একজন মীর শিবলী ও অচল-অন্ধ বিবেক

মিশুক সেলিম

“আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে
আসে নাই কেহ অবনী ‘পরে,
সকলের তরে সকলে আমরা
প্রত্যেকে মোরা পরের তরে ”

কবির এই কবিতার চরণ ক’টি কিম্বা,‘‘ভূপেন হাজারিকার গান –
“মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য’’কিম্বা,এই গানের অন্তরার একটি লাইন ‘‘বল কী তোমার ক্ষতি, জীবনের অথৈ নদী পার হয় তোমাকে ধরে, দুর্বল মানুষ যদি!’’
উল্লেখিত কবিতা ও গানের কথাগুলি এই সেদিন পর্যন্ত মনে প্রাণে বিশ্বাস করতাম আমরা। এর স্বপক্ষে আমরা অনেক উদাহরণ সৃষ্টি করেছি নিজ দেশে এবং প্রবাসের কঠিন পাথুরে বাস্তবতার মাটিতে দাঁড়িয়ে। একের বিপদে ছুটে গেছি অন্যে, সদলবলে, সকলে মিলে।
বিশেষ করে এই নিউইয়র্কে আমাদের কোন ভাই বা বোন, মা-বাবা, কোন শিশু সন্তান জটিল দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত, অসহায় হয়ে পড়লে তাকে একা থাকতে দেইনি। শত শত ভাই বোন তার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে একান্ত স্বজনের আশ্বাস হয়ে। কারও কিডনী বিকল, কেউবা মরণ ব্যাধি ক্যান্সারের চূড়ান্ত ধাপে। প্রতি ক্ষেত্রে প্রতিটি বার দরদী প্রাণ মানুষ, সমাজ-সংগঠক সকলে দলমত নির্বিশেষে আশা হয়ে, ভালোবাসা নিয়ে, পাশে দাঁড়িয়ে প্রসারিত হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে থেকেছেন। ভাবতে গেলেই কৃতজ্ঞতায় চোখে জল ভরে আসে আনন্দে। মানব জন্ম সার্থক মনে হয় তখন। কিন্তু প্রথমবারের মতো আজ এই সময়ে কেন নিজেকে অসহায়, স্বার্থপর মনে হচ্ছে? কেন আগের মতো আমরা একজোট হয়ে ঝাঁপ দিয়ে পড়তে পারছি না, কেন আমাদের একান্ত বন্ধু, স্বজন, একজন আলোকিত, নিবেদিতপ্রাণ মানুষের চরম বিপদের দিনে অসহায় মুহূর্তে তার সহায় হতে পারছি না? কেন বলতে পারছি না,
“বন্ধু, আমরা সকলে আছি, তোমার কোন ভয় নেই”।

বলছিলাম আমেরিকা বাংলাদেশ প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি, নিউইয়র্কে বাংলা টিভির মহাপরিচালক, আমাদের বন্ধু স্বজন, হৃদয়বান, মানবদরদী সমাজসেবক, আমেরিকায় বাংলাদেশী কমিউনিটি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে যারা নিরলস শ্রম, মেধা ও দিক নির্দেশনা দিয়ে এসেছেন তাদের একজন মানিকগঞ্জের কৃতি সন্তান সাংবাদিক মীর ওয়াজিদ শিবলীর কথা।


কী অদ্ভুত, কী নির্মম, দুর্ভাগ্য তার, নিয়তির কী পরিহাস! স্ত্রী-সংস্কৃতি কর্মী, রাজনৈতিক কর্মী শারমিন রেজা ইভা বেশ কিছু দিন যাবৎ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে সংকটাপন্ন অবস্থায়। স্ত্রীর চিকিৎসা ও সেবার অর্থ সংকুলানেই শিবলী ও তার পরিবার নিঃশেষ ও অসহায়। এই অবস্থায় ধরা পড়লো মীর শিবলীর দুটো কিডনিই বিকল হয়ে পড়েছে। থমকে গেলো শিবলীর চলমান জীবন। মাথায় বাজ পড়লো যেন পরিবারটির উপর। আত্মীয়-স্বজন উদ্বিগ্ন।
মীর শিবলীর দুটো কিডনিই অচল, কাজ করছে না, এক্ষুনি প্রয়োজন কিডনি প্রতিস্থাপন। আমেরিকায় এই চিকিৎসা সময়সাপেক্ষ। বাংলাদেশ অথবা ভারতে হাসপাতালে রেখে কিডনি প্রতিস্থাপন অনেক ব্যয় বহুল। কাজটি আমাদের কারও একা বা ক’জন বন্ধু বা আত্মীয়ের পক্ষে সম্ভব নয় , এই সমাজের সম্মিলিত আমাদের পক্ষে সেটি সম্ভব । শিবলী এতটা বছর যাঁদের নিয়ে, যাঁদের সঙ্গে কাজ করেছেন, সেই টেলিভিশন মাধ্যম , সংবাদপত্র মাধ্যমের সকলে, আমাদের ব্যবসায়ী সমিতি, ব্যবসায়ী ভাই- বন্ধু, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, নিউইয়র্কে বাংলাদেশের থানা ও জেলাভিত্তিক আঞ্চলিক সংগঠনসমূহ, বাংলাদেশ সোসাইটি অব নিউইয়র্কসহ সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মীর শিবলীকে কি সুস্থ্য জীবনে ফিরিয়ে আনা সত্যিই কঠিন? নিশ্চয় নয়, তবে কেন আমরা সে উদ্যোগ গ্রহণ করছিনা আজও? এটি কি আমাদের নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না? আমাদের একটু সময় দান, একটু শ্রমদান, কিছু অর্থিক সহযোগিতা নিয়ে সকলে আমরা শিবলী, তার স্ত্রী ইভা ও তাদের মেয়ে রূপন্তীর পাশে দাঁড়ালে এই পরিবারটিকে আবার সুস্থ সবল সচল আনন্দময় জীবনের দিকে ফেরাতে পারি।
বাংলাদেশ সোসাইটি অব নিউইয়র্কসহ সকল ব্যক্তি, নিউইয়র্কে বাংলাদেশের সকল জেলা ও থানাভিত্তিক আঞ্চলিক সংগঠন, শিল্প ও সাহিত্য সংগঠনের কাছে আকুল আবেদন, জীবন প্রদীপ নিভে যাওয়ার আগেই আমাদের বন্ধু, স্বজন মীর শিবলী , ইভা ও তাদের সন্তান রূপন্তীর পাশে গিয়ে বন্ধুর হাত বাড়িয়ে দেই। অন্যথায় মানুষ হিসাবে বেঁচে থাকায় আমাদের গ্লানি বয়ে বেড়াতে হবে সারাটা জীবন ।