ঠিকানা অনলাইন : আগামী একনেক সভায় উঠছে নির্বাচন কমিশনের (ইসির) ইভিএম প্রকল্প। আগামী ১৭ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) অনুষ্ঠেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকের এজেন্ডায় ইসির ইভিএম কেনার প্রকল্প না থাকলেও বিষয়টি টেবিলে উঠতে পারে। ওই বৈঠকে এই প্রকল্প পাস হলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেড়শ’ আসনে ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ব্যবহার করে ভোটগ্রহণে ইসির সিদ্ধান্তের অনিশ্চয়তা কেটে যাবে।
কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেড়শ’ (সর্বোচ্চ) আসনে ইভিএম ব্যবহার করে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তবে, হাতে থাকা ইভিএম দিয়ে ৬০-৭০টি আসনে ভোট করার সক্ষমতা থাকায় নতুন করে ইভিএম সংগ্রহের উদ্যোগ গ্রহণ করে এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। এর অংশ হিসেবে গত সেপ্টেম্বর মাসে কমিশন সভায় দুই লাখ নতুন ইভিএম কেনাসহ তা রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রশিক্ষণের জন্য ৮ হাজার ৭১১ কোটি ৪৪ লাখ টাকার প্রকল্প গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়।
প্রকল্পে ইভিএমপ্রতি দাম ধরা হয় ৩ লাখ ৫ হাজার টাকা। এছাড়া ৫৩৪টি গাড়ি, ১০টি গুদাম তৈরি ও এক হাজারের মতো লোকবল নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়।
‘নির্বাচনি ব্যবস্থায় ইভিএম ব্যবহার বৃদ্ধি এবং টেকসই ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক প্রকল্প গত ২০ অক্টোবর সরকারের অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। পরে কয়েকটি পর্যবেক্ষণ দিয়ে গত ৮ নভেম্বর সেই প্রস্তাবটি ইসিতে ফেরত পাঠায় পরিকল্পনা কমিশন।
জানা গেছে, পর্যবেক্ষণে কয়েকটি ক্ষেত্রে ব্যয় কমানোসহ ফিজিবিলিটি স্টাডির কথা বলেছে পরিকল্পনা কমিশন। তবে ইসি বলছে, যেহেতু তারা আগে থেকেই ইভিএম ব্যবহার করছে, তাই একই যন্ত্রের ওপর ফিজিবিলিটি স্টাডির প্রয়োজন নেই। এক্ষেত্রে টেকনিক্যাল কমিটির সুপারিশ নিয়েই প্রস্তাবটি ফের পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। পরবর্তীকালে ইসি ও পরিকল্পনা কমিশনের সঙ্গে কয়েক দফা চিঠি চালাচালি শেষে পরিকল্পনা কমিশনের শর্ত পূরণ করে ১১ জানুয়ারি (বুধবার) পুনর্গঠিত প্রকল্প প্রস্তাব আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগে পাঠানো হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন ও পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১৭ জানুয়ারির একনেক সভায় তোলার জন্য অনেকটা তড়িঘড়ি চলছে। বুধবার ইসির প্রস্তাবনা পাওয়ার পর পরবর্তী একনেক সভায় উত্থাপনের জন্য পরিকল্পনা কমিশন অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেছে।
অবশ্য আগামী মঙ্গলবার অনুষ্ঠেয় একনেক সভার নোটিশ ইতোমধ্যে জারি হয়েছে। কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ওই একনেক সভায় আটটি প্রকল্প উপস্থাপন হবে। ওই প্রকল্পগুলোর মধ্যে ‘নির্বাচন ব্যবস্থায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)-এর ব্যবহার বৃদ্ধি এবং টেকসই ব্যবস্থাপনা’ তথা ইসির ইভিএম কেনার প্রকল্পটি নেই।
এদিকে পরিকল্পনা কমিশন সূত্র বলছে, কোনও বিষয় এজেন্ডায় না থাকলেও টেবিলে উত্থাপনের সুযোগ রয়েছে। কমিশন চাইলে যেকোনও প্রকল্প বৈঠকের টেবিলে তুলতে পারে। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এবারের একনেক বৈঠকে সম্পূরক এজেন্ডা হিসেবে টেবিলে ইভিএম প্রকল্প উঠবে, এটা মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এর আগে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছিল—জানুয়ারির ১৫ তারিখের মধ্যে প্রকল্প পাস না হলে তাদের পক্ষে ইভিএম কেনাসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে দেড়শ’ আসনে ইভিএম ব্যবহার অসম্ভব হয়ে পড়বে।
ইসির এই অবস্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এটা ১৫ জানুয়ারিই হতে হবে—এটা কোনও লালরেখা নয়। এটা ১৮ জানুয়ারি হতে পারে, ২০ জানুয়ারি হতে পারে, আবার আগামীকালও হতে পারে। আমরা খোলা মন নিয়ে আইন-কানুনের আওতায় কথা বলছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছি। এখন পরিকল্পনা কমিশন থেকে বোঝা যাবে কী হবে।’ কমিশনের পরবর্তী সভায় এটি উঠবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘তারা (পরিকল্পনা কমিশন) যেভাবে পরামর্শ দিয়েছে, আমরা ১১ জানুয়ারি (বুধবার) সেভাবে পাঠিয়েছি। আমরা বিশ্বাস করি, সিদ্ধান্ত যা-ই হোক না কেন, পরবর্তী বৈঠকে এটা একনেকে উঠবে।’
ঠিকানা/এসআর