একজন রাজীব হোসেন ও আমরা

লাবলু কাজী

আমাদের বিবেক মরে গেছে , ভালোবাসা উড়ে গেছে । আছে শুধু চাওয়া পাওয়া ধনী হওয়ার কঠিন বায়না । সেটা ন্যায় নীতি বিসর্জন দিয়ে হলেও ক্ষতি নেই । আমার সোনার হরিণ চাই । ছবির রাজীব হোসেন আমাদের জীবন বাস্তবতার প্রতিদিনের সেলুলয়েডের প্রতিদিনের জীবন , প্রকাশে বা অপ্রকাশে । বাঁচার জন্য হসপিটালের বেডে জীবন ঘোংঘানি রূঢ় সমাপ্তি সবার জীবন নাড়া দেয় । কি করার আছে এই গরীব আমাদের নীরব দর্শক হয়ে দেখা ছাড়া । হা হুতাশ করে কষ্ট বাড়ানো ছাড়া ! জীবন বড় জটিল বড় আনচানে ভরা ,পানি ভরা কলসের মত । মন পাত্রের আঁধারে কষ্ট লুকিয়ে রাখা যায় না , মুড়ি বাঁজার মত উপরে পড়ে । অনেকে ভয়ে কথা বলেন না যদি মেরে ফেলে । রোজ জীবিত থেকে দোযখের যন্ত্রণা পোহানোর চেয়ে আসল মৃত্যুর স্বাদ নেয়া অনেক ভাল । চারদিকে হচ্ছে টা কি ? বিচার চেয়ে বিচার প্রার্থী ঘায়েল সবুজ ঘাসের সবুজ বিছানায় লাশ হয়ে শুয়ে আছে বিউটি । ও তো আমাদেরই মায়ের জাত, বোনের জাত সম্মান নেই , দেই না কেন । বুক ফেঁটে যায় , মুখ প্রকৃতির রূঢ় শাসনে ভয়ে বন্ধ হয়ে গেছে টেপ আঁটা । মানবতা এখন পলাতক , নিভৃতে কেঁদে ফিরে …! ইচ্ছে সেটা যদি অবৈধ বাসনা হয় ,স্বার্থ উদ্ধারের মানসপুত্র হয় , জোয়ারে বাঁধ ভাঙ্গার মত প্রবল হয় , তা তো রুখতে হবে আইনের ধারায়। আমরা তো তা রুখতে পারিনি । বরাবর ক্ষমতাবানদের দাপটে মাথা নত করেছি । তনুর হত্যাকারী চিহ্নিত হয়নি কারণ হত্যাকারী ক্ষমতাশালী বিধায় সুরতহাল রিপোর্ট , পুলিশ তদন্ত উপরওয়ালাদের নির্দেশে মেঘের কুয়াশায় হারিয়ে গেছে । সাহস পেয়ে ধনী র‌্যাপিষ্টদের পোয়াভারো । জানে কিছু তো হবেই না , লুঠ মজা কচি মাল। বাস্তবে তাই তারা করছে এবং আমরা গরীবেরা অসহায় , চেয়ে চেয়ে দেখছি । বিউটি হত্যা, পাঁচ বছরের মেয়েকে পশুর বিবেকে র‌্যাপ অনেক পুরানো রূপের নব্য সংযোজন । তা চলছে তো চলছেই থামার লক্ষণ দেখছি না । তারপর কথা আসে কথা থাকে যখন বাপ নিজ জেদের বলির পাঠায় আপন মেয়েকে হতার পরিকল্পনা করে, নিজ ভাই দ্বারা মেয়েকে খুন করায় – তাহলে দেশ কি যন্ত্রণার কাতরে ম্রিয়মান আপনারা কল্পনা করুন । রেষারেষি শত্রুতার রূপ কত ভয়ঙ্কর হতে পারে বিউটির খুন তা প্রমাণ করে । কিন্তু কতদিন আর এ জীবন কিছু বলুন কিছু বলি ……!
বিগত কয়েক দিন যাবত ছাত্ররা আন্দোলন করে আসছে কোটা পদ্বতির সংস্কার বা বাতিলের দাবীতে । সমাজের যারা পিছিয়ে আছে তাদের সুবিধার ভিত্তিতে কাজে নিয়োগ দিতে অন্যান্যদের সাথে সমতা আনার নিশ্চিয়তার বিধানে এ ব্যবস্থা । এই ক্যাটাগরীতে আছে নারী , প্রতিবন্ধী , আদিবাসী ও মুক্তিযোদ্ধা । প্রতিবন্ধী মানে কিছুতে শর্ট থাকা তাদের অবস্থা সবাই বুঝে এমনিতেই সহানুভূতি আসে মায়া জাগে । তাদের জন্য কোটা অন্য কোন উপায়ে জীবন সুবিধার ব্যবস্থা তো করা যেতেই পারে। নারী পুরুষদের মতো সুবিধা পায়না এবং সম পরিমাণ প্রডাক্টটিভিটিও নেই । কিন্তু এ জন্য তাদের বাড়তি সুবিধা কোটার আঁড়ালে না দিয়ে বাড়তি ট্রেণিং বা ক্যারিকুলামে যুক্ত করা যেতে পারে যাতে পুরুষদের সমান স্কিল আয়ত্ত করতে পারে । আদিবাসীদের জন্য কোটা ভিত্তিক সুবিধা না রেখে পর্যাপ্ত স্কুল কলেজের ব্যবস্থা রেখে তাদের শিক্ষার মান উন্নত করে মূল বাসীদের সমকক্ষ করে পূর্ণ প্রতিযোগিতায় প্রস্তুত করলে জীবনের মান বাড়বে এবং মূল ধারার জীবনে সম্পৃক্ততা আসলে জীবন জ্যোতির মূল্য নূতন স্তরে যাবে । মুক্তিযোদ্ধারা নিজের জীবন বাজি রেখে দেশ স্বাধীন করেছে , শত্রুমুক্ত করেছে তাদের কোটার যুক্তি গ্রহণযোগ্যতা পেতে পেতে পারে । কিন্তু যখন তা প্রিন্সিপালের পর ছেলে মেয়ে , নাতি – পৌতিতে যেয়ে পৌঁছে তখন বড্ড বেমানান লাগে ও অনেকে প্রতিবাদী হয়ে ওঠে । মেধাভিত্তিক কর্ম সংস্থান উঠতি বয়সের ছলেমেয়েদের বিদ্যাভাসে উৎসাহিত করে । পড়ালেখার মান বাড়ে । আমাদের দেশে কোন কিছু আন্দোলন ছাড়া আসে না , এবারও তাই হলো । শুনছি প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের ভিত্তিতে ছাত্ররা আন্দোলন স্থগিত করেছে । তিনি বলেছেন কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হবে।
শাসকদের ক্ষমতায় থাকার মনের ইচ্ছা ও ধরে রাখার তরীকা সবার জানা আছে , এভাবেই চলছে দেশ। আগামীতেও চলবে সেভাবে, তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই । দুঃখের ব্যথায় বুক ভারী হয়ে আসে যখন দেখি গরীব মানুষের বেঁচে থাকার ন্যূনতম নিরাপত্তাও সরকার নিশ্চিত করতে পারেনা । আইন এখন পদ আর পদবীর বাহুবলে সীমিত এবং প্রয়োগ হয় তাদের স্বার্থে সাধারণ মানুষ বিচার নামের অভিধানিক অর্থের মধ্যই সীমাবদ্ধ থাকে ! বইতে আইন আছে সাদা কালোতে কেউ দেখেও না পাবার আশাও করেনা জনগণ । মানুষের কথা রাজনীতিবিদরা আর ভাবে না ক্ষমতায় কি ভাবে টিকে থাকা যায় আর যারা ক্ষমতায় নেই তাদের কাজ কিভাবে ক্ষমতায় যাওয়া যায় তার একশন মনে প্রাণ ভরে থাকে । লক্ষ্যণীয় তারা কাজও করছে সেভাবে । আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী একজন নারী , মাতা , ভগ্নী । এটা তো মাদের এক চরম অপমান । গ্রোইং ডিসরিসপক্ট ফর দ্য রুল অফ ল ! তিনি তো ব্যক্তিগত ইনেসিয়েটিভ নেননি তনু হত্যা মামলার । পরিণতি বিউটি হত্যা আরও কতো কতো লোমহর্ষক নারীর জীবন ঘটনা আমরা দেখছি , সুষ্ঠু বিচার হলে তো এমনটি হতো না । খবরে প্রকাশ পাঁচ বছর বয়সের শিশুর যৌনাঙ্গ কেটে বড় করে র‌্যাপ করেছে চার পাঁচ পাষন্ড । পুলিশ ধরলে জামিনে ছাড়া পেয়ে যায় । এদের তো ধরে দ্রুত ট্রাইবুনালে বিচার করে ফায়ার স্কোয়ারডে দেয়া দরকার যাতে অন্যরা দেখে ভয় পায় নতুবা এ সমস্যার আদৌও সমাধান নেই। আমরা একে অপরকে দোষারোপ করেই ক্ষান্ত দিব এবং অবস্থার আদৌও উন্নতি হবে না।
এখন সব চেয়ে খারাপ সময় পার করছেন ঢাকার ইয়ং মেয়ের মায়েরা । কিভাবে রক্ষা করবে তাদের উঠতি বয়সের মেয়েদের । একদিকে ফেসবুকে ওপেন চ্যাটের সুযাগ , ইন্টারনেট , হোয়াটস আপ , আরও কত কি । অন্যদিকে বাসার ড্রাইভার , চাকর , স্কুলের শিক্ষক , কোচিং টিচার লিস্ট গোওস অন এন্ড অন । এর উপর যদি বাবা ড্রাগস খোর হোন তাহলে মেয়েকে কত জনের কাছ থেকে রক্ষা করবে বেচারী । এরকমই একটা স্টাটাস দেখলাম ফেসবুকে এক মায়ের । অনেক কিছু অবতারণা শেষে তিনি বন্ধুদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রেখেছেন তিনি যদি মনে করেন তার নূতন যৌবনা মেয়ে বাবার কাছ থেকেই নিরাপদ নয় তাহলে ওকে কে রক্ষা করবে ! সমাজের কত অধঃপতন হয়েছে এবং ব্যক্তি চরিত্রের কত অবক্ষয় হয়েছে এই ৭/৮ বছরে ভাবতেও অবাক লাগে । এ অধঃপতনের কারণটা আমার অজানা । মনে হয় রাজনীতিতে অস্থিরতা , সুষ্ঠু গণতন্ত্র চর্চার সুযাগ নেই , অভাব এ হীন অবস্থা সৃষ্টিতে সহায়ক হয়েছে । আরেকটা ব্যাপার না বললেই নয় , লোকের আইনের প্রতি আর আস্থা নেই , তাই ভয় ডর উবে গেছে এবং কালপিঠরা এ সুযোগের পূর্ণ সুযোগ নিচ্ছে কুকীর্তি করার জন্য । অনেকে অবস্থা দৃষ্টে ফেটাব হয়ে পরিবার নিয়ে বিদেশে পাঁড়ি জমাচ্ছে কিন্তু সে সুযাগটা কত জনের ভাগ্যে জুটছে । আমার এক আত্মীয় আমেরিকা আসবেনা আসবে না করতে করতে ইদানিং আসার ব্যাকুল ইচ্ছা পোষণ করছেন । আমি তাকে ব্যক্তিগত ভাবে জানি কি দুঃখে তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আমি তা বুঝতে পেরেছি ! সে দেশ ছাড়বে সিওর কিন্তু কি ব্যথা নিয়ে মনের কষ্টে দেশ ছাড়বেন তা হয়তো আমরা অনেকে জানবো না । অনেকে নিজের কথা অন্যকে বলে বুকের কষ্টটা হাল্কা করে অনেকে বুকের পাষাণের তলে চাপা দিয়ে রাখে । আমার ভাই দ্বিতীয় কিছিমের লোক তাই তার কষ্টের মাত্রাও বেশি!
এ সমস্যা সমাধানের জরুরী পদক্ষেপ নেওয়া বাঞ্ছনীয়। যারা ক্ষমতায় আছেন তাদের ক্যাডার ও নামে বেনামের বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে । অপরাধ করলে পার্টির লোক না ভেবে ও সাহায্য না করে , আইনকে ক্ষমতা বলে প্রভাবান্বিত না করে, স্বাভাবিক গতিতে চলতে দিতে হবে । তাদের মনে এটা পরিষ্কার ধারণা দিতে হবে যে অপরাধী যত বড়ই হোক অপরাধ করলে শাস্তি পেতেই হবে , কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয় , কোন ছাড় দেওয়া হবে না । নারী গঠিত হত্যাকান্ডের আলোচিত ঘটনা জাতীয় কাগজ বা টিভিতে আলোচনার ঝড় উঠলে প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ জরুরী ও মেক সিয়র করতে হবে যাতে ভিক্টিম ন্যায় বিচার পায় । এমনটি হলে চলবে না , তনুর র‌্যাপিষ্ট প্রভাবশালী কর্মকর্তা বিধায় এবং পিতা মাতা গরীব হওয়ায় বিচার পায়নি এবং এর ফলে মানুষের হতাশা যেমন বেড়েছে তেমনি অপরাধকারীদের সাহস বেড়েছে । তাদের মনে ড্যাম কেয়ার একটা ভাব জেগে উঠেছে এবং অপরাধ করছে । মাঝেমাঝে এদিক সেদিক দেখি অনেকে আওয়াজ তুলেন তনু হত্যার বিচার চাই ! ঝোঁপের আড়ালে মেরে ফেলে রাখা এ উদীয়মান শিল্পী কি কখনই বিচার পাবে না তার বিদেহী আত্মার শান্তি আমাদের অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু কেন এখনও পাচ্ছে না প্রশ্ন আমার সবার কাছে । পৃথিবীতে কালজয়ী নেতা তারাই হয়েছেন যারা পার্টী বা পার্টীর অনুগতদের চেয়ে সকল জনগণের কল্যাণ সমুন্নত রেখেছেন । এখন দেশের অনেকে দেশ মাতা , জননেত্রী দাবী করেন ভাল কথা কিন্তু তা পাওয়ার জন্য সমগ্র জনগণের ম্যান্ডেট পাওয়া দরকার । আসুন না পার্টি লাইন ভুলে মানুষকে ভালোবেসে যুগের এ চাহিদা পূরণে অগ্রণী ভূমিকা নিয়ে এবং সমাধানে আমাদের মনে নক্ষত্রের মত চিরকাল জ্বলজ্বলে উজ্জল হয়ে থাকুন ।
নিউইয়র্ক।