একটি স্বাধীন দেশের একজন প্রধানমন্ত্রীর উপর বিদেশিদের চাপ মেনে নেবেন কেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও মেনে নেননি। বাংলাদেশের নির্বাচনের আগে আগে এই চাপ নানা দিক থেকে, নানা দেশ থেকেই আসছে। অতি সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশে^র বিশিষ্ট এবং প্রভাবশালী নেতা নোবেল বিজয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূসের পক্ষে ৪০ জন খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব জোরালো সুপারিশ করেছিলেন যে, ‘ড. ইউনূস সরকারের অন্যায় আচরণের শিকার’।
গত ১৫ মার্চ ঠিকানার প্রথম পৃষ্ঠায় ‘ড. ইউনূসকে নিয়ে ৪০ বিশ্ব নেতার উদ্বেগ/প্রধানমন্ত্রীসহ সরকার সংশ্লিষ্টদের বিরূপ প্রতিক্রিয়া’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। খবরটিতে দেখা যায়- ড. ইউনূসের প্রতি সরকার অন্যায় আচরণ করছে বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে। এবং শেখ হাসিনা বরাবর একটি খোলা চিঠি দেয়া হয়েছে ৪০ জন বিশ্ব নেতার পক্ষে। ৪০জন বিশিষ্ট ব্যক্তির মধ্যে আছেন রাজনীতিক, কূটনীতিক, ব্যবসায়ী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং শিক্ষাক্ষেত্রের মানুষ।
চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন যারা, তাদের মধ্যে আছেন সংগীতজ্ঞ ও অধিকার কর্মী, বোনো, ভার্জিন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা স্যার রিচার্ড ব্রানসন, ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট লর্ড মার্ক ম্যালোচ ব্রাউন, মেক্সিকোর সাবেক প্রেসিডেন্ট ভিসেন্ট ফক্স, গ্লাসগো-ক্যানেডিয়ান ইউনিভার্সিটির সাবেক উপাচার্য ও ইমেরিটাস অধ্যাপক পামেলা গিলিস, রকফেলার ফাউন্ডেশন ও ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড ট্রিবিউনের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পিটার সি গোল্ডমার্ক জুনিয়র, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর-এর মতো ব্যক্তিত্বরা।
পত্রদাতারা বলেছেন, ‘আপনার দেশের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা থেকেই আমরা আপনাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নাগরিকদের একজন, শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মহান অবদানকে সমর্থন ও স্বীকৃতি দিতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানাচ্ছি।’ বিশ্বের প্রভাবশালী পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপনে বলা হয়, ড. ইউনূস সারাবিশ্বে মানবিক উন্নয়নে যে অবদান রেখে চলেছেন, তা তিনি অব্যাহত রাখতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। তারা এও বলেছেন যে, টেকসই অগ্রগতি নিশ্চিতে কীভাবে একটি প্রাণবন্ত নাগরিক সমাজকে লালন করা যেতে পারে, সে বিষয়ে অন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য একটি মডেল হিসেবে বাংলাদেশ তার ভূমিকায় ফিরে আসবে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ঐ ৪০ ব্যক্তি বলেন, এ ক্ষেত্রে প্রথমেই অধ্যাপক ইউনূসের অবদানকে স্বীকৃতি দেয়া দরকার।
ড. ইউনূসকে একজন ব্যতিক্রমী মানুষ বানাতে চায় মার্কিন লবি। এ নিয়ে তারা আগে থেকেই সারাবিশ্বে নানা তৎপরতা শুরু করেছে। তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ড. ইউনূসের কীর্তি প্রচারে তৎপর। তাদের ৬ অক্টোবরের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন ইউনূসের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে।’ ১৩ অক্টোবর ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য ইকোনমিস্ট ইউনূসকে বড় দেখাতে গিয়ে বলেছে, নোবেল জয়ী ইউনূসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ নিপীড়ন বাড়িয়ে দিয়েছে। তাদের এই উদ্বেগ থাকতেই পারে, একেক দেশে তার ভূমিকা যে একই হবে তাও নয়। তবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এন্থার অভিযোগ। অভিযোগকারীদের মধ্যে সাধারণ মানুষ থেকে সরকার সবাই আছে।
এই পরিস্থিতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনে বিন্দুমাত্র উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারেনি। পদ্মা সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে তিনি যে দৃঢ়তা ও মনোবল দেখিয়েছিলেন, ঠিক তেমনি নিরুদ্বিগ্ন কণ্ঠে বলেছেন, ‘বিদেশিদের চাপে কিছু যায় আসে না, এসবে কেয়ার করি না। আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাতের মতো কোন শক্তি এখনো বাংলাদেশে জন্ম হয়নি।’ একই সঙ্গে তিনি কিছু চ্যালেঞ্জ এবং হুঁশিয়ারিও ছুঁড়ে দিয়েছে।
সেরকম পরিস্থিতি থাক না থাক, একটি স্বাধীন দেশের প্রধানমন্ত্রীকে এভাবে হুমকীর সুরে চাপ দেয় কী করে? কোটি টাকা খরচ করে বিজ্ঞাপন দেয়ার পেছনে উদ্দেশ্য কী, সে নিয়েও দেশব্যাপী প্রশ্ন তুলেছে। অনেকেই ভুলে যায়, মুক্তিযুদ্ধ করে জানমালের বিপুল ক্ষতি স্বীকার করে যে দেশ স্বাধীন হয়েছে, তারা ভাঙে, কিন্তু মচকায় না। তবে একটা বিষয় প্রধানমন্ত্রীকে বিশেষভাবে ভেবে দেখতে হবে যে, ৪০ জনের খোলা চিঠিতে আদৌ কোন সত্য আছে কি-না। না হলে, অনেকেই হয়তো আবার উল্টো আশকারা পেয়ে যেতে পারে। সেটাও ঠিক হবে বলে মনে হয় না।