উপকূল পেরিয়ে মূল ভূখণ্ডে সিত্রাং, ৯ ফুটের জলোচ্ছ্বাস, সারা দেশে মৃত্যু ৯

ছবি সংগৃহীত

ঠিকানা অনলাইন : রাতের প্রথম ভাগে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কেন্দ্র বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করেছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে নোয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, কক্সবাজারসহ উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় ৯ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। উপকূলের ১৫টি জেলার নদ-নদীর পানি হঠাৎ বৃদ্ধি পেয়ে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৫ ফুট উচ্চতা নিয়ে দুই তীরবর্তী এলাকায় আছড়ে পড়ে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝোড়ো বাতাসে গাছ পড়ে অন্তত ৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ২৪ অক্টোবর সোমবার মধ্যরাতের দিকে সিত্রাংয়ের কেন্দ্র উপকূল অতিক্রম করে। এখন এটি দেশের মূল ভূখণ্ডে প্রবেশ করে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।

এর আগে আবহাওয়া দপ্তর থেকে জানানো হয়, ভোলার পাশ দিয়ে রাত নয়টার দিকে সিত্রাংয়ের কেন্দ্র উপকূলে প্রবেশ করে। তবে এর অগ্রভাগ উপকূলে আঘাত করে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে।

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তাণ্ডবে সারা দেশে এ পর্যন্ত নয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কুমিল্লায় একই পরিবারের তিনজন, ভোলায় দুজন, সিরাজগঞ্জে দুজন এবং নড়াইল ও বরগুনায় একজন করে নিহত হয়েছেন।

ভোলার দৌলতখান পৌরসভা এলাকায় সোমবার রাত নয়টার দিকে গাছচাপায় এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়। তার নাম বিবি খাদিজা (৬৮)। জেলার চরফ্যাশন উপজেলার শশীভূষণ থানা এলাকায় সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় দুই মোটরসাইকেল আরোহীর ওপর গাছ ভেঙে পড়ে। এর মধ্যে একজন ঘটনাস্থলেই মারা যান। অপরজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতদের পরিচয়-নাম জানা যায়নি।

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে সোমবার দুপুরে গাছের ডাল পড়ে মর্জিনা বেগম (৪০) নামের এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। তার বাড়ি বাগেরহাট সদর উপজেলার অর্জনবাহার গ্রামে।

বরগুনা সদর উপজেলার সোনাখালী এলাকার আমেনা খাতুন মারা গেছেন। সোমবার রাত আটটার দিকে ঘরের ওপর গাছ পড়লে ভেতরে চাপা পড়ে তার মৃত্যু হয়।

এ ছাড়া রাত ১০টার দিকে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার হেসাখাল বাজার ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডে ঘরের ওপর গাছ পড়ে একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রায়হান মেহেবুব এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। নিহতরা হলেন নেজাম উদ্দিন, তার স্ত্রী শারমিন আক্তার সাথি ও তাদের দুই বছরের শিশু নুসরাত।

এদিকে কুমিল্লা, বরিশাল, ভোলাসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় মহাসড়কে গাছ উপড়ে পড়ে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। কোথাও তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। রাজধানীর ঢাকায়ও অন্তত ১৮টি স্থানে সড়কে গাছ পড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সদস্যরা গাছ সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছেন।

ঝোড়ো বাতাসের কারণে অনেক স্থানে বিদ্যুতের পিলার উপড়ে গেছে। বরিশাল, বরগুনা, পিরোজপুরসহ দক্ষিণের অধিকাংশ জেলায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ফলে সেসব এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্কও পাওয়া যাচ্ছে না।

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে চট্টগ্রাম, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। তবে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হবে, সেগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মঙ্গলবারের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।

ঝোড়ো হাওয়া ও ভারী বৃষ্টির আশঙ্কায় চট্টগ্রাম, পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দর এবং কক্সবাজার উপকূলসহ দেশের ১৫টি উপকূলীয় জেলাকে ৭ নম্বর বিপৎসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

এদিকে ভারী বৃষ্টিপাত এবং ঝোড়ো বাতাসের প্রভাবে প্রায় সারা দেশেই ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আগাম সতর্কতা হিসেবে ৮০ শতাংশ পাকা ধান কেটে ঘরে তোলার পরামর্শ দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, ১৫ জেলায় ক্ষতির আশঙ্কা বেশি। জেলাগুলো হলো কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা, ঝালকাঠি, ভোলা, পটুয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও বরিশাল।

ঠিকানা/এনআই