ঋণ, ভোট, সন্ত্রাস মৃতরা আর কী কী পারেন?

মোস্তফা কামাল : সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশে সম্ভাবনার আর কি বাকি থাকছে? মৃত মানুষ ভোট দিয়ে চলে যাওয়া নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। মৃত ব্যক্তিদের গাড়ি ভাংচুরসহ সন্ত্রাস-নৈরাজ্য করে চলে যাওয়ার ঘটনাও আছে। তাই বলে মৃতরা ব্যাংক লোনও নিয়ে যাবে? মৃতকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে এনে এমন শিল্পকর্ম করে চলে যাওয়ার সুযোগ হলো কিভাবে? কে দিয়েছে এ সুযোগ? দোষ অনন্ত জলিলের অসম্ভবকে সম্ভব করার ডায়লগের?
মৃত্যুর ১১ বছর পর পরেশ চন্দ্র সোনালী ব্যাংকের জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল শাখা থেকে ১০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন! দলিলে সই করার অসম্ভব কাজ সম্ভব করা ভাবনাকে হার মানায় রঙ্গে ভরা বঙ্গ দেশে আর কতো রঙ্গ দেখা যেতে পারে? ধর্মীয় বিশ্বাস মতে, একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই মৃতকে জীবিত করতে পারেন। তাও শেষ বিচারের দিনে। বাংলাদেশে এর আগে, ভোটের দিন মৃত্য ব্যক্তি পরপার থেকে ননস্টপে কেন্দ্রে এসে ভোট দিয়ে চলে গেছেন! যাওয়ার পথেও কোনো স্বজনের সঙ্গে দেখা দেননি। তাকে দেখেছেন কেবল ভোটের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা?
সেটি সম্ভব হলে, যুক্তিতে পরলোক থেকে এসে ব্যাংক লোন নেয়াও সম্ভব। পরলোকেও কি খরচাপাতির বিষয় আছে? টাকার দরকার পড়ে? তাই কোনো স্বজনের সঙ্গে দেখা না করে কেবল ব্যাংক ম্যানেজার বা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সাথে দেখা করেন? ঋণ শোধ দিতে তিনি আবার আসবেন ব্যাংকে? ব্যাংক চাইলে মহাসড়ককে কৃষি জমি, অস্তিত্বহীন কোম্পানিকে হাজার কোটি টাকার লোন দিতে পারে- এমন মন্দকথা চালু আছে সমাজে। এখন মৃত ব্যক্তিকেও জীবিত করতে পারে? ঘটনাচক্রে ফাঁস না হলে তা জানা হতো?
পরেশ চন্দ্র মারা গেছেন ১৯৯৪ সালে। সোনালী ব্যাংকের জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল শাখার নথি বলছে, মৃত্যুর এতো বছর পর তিনি আবার জীবিত হয়ে বাড়িতে বা পরিবারের কোনো সদস্যের কাছে যাননি। গিয়েছিলেন কেবল সোনালী ব্যাংকের ক্ষেতলাল শাখায়। সেখানে ঋণ ডকুমেন্টে সই করে ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে চলে যান। তাই ব্যাংক থেকে পরেশ চন্দ্রের নামে ১০ হাজার টাকা এমসিডি ঋণ পরিশোধের তাগাদা নোটিশ পাঠানো হয়। ডাকযোগে পাঠানো রেজিস্ট্রি করা চিঠিটি গ্রহণ করেন তার বড় ছেলে নরেশ চন্দ্র। চিঠি খুলে তিনি প্রথমে ভেবেছিলেন, তার বাবা জীবিত থাকতে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে থাকতে পারেন। পরে চিঠির নিচের অংশে গিয়ে দেখেন, তার বাবা পরেশ ঋণ নিয়েছেন ২০০৫ সালের ৩১ অক্টোবর! অথচ মারা গেছেন ২৮ বছর আগে, ১৯৯৪ সালের ২৮ জুন। এমন অদ্ভুত চিঠি পেয়ে নরেশ ছুটে যান ব্যাংকের ক্ষেতলাল শাখায়। প্রথমে না জানার ভান করেন ব্যাংক কর্মকর্তারা। তারা তাদের দাবিতে অনড় থাকেন। দেখিয়ে দেন ঋণের নথিতে পরেশ চন্দ্রের নাগরিকত্ব সনদ, ছবি, জমির কাগজপত্র ও স্বাক্ষর- সবই আছে। ১০ হাজার টাকা বড় কথা নয়, তার বিস্ময় কিভাবে সম্ভব হলো মৃত বাবার জীবিত হয়ে ব্যাংকে গিয়ে ঋণ নেয়া? সোনালী আলোয় আলোকিত হয়ে মৃত্যুর পরও এমন ব্যাকিং সেবাদানের এমন অমরত্বের ঘটনা আরো আছে?
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন, ঢাকা।