছে। কয়েক কথার তুড়িতে তারা আর কথা পায় না। প্রয়োজনে শিক্ষা বাদ দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে কয়েক হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প নিলে কোনো সমস্যা আছে? টিএসসি, কার্জন হল, মধুর ক্যান্টিন, নজরুলের মাজার ইত্যাদি ভেঙ্গে আরও বড় ও নান্দনিক করে বানালে সমস্যা কী? কোন বাঘ আছে এ ধরনের উন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন করার?
এই চান্সে বহুল প্রচলিত জঙলি গল্পটা সংক্ষেপে আবার আওড়ানো যায়। উন্নয়নের গীত গাইতে গাইতে সিংহ সিগারেট ফুঁকছে। হঠাৎ শিয়ালের আগমন। বললো, মামা কেন এসব ছাইপাশ খাচ্ছো? ছেড়ে দাও। আসো আমার সাথে। ঘুরে দেখো কতো সুন্দর বনটা? সিংহ শিয়ালের সাথে হাঁটতে থাকে। কিছুদূর যাওয়ার পর দেখে হাতি খাচ্ছে ইয়াবা। এখানেও শিয়ালের গীত। হাতিকে সবক দেয়- কী খাও এসব? তোমার বিশাল শরীরটা বরবাদ হয়ে যাবে না? হাতিকে ইয়াবা ছেড়ে বরং ঘুরেঘুরে বনের উন্নয়ন দেখার পরামর্শ দেয় শিয়াল। হাতির কাছে পরামর্শটা ভালোই লাগে। সেও শিয়ালের পিছু নেয়। কিছুদূর যাওয়ার পর দেখে বাঘ জাবর কাটছে। আর আয়েশ করছে। শিয়াল তার রেস্ট বরবাদ করে বিউটিফুল বন ঘুরে দেখার অফার দেয়। সঙ্গে সঙ্গে বাঘ কষে এক থাপ্পড় মারে শিয়ালকে। কয়েক গজ দূরে ছিটকে পড়ে সে। সিংহ এবং হাতি এতে মাইন্ড খায় বাঘের ওপর। বলে, বেচারা শিয়াল তো ভালো কথাই বলেছিল। কেন এভাবে এটাক করলে তাকে? বাঘ গর্জন করে বলে, এই বদমাশটায় প্রতিরাতে গাঞ্জা খেয়ে মজা লোটে। সবাইকে গল্প শুনিয়ে রাতভর জঙ্গলে ঘুরায়। বোঝো না ওর মতলব?
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন।